ইংলিশ চ্যানেলে ডুবে যাওয়া কুর্দি ইরানি শিশুর মরদেহ নরওয়েতে উদ্ধার

প্রথম আলো ডেস্ক

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ছিল ১৫ মাস বয়সী কুর্দি ইরানি শিশু আর্টিন। এত দিন পর এসে নিজেদের উপকূল থেকে তার মরদেহের খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়েছে নরওয়ের পুলিশ
ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ছিল ১৫ মাস বয়সী কুর্দি ইরানি শিশু আর্টিন। এত দিন পর এসে নিজেদের উপকূল থেকে তার মরদেহের খোঁজ পাওয়ার কথা জানিয়েছে নরওয়ের পুলিশ

পরিবারের সঙ্গে গত বছরের অক্টোবরে ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিল শিশু আর্টিন। ইংলিশ চ্যানেলে ডুবে যায় তাদের নৌকা। এতে ইরানিয়ান কুর্দি পরিবারটির চার সদস্য মারা যান। ওই সময় ১৫ মাসের শিশু আর্টিনের খোঁজ মেলেনি। ওই ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর এসে নরওয়ের পুলিশ জানিয়েছে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশটির উপকূলে আর্টিনের মরদেহ খুঁজে পেয়েছে তারা। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এল।

আজ সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশু আর্টিনের পরিবার থাকত ইরাক সীমান্ত–সংলগ্ন ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে, শারদাস্ত শহরে। গত বছরের আগস্টে পরিবারটি ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ে। প্রথমে তুরস্ক হয়ে পরে তারা ইতালিতে আসে। অক্টোবর নাগাদ পরিবারটি সেখান থেকে ফ্রান্সে প্রবেশ করে। পরের গন্তব্য ছিল যুক্তরাজ্য।

২৭ অক্টোবর ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে যায় তাদের বহনকারী নৌকা। পরিবারের চার সদস্যের মরদেহ মিললেও খোঁজ ছিল না আর্টিনের। আজ সোমবার নরওয়ে পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিন নরওয়ের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় কারময় উপকূলে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে এত দিন তার পরিচয় মিলছিল না। অবশেষে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় নরওয়ে পুলিশের তদন্ত প্রধান ক্যামিলা তেলে ওয়েগে বিবিসিকে বলেন, শিশু নিখোঁজ হওয়ার কোনো ঘটনা নরওয়েতে নথিভুক্ত হয়নি। এমনকি গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশের পর কোনো পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। শিশুটির চেহারাও নরওয়ের মানুষের সঙ্গে মেলে না। এসব বিবেচনায় নিয়ে ধারণা করা হচ্ছিল, শিশুটি নরওয়ের নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অসলো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। স্বজনের ডিএনএ নমুনা পেতে বিলম্ব হওয়ায় মরদেহটি যে আর্টিনের, সেটা জানতে অনেক সময় লেগে যায়। এখন তার মরদেহ ইরানে স্বজনদের কাছে পাঠানো হবে।

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকাডুবির ওই ঘটনায় আর্টিনের পরিবারের চার সদস্য রাসুল ইরান–নেজাদ (৩৫), শিভা মোহাম্মদ পানাহি (৩৫), আনিতা (৯) ও আরমিনের (৬) মৃত্যু হয়েছিল। উদ্ধার করা হয়েছিল আরও ১৫ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে।

ফ্রান্স ছাড়ার আগে পরিবারটি সেখানকার ডানক্রিকে একটি শরণার্থী শিবিরে কয়েক দিন ছিল। ওই সময় তাদের পাশেই একটি তাঁবুতে থাকতেন বিলাল গাফ। তিনি জানান, আর্টিনের পরিবার তিন–চার দিন ওই শিবিরে ছিল। ঘটনার ১০ দিন আগে তোলা একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘শিশুটি বেশ হাসিখুশি ছিল। এ কারণে শিবিরে আলাদা পরিচিতি পেয়েছিল সে। এ ঘটনায় সবাই ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু কান্না ছাড়া আমাদের আর কীই–বা করার আছে।’

বিবিসি বলছে, প্রতিবছর হাজারো ইরানিয়ান কুর্দি পরিবার নিয়ে অবৈধ উপায়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষ রাজনৈতিক পীড়ন ও বৈষম্যের কারণে নিজ ভূমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। শুধু ইরান নয়, ইরাক, তুরস্ক, সিরিয়া, আর্মেনিয়া থেকে অনেক কুর্দিরা ইউরোপে পাড়ি জমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *