৪০ জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে
দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু—দুটিই বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এক সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনা করে এই ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশঙ্কা করছে, স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ না মানলে চলমান করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, তিন দিন ধরে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে চার হাজারের ওপরে। এর মধ্যে গতকাল বুধবার অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৭২৭ জন, যা গত আড়াই মাসের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক শনাক্তের রেকর্ড। দুই মাসের বেশি সময় পর এদিন রোগী শনাক্তের হারও ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গতকাল করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৫ জনের। টানা চার দিন ধরে দৈনিক মৃত্যু ৭৫–এর ওপরে। দেশে করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেশি ছিল ঢাকা, চট্টগ্রামে। এখন সংক্রমণ ও মৃত্যু—দুটিই বেশি ঢাকার বাইরে, উত্তর এবং দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে।
গতকাল নিয়মিত ভার্চ্যুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যতম মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সীমান্তবর্তী এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ না মানলে চলমান করোনা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তিনি সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।
এখন পর্যন্ত রাজধানীতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির খুব বেশি অবনতি হয়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূচকে ঢাকা এখন সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় লকডাউন হবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে রোবেদ আমিন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, আশপাশের মানুষজনকে ঠেকিয়ে রাখতে না পারলে ঢাকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে লকডাউনের প্রয়োজন হতে পারে। লকডাউন সঠিকভাবে পালিত হলে ঢাকামুখী মানুষের যাত্রা কমে যাবে।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এখনো কিছু বিধিনিষেধ জারি আছে। লকডাউনের প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। সপ্তাহখানেক ধরে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে।বিজ্ঞাপন
তিনটি মাত্রায় ঝুঁকি
দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে গত মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৪ থেকে ২০ জুন—এই এক সপ্তাহের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনা করে তিনটি মাত্রার ঝুঁকি (অতি উচ্চ, উচ্চ ও মধ্যম) চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। তাতে বলা হয়েছে, ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর বাইরে আরও ১৫টি জেলা আছেসংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে। সংক্রমণের মধ্যম ঝুঁকিতে আছে ৮টি জেলা। বান্দরবানে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় সেটি বিবেচনায় আনা হয়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের দশটি জেলার সব কটিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মধ্যে ছয়টি অতি উচ্চ ঝুঁকিতে, দুটি আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সাতটি জেলা আছে অতি উচ্চ ঝুঁকিতে। রাজধানীসহ দুটি জেলা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে আর চারটি জেলা আছে মধ্যম ঝুঁকিতে। রংপুর বিভাগের পাঁচটি অতি উচ্চ এবং তিনটি জেলা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামসহ ছয়টি জেলা অতি উচ্চ, তিনটি জেলা উচ্চ এবং একটি জেলা মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ। বরিশাল বিভাগে তিনটি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে এবং মধ্যম ঝুঁকিতে তিনটি জেলা। সংক্রমণ এখনো তুলনামূলক কম সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৭ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫৫৩ জন, আর মারা গেছেন ১৩ হাজার ৭৮৭ জন। মোট শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে সংক্রমণ চলছে।
কিন্তু এখনো রোগী ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, শুধু লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এতে সংক্রমণের গতি ধীর হতে পারে।