মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকাভুক্তির সুযোগ নেই, টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র

এখনও সহস্রাধিক মানুষ নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য বিভিন্ন কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন। তালিকায় নাম ওঠানোর নামে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। চক্রটি গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ নতুন করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির কোনও সিদ্ধান্তই নেয়নি সরকার।

যারা তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) লিখিত ও অনলাইনে আবেদন করেছেন তাদের আবেদনপত্রগুলোর ওপর শুনানি চলমান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুল হক (ছদ্মনাম) জানিয়েছেন, ‘১৫ বছর আগে একবার স্বেচ্ছায় তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনপত্র কোথায় কী অবস্থায় আছে জানি না। পরে জামুকার সিদ্ধান্ত মতে ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করি। এখনও শুনানির জন্য আমাকে ডাকেনি। মন্ত্রণালয় ও জামুকায় দিনের পর দিন ঘুরেও আবেদনের হদিস পাইনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) পরিচালক (যুগ্মসসচিব) সেলিম ফকির জানিয়েছেন, ‘আপাতত নতুন করে কোনও বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটভুক্ত করার সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে করা আবেদনপত্রগুলোর ওপর শুনানি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ‘গেজেটে প্রকাশিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকার বিষয়ে অভিযোগ যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এটি নিষ্পত্তির পর ১৫ ফেব্রুয়ারি খসড়া ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের কাজই মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া ২০১৪ সালে অনলাইনে করা আবেদনগুলোর ওপর শুনানি তো চলছে।’  

এদিকে জামুকা’র অনুমোদন ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশিত বেসামরিক গেজেট যাচাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে। কয়েকদফা তারিখ পরিবর্তনের পর ৩০ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় চলছে। তবে যে সব উপজেলায় ৩০ জানুয়ারি পৌরসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে সেসব উপজেলায় সুবিধাজনক দিনে যাচাইবাছাই অনুষ্ঠিত হবে। এ কাজ শেষ করতে হবে ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা জানিয়েছেন, ‘গতবছরের ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭১তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের অংশ হিসেবে যাচাইয়ের কাজ চলছে।’

পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারেফ হোসেন জানিয়েছেন, ‘৩০ জানুয়ারি স্থানীয় পৌরসভার নির্বাচন হয়েছে। তাই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করা যায়নি। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবো। শেষ করতে যতদিন লাগে ততদিন চলবে এ কার্যক্রম।’

তিনি জানান, ‘৬ ফেব্রুয়ারি আমরা কাগজপত্র গ্রহণ করবো। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। একদিনে শেষ করতে না পারলে বাকি কাজ ৯ ফেব্রুয়ারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

উল্লেখ্য, এর আগে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের অংশ হিসেবে যাচাই-বাছাই বাছাইয়ের কাজ ১৯ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও সেই তারিখ বদলে ৯ জানুয়ারি করা হয়। পরে তা বাড়িয়ে ৩০ জানুয়ারি করা হয়।

‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২’-এর ধারা ৭ (ঝ)-এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্য থেকে ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছে।

সূত্র জানায়, জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাদের নাম বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের নাম সংশোধন করে নতুন করে ৩৮ হাজার ৩৮৬ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেই গেজেটগুলো জামুকার সুপারিশ ছাড়া প্রকাশ হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় স্বীকৃত ৩৩ ধরনের প্রমাণ, যেমন- ভারতের তৈরি তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, বিসিএস গেজেট কিংবা বিভিন্ন বাহিনী বা অন্যান্য গেজেটে নাম থাকার পরও অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম ৮ ডিসেম্বরের তালিকাতেও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *