আওয়ামীলীগের হেফাজত রাজনীতি
এম ডি মহিউদ্দিন মাসুদ, যুক্তরাজ্য থেকে
৫ মে ২০১৩ সালে হেফাজত ঢাকা শহরে হেফাজতের তান্ডব ঘটিয়েছিল, তা সবার জানা। এখন তারা আন্দোলনে নেই। আন্দোলন ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অধিকাংশ দাবিদাওয়া মেনে নিয়েছে। হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শোকরিয়া জানিয়েছেন। তার আগে লেখক–বুদ্ধিজীবীদের আপত্তি উপেক্ষা করে হেফাজতের দাবি মেনে সরকার পাঠ্যপুস্তক থেকেও কথিত ‘অনৈসলামিক’ রচনাগুলো বাতিল করে দেয়।আওয়ামীলীগের এমন আচরন আবার মুখে মুখে জামাত নিষিদ্ধ করার কথার সাথে তাদের কোন মিল কি আছে? আপনারা দেখবেন বিএনপি জামাতে আছে এই বলে মানুষের সিমপ্যাথি নিয়ে নিজেরাই গোপনে গোপনে জামাতের সাথে আঁতাত করেন। একই সাথে নাম পরিবর্তন করেন জামাতের বিভিন্ন দলকে নিজেদের দলে ভেড়াচ্ছেন।
২০১৩ সালে সারাদেশ থেকে মাদ্রাসা ছাত্র আর অনুসারীদের জড়ো করে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা দখলে নেয় হেফাজতে ইসলাম। সময় যতো গড়িয়েছে তাদের দখল করা এলাকার সীমানা আরো বিস্তৃত হয়েছে। মতিঝিল থেকে পুরানা পল্টন, দিনভর তান্ডবলীলা চালিয়েছে হেফাজতের লোকজন। রাস্তার গাছ কেটেছে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের মার্কেটে লুট করেছে, হকারদের বই পুড়িয়েছে, কোরআন পুড়িয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে আগুন দিয়েছে, রাস্তায় বের হওয়া নারীদের লাঞ্চিত করেছে। এক কথায় যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে রাজপথে ছিলো হেফাজতীরা।
৫ মে দিবাগত রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর এলাকার দখলে থাকা হেফাজত কর্মীদের উপর পুলিশ অভিযান চালায়। হেফাজতীরা ঢাকা ত্যাগ করে। হেফাজতীরা ৫ মে ২০১৩ সালে কান ধরে শাপলা চত্ত্বর ত্যাগ করেছে সত্য, কিন্তু তাদের লক্ষ্য তো পূরণ হয়েছে! তাঁরা ক্ষমতায় যেতে পারেনি সত্য, কিন্তু তাঁরা তো ক্ষমতাসীনদের উপর অনেকটা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। হেফাজতীরা যেন মুকুটহীন সম্রাট। ২০১৩ এর ৫ মে যারা হেফাজতের কর্মীদের কানে ধরিয়েছিলো, আজ তারাই তো রূপকভাবে ক্ষমতাসীনদের তাদের কব্জায় নিয়ে নিজেদের দাবী পূরণ করে নিচ্ছে। হেফাজতের বিজয় এখানেই শেষ নয়। তাদের রেলওয়ের জমি দেয়া হয়, কওমী শিক্ষার্থীদের ডিগ্রিকে স্নাতক সনদের সমমর্যাদা দেয়া হয়, সরকারী চাকরীতে অগ্রাধিকার দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীনদলের নেতারা হেফাজতের আমিরের পদধুলি নিতে ব্যস্ত। সরকার প্রধান গণভবনে হেফাজতের নেতাদের দাওয়াত দিয়ে আপ্যায়ন করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী আহমদ শফী ও অন্য শরীকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমরা শেষ দুইটি নির্বাচনে দেখেছি , সরকার হেফাজতকে হাতে রেখে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আমরা যদি বলি হেফাজতকে পাশে নিয়ে আওয়ামীলীগ কি করছে। তাহলে আমরা নিজ, চোখেই দেখতে পারবো। যে বিএনপি তার আমলে দেশের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়ার কাজ করেছে। সেখানে আওয়ামীলীগ হেফাজতকে সাথে নিয়ে দেশের সংস্কৃতির কার্যকলাপ বন্ধ করেছে। ২০১১ সালে আওয়ামীলীগ সরকার নারী নীতি গ্রহন করেন। কিন্তু হেফাজত কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী বলে সেই নীতি বাতিল করেন। কিন্তু এমন উদ্যোগে সুশীল সমাজ টকশোতে অনেক বক্তব্য রাখলেও সরকার হেফাজতের পাশেই রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি বিএনপির আমলে দেখি তখন দেখবেন, বিএনপি সব সময় নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির কথা বলেছেন। কাজ করেছেন। সেখানে এই আওয়ামীলীগ নারীদের মুক্তি না দিয়ে বরং ঘরের মধ্যে বন্ধী করেছে।
শুধু মাত্র ভোটের কারনে এমন করছে এই সরকার। নিজেকে শক্তিশালী করতে ও ক্ষমতায় টিকে থাকতে হেফাজতকে রাখছেন এই সরকার। বিএনপি কোনঠাসা করতে যে দেশকে অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছেন সরকার, তা আমাদের দেশ দেখছে। সরকার এমন যদি হেফাজতকে সাথে নিয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিহাস তুলে ফেলেন, সংস্কৃতি সড়িয়ে ফেলে কিংবা নারীকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে তবে দেশ হাজার হাজার অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। তাই এখনই সময় আওয়ামীলীগ ও হেফাজতের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা।