আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত

নরসিংদীর সদরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল আলোকবালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৫০ জন গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।

নিহত তিনজন হলেন আলোকবালী ইউনিয়নের নেকজানপুর গ্রামের আশরাফুল (২০), আমির হোসেন (৫০) ও খুশি বেগম (৫৫)। এই তিনজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২২ জনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তিনজনই আলোকবালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের কর্মী-সমর্থক। দেলোয়ার এবারও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুল্লাহর সমর্থকদের সঙ্গে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন বলেন, আলোকবালী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকারের সঙ্গে আসাদুল্লাহর দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই দুই পক্ষের সমর্থকেরা টেঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আলোকবালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দেলোয়ার। অন্যদিকে মো. আসাদুল্লাহ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে তিনি বাধ্য হয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপরও দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ রয়ে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে ওই ইউনিয়নে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এর জেরে আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র ও টেঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় দুই পক্ষের সমর্থকদের ছোড়া গুলিতে ও টেঁটায় বিদ্ধ হয়ে অন্তত ৫০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জনকে নরসিংদী সদর হাসপতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ অন্তত ২২ ব্যক্তিকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ আমীরুল হক বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ চারজনকে মৃত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সাতজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ অন্তত ২২ জনকে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।’

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আলোকবালীতে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনজনের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর এ আলোকবালী ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন সাতপাড়া গ্রামের শাহ আলম খান (৪৫) ও কাইয়ুম মিয়া (৩০)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *