মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তারেক রহমান এর বাণী

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান নিম্নোক্ত বাণী দিয়েছেনঃ

“মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি বায়ান্ন’র ২১ ফেব্রুয়ারীর সকল শহীদদের। রক্তরাঙ্গা ২১ শে ফেব্রুয়ারী আমাদের জাতীয় জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। এটি ছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলার একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমে এসে পুলিশের গুলিকে পরোয়া না করে নিজের দাবিতে সোচ্চার থাকে। সেদিন ছাত্ররা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে মাতৃভাষার মহিমা প্রতিষ্ঠায় যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ^ ইতিহাসে বিরল। তাদের এই মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান। বায়ান্ন সালের ২১’শের পথ ধরেই এদেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীকারের সংগ্রাম সম্প্রসারিত হয়ে অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, আমরা পাই স্বাধীনতার স্বাদ। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সরকারী স্বীকৃতি না দিয়ে তৎকালীন পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এদেশের উপর নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল-এদেশকে স্থায়ীভাবে পরাধীন রাখার জন্য। কিন্তু ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তা প্রতিরোধ করে।

দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্ন মাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের উপর সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে জাতি হিসেবে আমাদেরকে নতজানু করে রাখতে নানা কারসাজী চালিয়ে যাচ্ছে। ভিন্ন কায়দায় আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে মহল বিশেষের তাবেদারির জন্য। যাতে আমরা মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে না পারি। আর এইজন্যই এখন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একদলীয় দু:শাসনের শৃঙ্খলে দেশের মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রকে আরও কঠিনভাবে লৌহ শৃঙ্খলে বন্ধ করে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে এদেশের বারবার বহুদলীয় গণতন্ত্রের মুক্তির দিশারী বেগম খালেদা জিয়াকে। একদলীয় নির্দয় অপশাসনে উৎপীড়িত জনগণকে অন্ধকার খাঁচায় চিরদিনের জন্য আটকে রাখতে বাক, ব্যক্তি, মূদ্রণ, চিন্তার স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছে। এই অপহরণকারিদের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামে দল, মত নির্বিশেষে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাই এ মূহুর্তে আমাদের প্রধান কর্তব্য দেশনেত্রীর পূর্ণাঙ্গ মুক্তির জন্য সর্বব্যাপী সংগ্রাম গড়ে তোলা।

বর্তমানে দেশের মানুষকে নানাভাবে অধিকারহীন করে একুশের স্বপ্নকে তমসাচ্ছন্ন করা হয়েছে। কিন্তু একুশের অম্লান চেতনা ষড়যন্ত্রকারি ও জনগণের মৌলিক অধিকার হরণকারী নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শক্তিকে রুখতে আমাদের উদ্ভুদ্ধ করবে। বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন ছিল এদেশের জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সুতরাং এই দু:সময়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রেরণা যোগাবে ৫২’র মহান একুশে’র শহীদদের আত্মদান। আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় এই দিবসটিতে বিশ্বের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশ ঘটাতে অদম্য প্রেরণা লাভ করবে। মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে আমি বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের আয়োজিত নানাবিধ কর্মসূচির সাফল্য কামনা করছি।পরিশেষে আমি ৫২’র ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিতার কামনা করছি এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের জানাচ্ছি সমবেদনা। পাশাপাশি ভাষা সৈনিকদের জানাই শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। তাঁদের পরিবারের সুখ, শান্তি ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *