সংসদে জি এম কাদের

পুকুরচুরি করে বেরিয়ে যায়, আর প্রকাশ করলে সমস্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জি এম কাদের
জি এম কাদের

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, যাঁরা পুকুরচুরি করছেন, তাঁরা বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর যাঁরা এসব প্রকাশ করছেন, তাঁরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করে। সাংবাদিকদের এইটুকু সুযোগ দেওয়া সমাজের দায়িত্ব।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এসব কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ জিডিপির শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ। এটা ৪ থেকে ৫ শতাংশ দেওয়া উচিত ছিল। করোনা মহামারির কারণে বাড়ানো উচিত ছিল। কমপক্ষে জিডিপির ২ শতাংশ উচিত ছিল। করোনা নিয়ন্ত্রণ এলে অর্থনীতি চাঙা হবে। তাই স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল করতে হবে। এটাকে অবহেলা করা উচিত না। কিন্তু অবহেলা করা হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে মঞ্জুরি দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে, এই অর্থের অপচয় হচ্ছে। যাদের ধরা হয়েছে, মামলা হয়েছে, কোনো শাস্তি পেয়েছে—এমনটা দেখা যায় না। কোনো না কোনো ফাঁক দিয়ে তারা বের হয়ে যাচ্ছে। তারা পুকুরচুরি করে বের হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা এসব তুলে ধরছেন, তাঁরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জনগণের চোখে ধরা পড়ছে।

জি এম কাদের বলেন, কিছুদিন আগে একজন সাংবাদিককে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। গলা টিপে ধরা হয়েছে। তাঁর নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়াচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা হতে পারে। বিশাল শাস্তি হতে পারে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা চাই আইনের শাসন থাকুক। কেউ অপরাধ করলে শাস্তি হোক। কিন্তু যাঁরা গণমাধ্যমে কাজ করেন, তাঁদের কিছু দায়িত্ব থাকে। সাংবাদিকতা পিলার অব দ্য স্টেট। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কাজ করে। সেখানে সাংবাদিকদের এইটুকু সুযোগ দেওয়া সমাজের দায়িত্ব।’

সম্পূরক বাজেট প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, বাজেটের চেয়ে কম খরচ হওয়া যেমন অস্বাভাবিক, তেমনি বেশি খরচও অস্বাভাবিক। এই অস্বাভাবিক বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে তার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা দরকার। বৃদ্ধির প্রস্তাব এলে দেখতে হবে এখানে দুর্নীতি হয়েছে কি না, বা প্রাক্কলন যথাযথ হয়েছিল কি না। ভুলত্রুটি কার কারণে হয়েছে, সেটা জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। সম্পূরক বাজেট নিয়ে যে আলোচনা হয়, তা অনেকটা অর্থহীন আলোচনা। কেউ প্রাসঙ্গিক কথাও বলেন না। জবাবদিহি এখানে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। পরিকল্পিতভাবে খরচ কমানো হলে মিতব্যয়িতা বলা যাবে। কিন্তু খরচ করতে না পারা অদক্ষতা। যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিষয়ে দেখা উচিত।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সম্পূরক বাজেটের আলোচনার বিষয়টি একটি নিয়ম রক্ষার জন্য হয়। এখানে সংসদ থেকে জনগণ কোনো লাভ হয় বলে মনে হয় না।

জি এম কাদের বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেবেন। প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। তাতে দুটি ডোজ দিতে ১০ বছর সময় লাগবে। তাহলে এই ১০ বছরে জীবন ও জীবিকার কী হবে? অর্থনীতির কী হবে? অর্থমন্ত্রী এর জবাব দেবেন বলে তিনি আশা করেন।

সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, কখন, কোত্থেকে কত টিকা পাওয়া যাবে, এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত নয়। কিছু জায়গা থেকে বন্ধুসুলভ মনোভাব দেখিয়ে ডোনেশান দিয়েছে। একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করার কারণে যখন তারা দিতে ব্যর্থ হয়েছে পরবর্তী কোনো বিকল্প ছিল না। এখন টিকা নিয়ে খুবই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। টিকা কোথা থেকে আসবে, তা খবরে শুধু আশার বাণী শোনা যাচ্ছে। এটা আনতে না পারলে জীবনের মতো জীবিকাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। অর্থনীতিও মুখ থুবড়ে পড়বে।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জি এম কাদের বলেন, এই বাজেটে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। করপোরেট কর কমানো হয়েছে। এতে ধনী আরও ধনী হবে, গরিব আরও গরিব হবে। ধনীদের তোষণের জন্য এই বাজেট অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে অনেকে মনে করছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এই বাজেটকে বলা যায়, বাজেট অব দ্য বিজনেসম্যান, বাই দ্য বিজনেসম্যান, ফর দ্য বিজনেজম্যান। তাঁরা বড় ব্যবসায়ীদের বুঝিয়েছেন। মাঝারি ও নিচু স্তরের ব্যবসায়ীকে বোঝাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *