আবারো ৭১’ এর মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে-তারেক রহমান
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোচনায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির প্রতি ঐক্যবদ্ধ প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৭১’এ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল স্বাধীনতার জন্য এবারে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। ‘দেশে সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, ফেলানী হত্যাকারীদের কবল থেকে দেশ বাঁচাতে চাইলে, নাগরিকদের বাঁচাতে চাইলে আবারো ৭১’ এর মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’ ।
শুক্রবার (২৬ মার্চ ২০২১) স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপত্বিত করেন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি’র সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং ইকবাল মাহমুদ টুকুসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
বক্তব্যের সময় তারেক রহমান শুক্রবার ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জনগণের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এবং সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলায় হতাহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, প্রতিবাদ বিক্ষোভ নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনেও মাফিয়া সরকারের নৃশংসতা থেকে গণতন্ত্রকামী মানুষ রেহাই পায়নি।
তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে তারেক রহমান আরো বলেন, ৭১ সালে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেভাবে পাক হানাদারদের পরাজিত করা হয়েছিল এবার একইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামী হানাদার এবং তাদের দোসরদের পরাজিত করতে হবে। মুক্ত করতে হবে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, অবরুদ্ধ দেশ। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।
এ লক্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দিন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ায় আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আজ থেকেই আরেকটি যুদ্ধের শপথ নিতে হবে। ‘এবারের যুদ্ধ, স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ, মাফিয়া-মুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, মাফিয়াদের কবলে থাকা বাংলাদশে এখন ভুলুন্ঠিত গণতন্ত্র -ভোটাধিকার- মানবাধিকার, নির্বাসিত বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা। মাফিয়া সরকার দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে।
সভায় তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, দেশে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। অথচ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার জন্য রাষ্ট্র যাদেরকে বীরোত্তম, বীর বিক্রম, বীর প্রতীক খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেছিল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে তারা কেন উপেক্ষিত ?
‘জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার অন্যতম প্রত্যক্ষ সাক্ষী কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম। রেসকোর্স ময়দানে পাক হানাদারদের আত্মসমপর্ণ অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। ১৯৭১ সালের ২ রা মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আ স ম আব্দুর রব। কিন্তু সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের এইসব বীরদের সরব উপস্থিতি কেনই নেই’ প্রশ্ন করেন তারেক রহমান।
তিনি বলেন , মুক্তিযুদ্ধের এইসব বীরদের সগৌরব উপস্থিতি ছাড়া রাষ্ট্রীয় আয়োজনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর কথিত উৎসব
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননার শামিল।
তারেক রহমান বলেন, জনগণ জানতে চায়, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার গৌরবজনক ভূমিকার কথা, মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের বিচক্ষণ নেতৃত্বের কথা, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর এম এ জি ওসমানী’র কথা সর্বোপরি ৫৭ সালেই যিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর কথা কেন আলোচনায় নেই ? বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আলোচনায় কেন নেই?বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া বীরদের সঙ্গে মতের অমিল কিংবা আদর্শিক বিরোধ থাকতে পারে তাই বলে, রাষ্ট্রীয় আয়োজনে উদযাপিত সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরগন অবহেলিত থাকবেন এটি মেনে নেয়া যায়না। কারণ, দল-মত যার যার, রাষ্ট্র সবার।
তারেক রহমান রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় আয়োজনে উদযাপিত সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বীর নেতৃত্ব যদি সসম্মানে আমন্ত্রিত না হন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সাহসী নেতাদের ভূমিকা যদি আলোচিত না হয়, নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি, গৌরবগাঁথা, যদি আলোচিত না হয়, তাহলে প্রশ্ন জাগে মুক্তিযুদ্ধ করলো কারা ? তাহলে কিসের সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব ?কাদের উৎসব? কাদের জন্য উৎসব?
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে বাংলাদেশের জনগণকে দূরে রেখে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী চক্রটি কি প্রমান করতে চাইছে? মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মানুষ করেনি ? মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নেতৃত্ব ছিলোনা? স্বাধীন বাংলাদেশ কি কারো দয়ার দান ?
তারেক রহমান বলেন, যার সগৌরব উপস্থিতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ করতে পারতো তিনি মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু খালেদা জিয়া মাফিয়া চক্রের প্রতিহিংসার শিকার। বিচারের নামে অবিচার চালিয়ে খালেদা জিয়া’র স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে বাস্তবিক অর্থে দেশের স্বাধীনতাকেই হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকরা এখন নিজ দেশেই পরাধীন । প্রতিদিন সীমান্তে মানুষ মরছে, কোনো প্রতিবাদ নেই উল্টো খুনিদের পক্ষে সাফাই গাইছে মাফিয়া সরকার।
তারেক রহমান বলেন, রাজনৈতিক হীনমন্যতা পরিহার এবং দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব এবং
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা তুলে ধরা পাশাপাশি, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাফল্য -প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সামনে
তুলে ধরার লক্ষ্যে দলীয়ভাবে বিএনপির উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি। কিন্তু, বিএনপি’র উদ্যোগে গঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটিযাতে নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বীরদের বীরত্বগাথা প্রকাশ করতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে না পারে এ জন্য নিশিরাতের সরকার নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে ।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশ এখন মাফিয়ার কবলে। দেশে বিদেশে বাংলাদেশের সরকারটির এখন পরিচিতি, ‘গভর্নমেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া, বাই দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া’ । এই মাফিয়ারা মনে করে স্বাধীনতা মানে অবাধ লুটপাট, ব্যাংক ডাকাতি আর লক্ষ কোটি টাকা
বিদেশে পাচার করার অবারিত সুযোগ। এই মাফিয়া সরকার মনে করে মুক্তিযুদ্ধ মানে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু টাকা ভাতা দেয়া । কিন্তু কিছু টাকা ভাতা পাওয়ার আশায় মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। বীর মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলেন একটি স্বাধীন -সার্বভৌম রাষ্ট্র । তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল, সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, চট্টগ্রামে তাঁর নেতৃত্বাধীন
ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার, সিপাহী এবং স্বাধীনতাকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার সেই স্মরণীয় মুহূর্তটির কথা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিজের লেখা একটি নিবন্ধেও উল্লেখ রয়েছে। ‘একটি জাতির জন্ম’ শিরোনামে স্বাধীনতার ঘোষকের লেখা নিবন্ধটি ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ ‘দৈনিক বাংলা’ এবং
১৯৭৪ সালে ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রায়’ প্রকাশিত হয়।
নিবন্ধটির শেষ কয়েকটি লাইনে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া লিখেন, ‘সময় ছিল অতি মূল্যবান। আমি ব্যাটালিয়নের অফিসার, জেসিও আর জওয়ানদের ডাকলাম। তাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলাম’ । তাদের নির্দেশ দিলাম সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে । জিয়াউর রহমান আরো লিখেন, ” তখন রাত ২টা বেজে ১৫ মিনিট। ২৬ মার্চ। ১৯৭১ সাল। রক্তের আঁখরে বাঙালির হৃদয়ে লেখা একটি দিন। বাংলাদেশের জনগণ চিরদিন স্মরণ রাখবে এই দিনটিকে। স্মরণ রাখবে, ভালোবাসায়। এই দিনটিকে তারা কোনো দিন ভুলবে না। কোনো-দি-ন-না “।
তারেক রহমান বলে, জিয়াউর রহমানের লেখা নিবন্ধ ‘একটি জাতির জন্ম’ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি অনন্য দলিল।