জলবায়ু বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন

জলবায়ু বিষয়ে পারস্করিক সহযোগিতার বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। বুধবার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান কপ-২৬ সম্মেলন থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি ও চীনের দূত শি জেনহুয়ার এই যৌথ বিবৃতিতে উভয় দেশ জলবায়ু সুরক্ষায় যৌথভাবে কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, উভয় পক্ষই ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকার লক্ষ্য অর্জনে একসাথে কাজ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সেই লক্ষ্য অর্জনে দৃশ্যমান ব্যবধান ধাপে ধাপে কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।

এদিকে এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মী ও রাজনীতিবিদরা। জাতিসঙ্ঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একে বেশ জরুরি ও উৎসহজনক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তবে গ্রিনপিস বলছে, দুই দেশের আরও বেশি বেশি প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত ছিল।

এদিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করা মানবজাতিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এড়াতে সাহায্য করবে। শিল্প যুগের আগের তাপমাত্রার সাথে তুলনা করে এই মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে।

২০১৫ সালে প্যারিসে বিশ্ব নেতারা কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাসের মাধ্যমে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রী থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

চীনের জলবায়ু বিষয়ক দূত শি জেনহুয়া সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যতোটা না মতপার্থক্য আছে, তার চাইতে বেশি চুক্তি রয়েছে।

অপরদিকে জন কেরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে নানা বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, তবে জলবায়ু ইস্যুতে, সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করাই একমাত্র উপায়।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পদক্ষেপই এখন গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সামনে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সামনের সপ্তাহে এই বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এই দুই দেশকে বিভিন্ন বিষয়ে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়।

বুধবারের এই বিরল যৌথ ঘোষণায়, মিথেন নির্গমন, ক্লিন এনার্জিতে রূপান্তর এবং ডি-কার্বনাইজেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা।

কিন্তু চীন এই সপ্তাহের শুরুতে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেনের নির্গমন কমিয়ে আনার বিষয়ে চুক্তি করতে অস্বীকার করে।

ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে আরও প্রায় ১০০টি দেশ। চীন এর পরিবর্তে মিথেনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণে একটি ‘জাতীয় পরিকল্পনা’ তৈরি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মার্কিন-চীন ঘোষণার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রেশার গ্রুপ ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর মার্কিন জলবায়ু নীতি অ্যাকশনের পরিচালক জেনেভিভ মেরিকেল।

তিনি বলেছেন, ‘কপ২৬-সম্মেলনের খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে এই ঘোষণাটি এসেছে এবং এই ঘোষণা নতুন আশা দেয় যে, বিশ্বের দুই শক্তির থেকে যথাযথ সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া যাবে। যার ফলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সীমাবদ্ধ রাখতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘তবে আগামী নয় বছরের মধ্যে যদি দুটি দেশ প্রয়োজনীয় হারে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করতে পারে তবে এখন থেকেই কী করা প্রয়োজন সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। কেননা তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে গেলে পুরো অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে।’

গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জেনিফার মরগানও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে সতর্ক করেছেন যে উভয় দেশকে জলবায়ু লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি বেশি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এই ঘোষণাটি সঠিক দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জলবায়ু নীতির প্রধান ফ্রান্স টিমারম্যানস বলেছেন যে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করা দেখা সত্যিই উৎসাহজনক।

তিনি বলেন, ‘এতে এটিও প্রমাণ হয় যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন দুই দেশই জানে এই বিষয়টির গুরুত্ব অন্যান্য বিষয়গুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং এটি কপ২৬এ অবশ্যই একটি চুক্তিতে আসতে সাহায্য করবে।’

চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণকারী দেশ, তারপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন যে চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতার দিকে লক্ষ্য রাখবে, ২০৩০ সালের আগে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা করছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরন শূন্যতে নামিয়ে আনা।

সূত্র : বিবিসি