যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশী রাষ্ট্রগুলোকে বিশ্বাস করাই ছিল ‘একমাত্র ভুল’ : আশরাফ গনি

আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, ১৫ আগস্ট তার প্রাসাদের নিরাপত্তা বাহিনী যখন তাকে জানায় যে তারা প্রেসিডেন্ট বা কাবুলকে আর সুরক্ষা দিতে অপারগ, তার কয়েক মিনিটের মধ্যে আকস্মিকভাবেই তিনি দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।javascript:'<!DOCTYPE html><html><body>

বিবিসির রেডিও ফোর চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আশরাফ গনি বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তালেবানের দ্রুত ক্ষমতা দখলের জন্য কেন আফগান জনগণ তাকে দোষারোপ করেছিল।

কিন্তু তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সহযোগী দেশগুলোকে বিশ্বাস করাই ছিল তার একমাত্র ভুল।

বিবিসির সাময়িক ঘটনাবলীর বেতার অনুষ্ঠান ‘টুডে’র অতিথি সম্পাদক সাবেক ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা স্টাফ প্রধান জেনারেল নিক কার্টারের এক প্রশ্নের উত্তরে আশরাফ গনি বলেন, ১৫ আগস্ট সকালেও তিনি ‘একবারও ভাবেননি’ যে সেদিনই বিকেলে তিনি দেশ ছেড়ে পালাবেন- ভাবেননি সেটাই আফগানিস্তানের মাটিতে তার শেষ দিন।

তাকে নিয়ে বিমান আকাশে ওড়ার পর তিনি অনুধাবন করেন তিনি আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছেন।

তিনি তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে দেশটির বিপদের সময় জনগণকে ফেলে তিনি পালিয়েছেন। তিনি এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছেন।

পালানোটা ছিল আকস্মিক সিদ্ধান্ত
আশরাফ গনি বলেন, ১৫ আগস্ট তার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে জানান, তালেবান কাবুলে না ঢোকার প্রতিশ্রুতি ভঙ করেছে এবং প্রাসাদের নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে

‘আগে আমাদের বলা হয়েছিল, হাক্কানিরা কাবুলে না ঢোকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু দু’ঘণ্টা পর সব বদলে যায়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. মোহিব এবং প্রেসিডেন্টের রক্ষীবাহিনী পিপিএসের প্রধান এসে আমাকে বলেন প্রাসাদের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।’

আশরাফ গনি বলেন, ‘তালেবানের দুটি ভিন্ন শাখা দুটি ভিন্ন দিক থেকে তখন কাবুলে ঢোকার জন্য এগিয়ে আসছে এবং তাদের মধ্যে বিশাল এক লড়াইয়ের সম্ভাবনা তখন চরমে, যে লড়াই ৫০ লাখ মানুষের শহর কাবুলকে ধ্বংস করে দেবে, মানুষের জীবন চরম বিপদে পড়বে।’

‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি দেশ থেকে কোনো অর্থ সরাইনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি কীভাবে জীবনযাপন করি, তা সবাই জানে। আমি অর্থ দিয়ে কী করব?’

বলির পাঁঠা
আশরাফ গনি স্বীকার করেন যে তিনি ভুল করেছিলেন। তিনি বলেন, তার ভুলের মধ্যে ছিল এটা ‘ধরে নেয়া যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করবে।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতাকালে আমেরিকার সাথে তালেবানের চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ওই চুক্তির অধীনে যা ঘটেছে তারই ফলশ্রুতি ছিল ১৫ আগস্টের ঘটনা।

‘একটা শান্তি চুক্তির বদলে আমরা পেয়েছিলাম প্রত্যাহার প্রক্রিয়া নিয়ে চুক্তি,’ বলেছেন আশরাফ গনি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যেভাবে ওই চুক্তি করা হয় তাতে ‘আমাদের মুছে দেয়া হয়েছিল’।

ওই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র রাজি হয় যে আমেরিকা ও তার মিত্র বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সৈন্য কমাবে এবং বন্দী বিনিময় করবে। সেই শর্তে তালেবান আফগান সরকারের সাথে আলেচনায় বসতে সম্মত হয়।

সে আলোচনা কার্যকর হয়নি।

আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১এর গ্রীষ্মকালে প্রতিশ্রুতি দেন যে আমেরিকান সৈন্যদের শেষ দল আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এর সাথে সাথেই তালেবান একের পর এক শহর দখলের অভিযান শুরু করে দেয়।

আশরাফ গনি বলেন, শেষ পর্যন্ত যেটা হয় ‘সেটা একটা সহিংস অভ্যুত্থান, কোনো রাজনৈতিক চুক্তি সেটা ছিল না, সেটা জনগণকে সাথে নিয়ে কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও ছিল না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *