বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত
গত ২৭ ডিসেম্বর সোমবার, রাত ৮টায় এই বছরের শেষ জাতীয় স্থায়ী কমিটি বিএনপি র গভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে-
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায় , ড. আব্দুল মঈন খান, জনাব নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, জনাব ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।সভায় বিগত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।এছাড়া সভায়, মহাসচিব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে সদস্যবৃন্দকে অবহিত করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, একুশে পদক প্রাপ্ত দেশ বরেণ্য সাংবাদিক দি ফিন্যাসিয়াল হেরাল্ড এর সম্পাদক জনাব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ এর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এই সভায়।উল্লেখ্য জনাব রিয়াজউদ্দিন দেশের গণ-মাধ্যমের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের মধ্যে অন্যতম; সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, সংবাদকর্মীদের অধিকারের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন, বিশেষ করে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পনুরুদ্ধারের সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। সভা মনে করে যে, জনাব রিয়াজউদ্দিনের ইন্তেকালে গণমাধ্যমে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়। সভায় জনাব রিয়াজউদ্দিনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
উক্ত সভায়, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ আকরাম হোসেনের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সৈয়দ আকরাম হোসেনের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডে ৪৫ জনের অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয় এখানে। এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষেকে আহ্বান জানানো হয়। মর্মান্তিক এই দূর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবী জানানো হয়। সভা মনে করে অনির্বাচিত সরকারের সকল স্তরে যে জবাবদিহীহিনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তারই ফলশ্রুতিতে এই ভাবে প্রায়ই ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটছে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর নিশিরাতে ভোটাধিকার হরণের তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশে মহানগর ও জেলা পর্যায়ের এবং ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে এই আলোচনায়।
সভায়, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি সাথে নিবন্ধণকৃত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিএনপি মনে করে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কালীন সময়ের নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যাতীত নির্বাচন কমিশনের গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়। বিগত দুইটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নিবন্ধণকৃত রাজনৈতিক দল গুলো অংশ নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিলো। বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিত ভাবে রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করেছিলো। কিন্তু সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকার কারনে। রাষ্ট্র যন্ত্রকে বেআইনী ব্যবহার, নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা, অযোগ্যতার কারনে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে। ভোটারগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পর পর দুটো নির্বাচন কমিশনই চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১২ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে নির্বাচন কালীন সময়ে তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের বিধান বলবত করে প্রকৃত পক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র বিকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ তার ভোটের অধিকার হারিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় সরকার বহাল রেখে নির্বাচন কমিশন কখনই স্বাধীন ভাবে নিরপেক্ষ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবেনা। বিএনপি বিশ^াস করে নির্বাচন কালীন সময়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যতিরেকে সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোন নির্বাচন কমিশনই অনুষ্ঠান করতে পারবেনা। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন তার কোনও ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। সেই কারনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ কোনও ইতিতবাচক ফলাফল আনতে পারবেনা। বিএনপি অর্থহীন কোন সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফএআই) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদ দিয়ে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে যে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে ,সেই হিসাব সামগ্রিক চিত্র বর্ণনা করে বলে মনে করে না বিএনপি। প্রকৃত পক্ষে দূর্নীতি ও অর্থ পাচারের সামগ্রিক চিত্র আরও ভয়াবহ। সভা মনে করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দূর্নীতি ও দূর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ে অর্থ পাচার হচ্ছে।
সভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ইউএনএইচআরসি এর গুমসংক্রান্ত ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সেস’ প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা গুলো কর্তৃক ‘গুম’ এর ঘটনা গুলো উঠে এসেছে। গত এক দশক যাবত, রাজনৈতিক বিরোধী নেতা ও কর্মীদের গুম, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী গুম হওয়া বাংলাদেশে একটা ত্রাসের অবস্থায় সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বারবার বাংলাদেশে তাদের প্রতিনিধি দল তদন্তের জন্য পাঠাতে চাইলেও সরকার অনুমতি প্রদান করে নি।
সভায়, উক্ত সংস্থার তদন্ত কমিটিকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানানো হয়।সভা শেষে সভাপতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।