‘গণআন্দোলন’ গড়তে জাতীয় ঐক্যের আহবান বিএনপির, নুসরাত শাহরিনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা

সরকার পতনের ‘গণআন্দোলন’ গড়তে সকল ‘দ্বিধা-দ্বন্দ্ব’ ভুলে জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘আজকে দেশে যে সংকট চলছে- এটা বিএনপি সংকট নয়, গোটা জাতির সংকট। এই সংকট থেকে উদ্ধার হতে হলে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। বিএনপি তো আছেই, সমস্ত দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তিগুলো আছে, রাজনৈতিক দলগুলো আছে, ব্যক্তিরা আছেন, আমাদের সামাজিক সংগঠনগুলো আছে, পেশাজীবী সংগঠনগুলো আছে সবাইকে আজকে ঐক্য হতে হবে।”

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ(এ্যাব)’ এর উদ্যোগে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েপ)শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরিয়ে একটা জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগনের একটা পার্লামেন্ট তৈরি করতে হবে। আমি আপনাদের কাছে আহবান জানাতে চাই- আসুন আমরা আমাদের সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে আ্মরা ঐক্যবদ্ধ হই, ঐক্যের মধ্য দিয়েই আমরা দূর্বার একটা গণআন্দোলন সৃষ্টি করি।”মির্জা আরো বলেন, ‘‘ আজকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সুকৌশলে গণতন্ত্রের একটা মোড়ক লাগিয়ে এবং গণতন্ত্রের কথা বলে তারা(সরকার) আবার একই কায়দায় এদেশের সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল এবং একটা তাবেদার রাষ্ট্র তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই দেশের মানুষ সবাই চিরকাল লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে সবসময়, যুগ যুগ ধরে।” আমি খুব বিশ্বাস করি এবং আমি আশাবাদী যে কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে এভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে এবং জনগনের কাছে তাদেরকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।”

বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘‘আবরারের মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা একটা সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটা পুরোপুরিভাবে নতজানু রাষ্ট্র করবার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্র থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং সেই সংগ্রামের আমরা যাই।”‘‘ আসুন স্বৈরাচার থেকে দেশকে মুক্ত করি, সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি। তাহলেই ফাহাদ আবরারের আত্মত্যাগের আমরা মূল্য দিতে পারবো, মর্যাদা দিতে সক্ষম পারবো।

”সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার প্রবাসী সাংবাদিক কনক সারোয়ারের বোন নুসরাত শাহরিন রাকাকে গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ কনক সারোয়ার এই সরকারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে সে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে সে কিছু সত্য কথা তার চ্যানেলের মাধ্যমে প্রকাশ করে, প্রচার করে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সফরকে কেন্দ্রে করে সে যে প্রতিবেদনটি প্রচার করে সেই কারণে এই ভয়াবহ প্রতিহিংসা পরায়ন এই সরকার তার বোনের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার করছে। কনকের বোন যিনি কোনোভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত নন, তিনি একজন গৃহবুধ, তিন সন্তানে মা আজকে তাকে তারা গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেফতার শুধু নয় তাকে এখন রিমান্ডে নিয়েছে।”‘‘ এটা ধারণার বাইরে। কতটা ফ্যাসিবাদী হলে, কতটা স্বৈরাচারী হলে, কত নির্যাতনকারী হলে এই ধরনের মানুষের ওপর নির্যাতন-অত্যাচার করা যায়। এটা নতুন নয়। এটা আমরা দেখেছি আগে থেকে। এর আগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু আমাদের কত নেতা-কর্মীকে তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের মা-বোনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে-এটা আমরা অনেকেই জানি না।

গত কয়েক বছরে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বাসায় একই কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে।”উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িত ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ পরদিন চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখার ছাত্র লীগের একদল নেতা-কর্মী । মামলায় বুয়েট ছাত্রলীগেরে ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

এ্যাবের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির শওকত মাহমুদ, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বুয়েট শাখার ছাত্র দলের আহবায়ক আসিফ হোসেন রচি প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।অনুষ্ঠানে এ্যাবের মহাসচিব হাছিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি মিয়া মুহাম্মদ কাইয়ুম, কৃষিবিদ অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *