অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষের টিকা দরকার

করোনাভাইরাস
করোনাভাইরাস

টিকার বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলছেন, ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবসের আগেই প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশকে অন্তত ১ ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন করা হবে যেন সবাই স্বাভাবিক খোলামেলা পরিবেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে পারেন। এটা পরিষ্কার, টিকা দেওয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে যে পরিস্থিত স্বাভাবিক করা যাবে, এ চিন্তার নিশ্চয়ই একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। না হলে যুক্তরাষ্ট্র এ রকম উদ্যোগের ওপর এত ভরসা রাখতে পারত না।বিজ্ঞাপন

আমাদের দেশে শুধু নয়, অন্যান্য দেশেও প্রথমে অনেকেই টিকা নিতে চাইতেন না। বলতেন, টিকা নিলে নাকি আরও বেশি করোনার ভয়। একেবারে ভুল কথা। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলেছে। মানুষ এখন টিকার জন্য পাগল! সম্প্রতি স্মিথসোনিয়ান ডটকম ম্যাগাজিনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। ব্রাজিলের একটি ছোট্ট শহর সেরানা তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি নেয়।

ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশের টিকা নেওয়া হয়ে গেছে। এখন সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ একেবারে কমে গেছে এবং শহরের মানুষ স্বাভাবিক পরিবেশে জীবনচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে।

এসব উদাহরণ এখন অনেক দেশই সৃষ্টি করছে। আমাদের সে পথেই যেতে হবে। টিকা, টিকা আর টিকা। আর সেই সঙ্গে মাস্ক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তাহলেই আমরা আবার সুস্থ–স্বাভাবিক জীবন ও জীবিকা ফিরে পাব। আর দেশ পাবে শক্তিশালী অর্থনীতি।

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আবার বাড়ছে। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলায় করোনার প্রকোপ বেশি। ধারণা করা হয়, দেশ থেকে যাঁরা প্রতিনিয়ত পার্শ্ববর্তী দেশে যাওয়া–আসা করছেন, তাঁদের অনেকেই করোনা সংক্রমিত হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের আলাদা করে কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। অনেকে ফাঁকি দিয়ে কোয়ারেন্টিন এড়িয়ে করোনা ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখন অবশ্য সবাই সতর্ক। কারণ, সীমান্তবর্তী জেলায় বসবাসকারীদের ব্যাপকসংখ্যক মানুষ ঝুঁকিতে পড়ছেন। সেখান থেকে দেশের অন্যান্য এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার বাস্তব আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা কর্তৃপক্ষ অবস্থা বুঝে লকডাউন বা অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আশা করা যায়, এর ফলে সংক্রমণ সীমিত করা যাবে।

কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা না করলে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন। ইতিমধ্যে কিছু মানুষকে দুই ডোজ করে টিকা দেওয়া হয়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে আরও টিকা আনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা নেওয়া দরকার। দেশে টিকা তৈরির উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর করার ব্যবস্থাও জরুরি।

অবশ্য যাঁরা একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন সুস্থ, তাঁদের কারও কারও হয়তো দ্বিতীয়বারও করোনা হয়, কিন্তু তাঁদের শরীরে মোটামুটি ভালো মাত্রায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধব্যবস্থা যে হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। তাঁদের সংখ্যা কত, তা জানা কঠিন হলেও মোটামুটি জরিপ করে বের করা সম্ভব। সব মিলিয়ে দেশের মানুষের ব্যাপক অংশকে টিকা দেওয়া হলে করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
মানুষের সচেতনতা দরকার

তবে মানুষকে সচেতন হতে হবে। মাস্কের প্রতি উদাসীনতা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। বাইরে চলাফেরায় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। এখন আইনের কড়াকড়ির জন্য অনেকেই মুখে একটি মাস্ক ঝুলিয়ে রাখেন। কিন্তু এতে কোনো লাভ নেই। মুখ ও নাক ঢেকে রাখাই হলো আসল বিষয়। কষ্ট হয়, হবে। কিন্তু জীবনের চেয়ে বড় কিছু তো নেই।

আমি মাস্ক পরলে আমি তো সুরক্ষা পাবই, আশপাশের অন্যরাও পাবেন। কিন্তু আমি মাস্ক পরলাম আর আমার পাশের ব্যক্তি পরলেন না, তাহলে আমরা দুজনেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ব। এই দিকটা মনে রেখে, সবাইকে স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে।
নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক টিকা

দেশের সবখানে করোনার ঝুঁকি সমান নয়। যেমন সেন্ট মার্টিনে এখনো কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি, এটা খুব বড় আশার কথা। তার মানে, সেখানে সবাই যেভাবে স্বাস্থ্যসচেতন থাকেন, সেটা যদি দেশের সব অঞ্চলে অনুসরণ করা হয়, তাহলে বড় সাফল্য আমরা অর্জন করতে পারব। অন্যদিকে দেশের যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। সারা দেশে একসঙ্গে টিকার আয়োজন করে যদি আমরা সেই ধরনের কর্মসূচি কার্যকর করতে পারি, তাহলে তো ভালো। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? আর তা ছাড়া একসঙ্গে এত টিকাও তো আমরা পাচ্ছি না। তাই ঝুঁকি বিবেচনায় নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক টিকার ব্যবস্থা করলে সহজে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আগেও অবশ্য এই নীতির ভিত্তিতেই টিকার বিন্যাস করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তা রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *