দেশে আপাতত টিকার ট্রায়াল হচ্ছে না

দেশে বা বিদেশে উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের কোনো টিকার ট্রায়াল আপাতত হচ্ছে না। এমনকি কাছাকাছি সময়ে হওয়ার সম্ভাবনাও কম। তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠিত কোনো ওষুধ কোম্পানি যদি তাদের টিকা বাংলাদেশের কোনো কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদন করতে চায়, সে ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়া হবে। রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, দেশীয় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে বিএমআরসিতে দেশে টিকার হিউম্যান ট্রায়াল পরিচালনার অনুমোদন চেয়েছে।

তবে ইথিক্যাল কমিটি তাদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে প্রায় শতাধিক বিষয়ে পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া বিদেশি কোম্পানি ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স (আইএমবিসিএএমএস), ভারত বায়োটেক এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ট্রায়াল পরিচালনার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে সভায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা দেশে ট্রায়াল পরিচালনার পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেননি।

এসব বিষয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ট্রায়াল পরিচালনার চেয়ে অন্য দেশে উদ্ভাবিত টিকা দেশে উৎপাদনের পক্ষে মত দেন। এক্ষেত্রে দেশে টিকা উৎপাদনের সক্ষম ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড এবং পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের নামে আসে। এ সময় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব টিকা উৎপাদনে তাদের সহযোগিতা করতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, এরআগে বাংলাদেশে করোনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করতে চারটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্যে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান, অন্য তিনটি বিদেশি। একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম ফেজ থেকে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরুর জন্য আবেদন করেছে ।

অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান দেশে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করবে। এরমধ্যে দুটি বিদেশি কোম্পানির আবেদনগুলো বিএমআরসি (বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল) গ্রহণ করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনা করতে চায় ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স (আইএমবিসিএএমএস)। চায়নার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠান ১৯৫৮ সালে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মনোনীত একটি বৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে এরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে একটি ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন’ উদ্ভাবনে কাজ শুরু করে।

ইতোমধ্যে সার্সকোভ-২ নামের একটি টিকা উদ্ভাবন করে। যা আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসারে প্রাণীদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এবং মানবদেহে পরীক্ষামূলক ফেজ-১ ও ফেজ-২ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

এ প্রতিষ্ঠানের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনায় দেশের একটি ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে ২৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করে। যেটি পরিচালনায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি.র) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ টিকার ট্রায়াল পরিচালিত হচ্ছে এবং এর কোনো তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এদিকে, ভারত বায়োটেক নামে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান একটি করোনা টিকা উদ্ভাবন করেছে। এটিও একটি ‘ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিন’। ইতোমধ্যে এ ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল পরিচালনার জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করেছে। এ প্রতিষ্ঠানের ক্লিনিক্যাল রিসার্চ করার জন্য আইসিডিডিআর.বির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

এছাড়া ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক তাদের উৎপাদিত করোনাভাইরাস টিকা মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অনুমতির জন্য বিএমআরসিতে আবেদন করে।

এ বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তো জটিল নয়। টিকার মতো জীবনরক্ষাকারী ওষুধের ক্ষেত্রে যত বেশি ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে ততই ভালো। ট্রায়ালে যদি অবস্থা ভালো হয়, তাহলে আমরা ওই টিকা নেব। ভালো না হলে নেব না। তবে সরকার কেন ট্রায়ালের অনুমোদন দিচ্ছে না, সেটি বোধগাম্য নয়।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে এ সভা হয়। এতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ গবেষকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *