২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন চাঁদপুরে ৪ জন নিহত
কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে প্রতিমার পায়ে পবিত্র কুরআন মাজিদ রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা রক্ষার্থে ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। ইউএনবি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা রক্ষার্থে বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ফয়জুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত কুমিল্লা, ঢাকা বিভাগের নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ ২২টি জেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদা থাকলে রাজধানী ঢাকাতেও বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এর আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বুধবার রাত থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের যেসব উপজেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে সেগুলো হলো- হাটহাজারী ও বাঁশখালীতে দুই প্লাটুন করে, পটিয়া, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি ও চন্দনাইশে এক প্লাটুন করে মোট আট প্লাটুন।
কুমিল্লার ঘটনায় তদন্ত কমিটি : কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে রাস্তায় নির্মিত একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন মাজিদ রেখে অবমাননার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: সায়েদুল আরেফিনকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ ও আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকিয়া আফরিন। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবারও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির টহল অব্যাহত ছিল।
এ দিকে বিষয়টি তদন্ত করতে আওয়ামী লীগের একটি সংসদীয় টিম গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে কথা বলেন। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। একই সময়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন। কমিটির নেতারা কুমিল্লা সার্কিট হাউজে দলীয় ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। ঘটনাস্থলে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একটি গোষ্ঠী ন্যক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ডিআইজি মো: আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ফয়েজ আহাম্মদ নামের প্রধান সন্দেহভাজনসহ ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে। শুরু থেকে প্রতিটি ঘটনায় মামলা দায়ের হবে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। সংসদীয় কমিটির নেতাদের প্রশাসনের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এর আগে গত বুধবার সকালে লোকজন নগরীর নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে রাস্তার ওপর নির্মিত একটি পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির পায়ের ওপর পবিত্র কুরআন দেখতে পান। তারা ৯৯৯-এ পুলিশকে মোবাইল ফোনে কল করেন। খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গিয়ে পবিত্র কুরআন মাজিদ সরিয়ে আনে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে কুরআন মাজিদ অবমাননার এ বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে জানাজানি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়লে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সেখানে জড়ো হতে থাকে এবং সেখানে জনতার ঢল নামে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে যান এবং ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত থাকার আহবান জানান। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হতে থাকলে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি চালায়। এতে আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ৩০ জন। পরে বিক্ষোভ নগরীর কয়েকটি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরীতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
হাজীগঞ্জে নিহত চারজনের লাশ হস্তান্তরের উদ্যোগ
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত চারজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে।
হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় চারজনের মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের আল আমিন(১৮), রান্ধুনীমুড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ইয়াছিন হোসেন (১৫), একই এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামীম (১৯) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাবলু (৩০)। তাদের লাশ চাঁদপুর সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার কথা।
রান্ধুনীমুড়া এলাকার আব্বাস উদ্দিনের ছেলে রিপন বলেন, ‘আমার ভাই শামীম ভ্যানে করে কলা বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হওয়ার পর বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লা মেডিক্যালে মারা যান।’
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা কাউকে উদ্দেশ করে গুলি করিনি। মন্দিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের ওপর হামলা চালানো হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৩৯ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় এএসপি সোহেল মাহমুদ, হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদসহ ২৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে পুলিশের আটজন সদস্য হাজীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার রাত সোয়া ৮টায় হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় ‘তৌহিদী জনতা’র ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। একপর্যায়ে মিছিলকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ গুলি চালায়। এতে চারজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনার পর রাত ১১টা থেকে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। সেখানে (হাজীগঞ্জে) পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব মোতায়েন করেছি।’
হাজীগঞ্জ পৌর মেয়র মাহাবুব আলম লিপন বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমি নিজেও আহত হই।’
বিবিসি জানায়, হাজীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানিয়েছেন, নিহতরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তবে তারা পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন কি না সেটি তিনি নিশ্চিত করেননি। ঘটনার পর বুধবার রাত থেকে হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এছাড়া বুধবার রাতেই নোয়াখালীর হাতিয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মিছিল নিয়ে মন্দিরে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।
এ দিকে এ ঘটনায় শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে এর আগে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আর পুলিশ বলছে, তারা সন্দেহভাজন অন্তত ১০ জনকে আটক করেছে।
এ দিকে পূজা উদযাপন পরিষদের কুমিল্লা জেলা ইউনিটের সম্পাদক নির্মল পাল বলছেন খুব ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা জানিয়েছেন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লায় অনেকগুলো পূজামণ্ডপে উৎসব চলছিল। কিন্তু যেই মণ্ডপে কুরআন পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে সেখান থেকে প্রতিমা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন পূজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন।
নোয়াখালীতে র্যাব-বিজিবি মোতায়েন
নোয়াখালী অফিস জানায়, কুমিল্লার ঘটনার পর নোয়াখালীতে বিজিবি ও র্যাব টিম মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে এক জরুরি সভায় প্রতিটি উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ৩৬২ জন আনসার সদস্য নিয়োগ ও প্রতিটি পূজামণ্ডপে পুলিশের পাশাপাশি টহল দুই প্লাটুন বিজিবি ও ২টি র্যাব টিম টহল মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ দিকে গতকাল নোয়াখালীর হাতিয়াতে পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় পুলিশ চারজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলো মো: সোহলে (২৫)। সে হাতিয়া পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে। অন্য তিনজনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ।
রাতে হাতিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রী শ্রী প্রিতম সাদুর বাড়ির দুর্গাপূজা মণ্ডপে এবং উপজেলার নলছিড়া ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাবা লোকনাথ পূজামণ্ডপে এ ঘটনা ঘটে। হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
রামগঞ্জের ইছাপুরে মন্দিরে ভাঙচুর
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা জানান, রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর ও সোন্দড়া গ্রামের ৫টি মন্দিরে ভাঙচুর করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুখোশধারী ৩০-৪০ জনের একটি গ্রুপ মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বলে জানান পূজা পরিষদের নেতারা।
এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো: আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান (পিপিএম সেবা), রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা ও রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসক মো: আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত চলছে। নির্বিঘ্নে পূজা শেষ করতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ স্থানীয়দের সহযোগিতা চান জেলা প্রশাসক।
পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান (পিপিএম সেবা) জানান, কোনো অবস্থাতেই দুর্বৃত্তদের ছাড় দেয়া হবে না। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপে আলাদা করে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়েছে। মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরকারীদের শনাক্তেও তদন্ত চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপ্তি চাকমা জানান, এ উপজেলার মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির চমৎকার। অথচ একটি মহল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে এহেন ন্যক্কারজনক কাজ করেছে, যা দুঃখজনক।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এরই মধ্যে পুলিশ তদন্তে অনেক দূর এগিয়েছে। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জকিগঞ্জে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট জকিগঞ্জের কালিগঞ্জে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জকিগঞ্জ থানার এসআই আমিরুল সরকার বাদি হয়ে মামলাটি করেছেন। এ দিকে বুধবার রাতে এ ঘটনায় কালিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষয়টি গতকাল সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: লুৎফর রহমান।
পেকুয়ায় ৩টি পৃথক মামলা, পরিস্থিতি থমথমে
চকরিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল হলেও প্রশাসন ও পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতায় বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সাহারবিল ইউনিয়নের শাহাপুরাস্থ জেলেপাড়া মন্দিরের বাইরে নির্মিত একটি তোরণ উত্তেজিত মিছিলকারীরা ভেঙে দিয়েছে। এ সময় দু’পক্ষের নিক্ষিপ্ত ইটপাটকেলে কয়েকটি বাড়িও সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের এমপি আলহাজ জাফর আলম তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি সবাইকে ধৈর্যধারণ করে এলাকায় শান্ত পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এ দিকে পেকুয়া উপজেলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বিশ্বাস পাড়ায় ২টি মন্দিরের সামনে পূজা উপলক্ষে নির্মিত তোরণে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অন্য দিকে শিলখালী ইউনিয়নের শিলপাড়ায় ২টি মন্দিরে হামলা হয়েছে।
পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, পুলিশ ৫০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনার ব্যাপারে থানায় পৃথক ৩টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ২০০-২৫০ জনকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ ৯ জনকে আটক করেছে।
শরণখোলায় প্রতিবাদ মিছিল : গ্রেফতার ৪
শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের শরণখোলায় চারজনকে গ্রেফতার করে শরণখোলা থানা পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের মালিয়া গ্রামে তারা মিছিল বের করে। মিছিলে খবর পেয়ে শরণখোলা থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মিছিলকারীরা পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদেরকে বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর উপজেলার সব মন্দিরে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের চাঁন মিয়া হাওলাদারের ছেলে রেজাউল হাওলাদার (৪৫), বাচ্চু মাঝির ছেলে সজীব মাঝি (২০), নূরুল ইসলাম খানের ছেলে বায়জিদ খান (২০) ও উত্তর রাজাপুর গ্রামের মোস্তফা হাওলাদারের ছেলে ওলিয়ার হাওলাদার (১৮)।
শিবগঞ্জে প্যান্ডেল ভাঙচুর, গ্রেফতার ১১
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা নবজাগরণ সঙ্ঘ মন্দির পূজামণ্ডপে হামলা হয়েছে। বুধবার রাতে একদল দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে হামলা চালিয়ে মণ্ডপের বাইরের প্যান্ডেল ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
গাজীপুরে মন্দিরে হামলা, আটক ১৯
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের তিনটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সকালে ৪০০-৫০০ লোক লাঠিসোটা নিয়ে কাশিমপুর থানা এলাকার ওই তিনটি মন্দিরে হামলা চালায়। হামলার ঘটনার সাথে জড়িত ১৯ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের স্থানীয় পোশাক কারখানার ১৬ জন শ্রমিক রয়েছে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপ তিনটি পরিদর্শন শেষে বলেন, আমাদের দেশে ধর্ম নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি নেই। হিন্দু-মুসলমানসহ সব ধর্মের আমরা ভাই ভাই, যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। আমরা তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। এ সময় তিনি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি পূজামণ্ডপে আগামী লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজা উদযাপনের জন্য যত টাকা খরচ হয়, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তা বহনের প্রতিশ্রুতি দেন।
পূজামণ্ডপ ভাঙচুরের ঘটনায় আটককৃতরা হলেন কুষ্টিয়ার আল আমিন (১৯), সিরাজগঞ্জের ফরহাদ হোসেন শেখ (২৬) ও পাষান মিয়া (৩০), নাটোরের রিমন পাটোয়ারী (২১), বগুড়ার মাসুদ রানা (২৭) ও মো: মাসুদ (২৫), সিরাজগঞ্জের ইব্রাহিম হোসেন (২৫), আব্দুল মমিন শেখ (২১) ও জাহিরুল ইসলাম শেখ (৩০), ময়মনসিংহের বিল্লাল হোসেন (২১), বগুড়ার মো: রিপন মিয়া (১৯), সিরাজগঞ্জের শামীম রেজা (২৫) ও রেজাউল করিম (৩০), পঞ্চগড়ের আলমগীর কবীর (২৮), সিরাজগঞ্জের সোহাগ (২৬) এবং জামালপুরের অরিছুল আলম (২৬)। উপরোক্ত সবাই গাজীপুরের কোনাবাড়ি ও কাশিমপুর এলাকায় থাকে এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানার কর্মী। অপর আটককৃতরা হলেন গাজীপুরের শাকিল আহমেদ (২৫) ও রানীশংকৈল থানার মো: রাসেল (২১)।