বিএনপির ভার্চ্যুয়াল আলোচনা
অসৎ উদ্দেশ্যে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হচ্ছে
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হচ্ছে জনগণের ভোটের অধিকার লুণ্ঠনের একটি নতুন ষড়যন্ত্র। কারণ নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে তারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ভোট টেম্পারিং করবে।
এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আজ সোমবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করার জন্য জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে পুরো রাষ্ট্র কাঠামোকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কমিশনের পাঁচ হাজার অভিজ্ঞ জনবল-লোকবল থাকতেও এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হচ্ছে কী কারণে? এমন প্রশ্ন তুলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা সরকারের দুরভিসন্ধি। আগামী নির্বাচনেও গায়ের জোরে স্বৈরাচারী সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই কূটকৌশল। নির্বাচনের সঙ্গে এনআইডি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ দেশে পরিচয়পত্র একটাই, আলাদা ভোটার আইডি কার্ড নেই। এই এনআইডিই ভোটার আইডি হিসেবে কাজ করছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন সরকার আসে। আর ২০১৮ সালে তারা দিনের ভোট রাতে নিয়েছে। এখন ক্ষমতায় থাকতে নতুন কৌশল হিসেবে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য করায়ত্ত করা এবং নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যতই দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কখনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। একমাত্র সমাধান, এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতাড়িত করতে হবে, এদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, সরকার যা ইচ্ছা তা-ই করছে। আইন, বিচার, প্রশাসন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশে যে আইনের শাসন নেই, এর বড় দৃষ্টান্ত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
মির্জা আব্বাস বলেন, এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে, এটাকে বিএনপি ছোট করে দেখছে না। কারণ, এটা শুধু এনআইডি নয়, আরও কিছু আছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এটি সরকারের হাতে যাওয়ায় ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের ভোগান্তি হতে পারে, ভুয়া ভোটার বাড়তে পারে। এমনকি অনেক বিদেশিকেও এনআইডি দেওয়া হতে পারে।
মির্জা আব্বাস বলেন, তারা (সরকার) এমন সময়ে নতুন ইস্যু তুলে ধরল, যখন জাতি ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছে করোনায়। যখন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও করা যাচ্ছে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অনেকে বলছে এনআইডি কার্যক্রম যেখানেই থাকুক, ফলাফল তো একই। ফলাফলের ভিন্নতা আছে বলেই এটি নির্বাচন কমিশনে ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিচ্ছে কেন, নিশ্চয়ই কোনো না কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। তিনি বলেন, যারাই সংবিধান লঙ্ঘন করছে, একদিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না, কে বলতে পারে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, দলের মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আসাদুজ্জামান। সভায় মূল প্রবন্ধ পড়েন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাঈল জবিউল্লাহ।