আগামী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ
শুধু যুক্তরাজ্য নয়, বৃহৎ পরিসরে বাংলাদেশের বন্ধুরা মনে করে, আগামী নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। উন্নয়নের নিদর্শন হিসেবে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া জরুরি।
গতকাল রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন এ কথা বলেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্ধুরা যদি মনে করে, এখানে শৃঙ্খলাভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আইনের শাসন আছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, তাহলে সম্পর্ক আরো ভালো হবে। এটি হলে আমরা খুশি হব।’
আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে হাইকমিশনার রবার্ট বলেন, এই নির্বাচন এমন এক সময় হবে, যখন বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শাসনব্যবস্থার মান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা প্রথমে দেখে এখানে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ ও ফলপ্রসূ কি না। এটি কিন্তু প্রকারান্তরে দেখার চেষ্টা যে দেশটিতে কি আইনের শাসন আছে; এ দেশে কি যথার্থ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনপ্রক্রিয়া আছে?ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আইনের শাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আশা করি, এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় আগামী নির্বাচন খুব ভালো হবে। ’
ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হলে সম্ভাব্য বিপদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক উত্তরণ হচ্ছে। আমার মনে হয়, উত্তরণের সময় নির্বাচন খুব ত্রুটিপূর্ণ হলে নিশ্চিতভাবে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগের চিন্তা করা কঠিন হবে। ’
হাইকমিশনার বলেন, নির্বাচনপ্রক্রিয়া হওয়া উচিত পুরোপুরি বাংলাদেশের নেতৃত্বে। এই প্রক্রিয়া কিভাবে হবে, বাংলাদেশের বন্ধুদের বলার বিষয় নয়। তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনেক কাঠামো আছে। তবে বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমি বলব, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য হলে নির্বাচনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়া সহজ হবে। ’
হাইকমিশনার রবার্ট বলেন, ‘আমার মনে হয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রথম ধাপ হবে একটি বিশ্বাসযোগ্য সার্চ কমিটি। এটি কিভাবে কাজ করতে পারে বলে আমরা মনে করি, সে বিষয়ে আড়ালে আলোচনা করেছি। আমরা সানন্দে প্রকাশ্যে এ কথা ব্যাখ্যা করতে পারি। ’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন গঠনে চলমান প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার প্রতি সব দলের অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন।
হাইকমিশনার বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানসহ মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজ সবচেয়ে ভালো। সেই সঙ্গে জবাবদিহি ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য জরুরি বিষয়গুলো প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, প্রথমত, সব দলকে সংগঠিত হতে দিতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি মুক্ত আলোচনার জন্য নির্বাচনের আগে তাদের সবার কথা শুনতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব ভোটারের স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারার সুযোগ। ভোট যেন স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতার মাধ্যমে গণনা করা হয়। আর সর্বশেষ হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য ফল, যেন সব রাজনৈতিক দল, এমনকি যে দল বিজয়ী হয়নি, সেই দলও ফল মেনে নেয়।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এর ভবিষ্যৎ বোঝা যায়। স্বাধীন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে সহযোগিতার ব্যাপারে সব দলের প্রতিশ্রুতি থাকবে। সেই সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক ও নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন আগামী বছর নির্বাচন প্রতিযোগিতার তদারকিতে কাজ করবে। ’
স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ‘শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যে সাহস ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে আমি মুগ্ধ। ’
আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটে আমাদের লক্ষ্য স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। তবে মিয়ানমার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া এখানে বড় শর্ত। ’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ৪১ লাখ কভিড টিকা দিয়েছে। শিগগিরই আরো টিকা বাংলাদেশকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেবে যুক্তরাজ্য।
ডিআরইউর নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব বক্তব্য দেন।