আজ তারেক রহমানের জন্মদিন
বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির প্রাণপুরুষ, তৃণমূল রাজনীতির ধারক-বাহক, এই দেশ, মা, মাটি ও মানুষের সন্তান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, নির্যাতিত, নন্দিত জননেতা দেশনায়ক তারেক রহমানের ৫৭তম জন্মদিন আজ।
১৯৬৫ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্র, ইসলামী মূল্যবোধ ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সফল রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ও তিনবারের সফল সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর ৫৭তম জন্মদিন এবার এমন এক সময়ে এলো যখন দেশে গণতন্ত্রের লেবাসে একদলীয় বাকশাল চলছে। গুম, খুন, অপহরণ ও মিথ্যা মামলায় সাজানো রায় দিয়ে বিরোধী দলশূন্য রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যস্ত বাকশালীরা। হাজার হাজার মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের সদস্যদের কারাগারে নিক্ষেপ করে গোটা দেশটাকে জেলখানায় পরিণত করা হয়েছে। বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে অঘোষিত বাকশালী কায়দায়। প্রাথমিকসহ সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে ধ্বংসের মুখে অর্থনীতি। নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে মা-বোনেরা। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে আতংকিত যুব সমাজ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতা দখল করে নেয়। যা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীনে নিতে জোর করে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করানোর ফলে ন্যায় বিচারের পথ প্রায় রুদ্ধ। ঠিক এমনি একটি মুহূর্তে দেশনায়ক তারেক রহমানের জন্মদিন পালন করছে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ড্যাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দিবসটি উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছে দলটি। তার জন্মস্থান বগুড়া বিএনপির উদ্যোগেও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
তারেক রহমান এমনই একজন নেতা যার রয়েছে বহুমুখী প্রতিভা। বিএনপিসহ সাধারণ জনসাধারণের কাছে তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা। জনগণকে আপন করে কাছে টেনে নেয়ার জাদুকরী ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব, সম্মোহন ব্যবহার, মার্জিত আর এসব গুণাবলিই তাকে বিস্ময়কর জনপ্রিয়তার অধিকারী করে তোলে। তারেক রহমান এই দেশ, মা, মাটি ও মানুষের সন্তান। তাই তো মা, মাটি ও মানুষকে কেন্দ্র করেই তারেক রহমান তার সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। পিতার পথ ধরেই শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন হাটে-মাঠে-ঘাটে। তৃণমূল রাজনীতির প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন তারেক রহমান। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের হাতে হাত রেখে, তাদের সুখে-দুঃখে অংশীদার হয়ে ঠাঁই করে নেন তাদের মনের মণিকোঠায়। তারেক রহমানের আতঙ্কে ভুগতে থাকে বিপরীত রাজনৈতিক শিবির। আওয়ামী লীগ ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের আক্রোশের শিকার হয়ে তিনি এখন সুদূর লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন।
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন ও স্বনির্ভরতা অর্জন করতে গিয়ে দেশি-বিদেশি অপশক্তির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণ করায় মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন তারেক রহমান। দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল থেকে তিনি মাধ্যমিক ও ঢাকার বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথমবর্ষে ভর্তি হন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন মেধাবী ছাত্র তারেক রহমান। শিক্ষাজীবন শেষে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। পরে তিনি নৌ- যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করেন। তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বড় মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র কন্যা জায়মা রহমান ।
নন্দিত জননেতা তারেক রহমান কিশোর বয়সে ১৯৮১ সালে পিতাকে হারালেও পড়াশোনার পাশাপাশি স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তাঁর মায়ের সহচর হিসেবে অংশ নেন। পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তারেক রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগেই তারেক রহমান রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। তারই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অনবদ্য পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘদিন দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করলেও অবশেষে ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৬ষ্ঠ কাউন্সিলেও তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে প্রেরণ করলে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিলেও সরকারি নির্দেশে উচ্চ আদালত একটি মামলায় সাজা দিয়েছেন। আরেকটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় তাঁকে অন্তর্ভুক্তি করে সাজা দেয়া হয়েছে।
রাজনীতিতে এসেই তারেক রহমান বুঝতে পারেন দেশের উন্নয়ন চাইলে গ্রামগঞ্জের উন্নয়ন করতে হবে। তাই তিনি পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করে গ্রামগঞ্জের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তিনি গ্রামাঞ্চলের কৃষক-মজুর-খেটে খাওয়া গরিব-দুঃখী মানুষের কাছে গিয়ে তাদের সুখ-দুঃখ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারেক রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে তৃণমূল ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। এসব সম্মেলনে কর্মীরা দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন সম্পর্কে মন খুলে কথা বলেছেন। এ সভাগুলোতে তারেক রহমান মূলত দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে দীর্ঘ মতবিনিময় করেন। বিস্তারিত মতবিনিময়ের বিষয়বস্তুর মাঝে আরও ছিল প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে দলের করণীয় ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতি নিশ্চিতকরণে সরকারি দল হিসেবে বিএনপির করণীয় প্রসঙ্গে আলোচনা। তৃণমূল পর্যায়ের এই সভা ও জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসাধারণভাবে বৃদ্ধি পায়।
তিনি ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে যেভাবে তৃণমূলে দলের শেকড় প্রোথিত করেন তাতে অশুভ রাজনৈতিক শক্তির পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। তারেক রহমান সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পরই তার জনপ্রিয়তায় ও জাতীয়তাবাদী শক্তির জাগরণে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভীত হয়ে চক্রান্ত শুরু করে। বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দলা পাকানো হয় এবং এই চেষ্টা আজও অব্যাহত আছে। যড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অবৈধভাবে সেনা হস্তক্ষেপের পর তারেক রহমানের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গভীর রাতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা কোনো ওয়ারেন্ট, মামলা এমনকি কোনো অভিযোগ ছাড়াই ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাসভবন থেকে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর থেকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে তাঁকে নির্যাতন করে শারীরিকভাবে প্রায় পঙ্গু করে দেয়া হয়। গ্রেফতারের ১৬ ঘন্টা পর গুলশান থানায় এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে জনৈক ব্যবসায়ীকে দিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক প্রথম মামলা করা হয়। ওই ব্যবসায়ী পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয় এবং কিভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে দিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করতে বাধ্য করা হয় তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে।
এভাবে পর্যায়ক্রমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেনা সমর্থিত সরকারের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়ের অব্যাহত থাকে। মানিলন্ডারিং মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ মোট ১৭টি মামলা করা হয় তার বিরুদ্ধে। কিন্তু একটি মামলাও আজ পর্যন্ত প্রমাণ করতে পারেনি। বরং সরকারের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে সাজানো তদন্ত ও সাক্ষী উপস্থাপন করলেও বিশেষ আদালত রায়ে মানিলন্ডারিং মামলা থেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন তারেক রহমানকে। এরপর প্রতিহিংসাবশত তারেক রহমানকে খালাস দেয়া বিচারপতিও সরকারের হুমকিতে পালিয়ে আছেন। সরকারি জোর তৎপরতায় হাইকোর্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই মামলা দ- দেয়। বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ বের করতে পারেনি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আরো শতাধিক মামলা দায়ের করে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে।
তারেক রহমানকে গ্রেফতারের পর তার ওপর যেভাবে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করে দেয়া হয় তা মনে করলে আজো শরীর শিউরে উঠে। আজো তিনি সেই নির্মম নির্যাতনের যাতনা আর ক্ষতচিহ্ন বহন করে চলেছেন। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের তারুণ্যের এই ‘রাজনীতিক আইডল’ বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে রাজনীতির নতুন দিশার বর্ণাঢ্য আলোক রোশনাই ছড়িয়ে সম্মুখে ধাবমান। এক মর্মন্তুদ ক্ষত নিয়ে তিনি প্রবাসে থাকলেও তাঁর মনপ্রাণ পড়ে আছে দেশেই। প্রতিবারের মতো এবারো এই হিরন্ময় তরুণ নেতার জন্মদিনটি এলেও তা সুদূর প্রবাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে পালন করতে হচ্ছে। জন্মদিনে তারেক রহমান দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেছেন।