কারাবন্দীর নারীসঙ্গ: জেল সুপারসহ ১১ জন বরখাস্ত

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১–এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলারসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও সাতজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হল-মার্কের কারাবন্দী মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমদ বিধি লঙ্ঘন করে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটানোর ঘটনায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই সময় কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা।

আজ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত চিঠি কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্ত করা হয়েছে তখনকার জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা এবং ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েনকে। বরখাস্ত অন্যদের মধ্যে ছয়জন কারারক্ষী, একজন সহকারী প্রধান কারারক্ষী ও সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টর রয়েছেন।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আজ রাতে প্রথম আলোকে জানান, এ ঘটনায় গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাঁরা প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন।

গতকাল বুধবার তদন্ত কমিটি তদন্ত কমিটি সুরক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আবরার হোসেন আজ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তারা এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ–সংক্রান্ত চিঠি পাননি। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর পাঠিয়েছেন বলেই হয়তো আমি দেখিনি। তবে আমরা ৪৯ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। যেখানে ১৮ কর্মকর্তা ও কারারক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’

এর আগে গত ২১ জানুয়ারি তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করে কারা কর্তৃপক্ষ। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদনে ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা, চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া, কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে জেলা কারাগারে পদায়ন করা, কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করাসহ ২৫টি সুপারিশ করেছে।

বর্তমানে কাশিমপুর-১ কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায়, জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা, ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েন কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত আছেন। তদন্ত শুরুর পর তাঁদের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রত্যাহার করে কারা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী হল-মার্কের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমদ বিধি লঙ্ঘন করে এক নারীর সঙ্গে সময় কাটান। এতে কারাগারের দুই কর্মকর্তা সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। গত ৬ জানুয়ারি কারাগারের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের (সিসিটিভি) ক্যামেরায় এ চিত্র ধরা পড়ে। ঘটনার তদন্তে জেলা প্রশাসন গত ১২ জানুয়ারি তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটি।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনা ছাড়া আরও অনেক অনিয়ম পেয়েছে কমিটি। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কারাগারে স্বজন বা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ করা যায় কি না, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের কারাগারগুলোয় সিসি ক্যামেরা বসানো এবং সেই সিসি ক্যামেরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদারক করার সুপারিশ করা হয়েছে।

৬ জানুয়ারির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কারাগারের ভেতরে কর্মকর্তাদের অফিস এলাকায় কালো রঙের জামা পরে ঘোরাফেরা করছেন তুষার আহমদ। কিছু সময় পর বাইরে থেকে বেগুনি রঙের জামা পরা এক নারী সেখানে আসেন। এ সময় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রত্না রায় ও ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েন সেখানে ছিলেন।

দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে দুই যুবকের সঙ্গে ওই নারী কারাগারের কর্মকর্তাদের কক্ষের দিকে যান। সেখানে ওই নারীকে ডেপুটি জেলার সাকলায়েন স্বাগত জানান। ওই নারী কক্ষে ঢোকার পর সাকলায়েন বেরিয়ে যান। আনুমানিক ১০ মিনিট পর তুষারকে সেখানে নিয়ে যান সাকলায়েন। এর প্রায় ১০ মিনিট পর রত্না তাঁর কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। দুই মিনিট পর রত্নার কক্ষের দিকে যান তুষার। আরও দুই মিনিট পর সেখান থেকে বেরিয়ে ওই নারীকে নিয়ে আবার রত্নার কক্ষে যান তুষার। যাওয়ার সময় তাঁদের হাসি-তামাশা করতে দেখা যায়। এর দুই মিনিট পর তুষার ও ওই নারী সাকলায়েনের কক্ষে ফেরেন। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর তাঁরা বের হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *