নড়াইলের ঘটনার জন্য আমরা সত্যিই দুঃখিত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নড়াইলে শিক্ষককে হেনস্তা করার ঘটনায় কার কতটা গাফিলতি রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা এবং শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এবারের ঈদে নাশকতার কোনো আশঙ্কা নেই। পশুরহাটে সবাইকে মাস্ক পরে ঢুকতে হবে বলেও জানান তিনি।

নড়াইলে প্রশাসনের সামনে শিক্ষককে হেনস্তা করার ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আকস্মিক অনেক ঘটনা ঘটে যায়। এ ঘটনার জন্য আমরা সত্যই দুঃখিত। একজন শিক্ষককে উত্তেজিত জনতা হেনস্তা করেছে। আমাদের ডিসি ও এসপি তাৎক্ষণিকভাবে কী ব্যবস্থা নিয়েছিল। আমরা মূল ঘটনাটা কী হয়েছিল ভালো করে জেনে আপনাদের জানাব। তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে উত্তেজিত জনতা এত বেশি ছিল সেখানে ডিসি-এসপির কিছু করার আগেই এ ঘটনা ঘটে গেছে। আসলেই এটা দুঃখজনক। এক্ষেত্রে না জেনে না শুনে না বুঝে ফেসবুকে এ ধরনের উক্তি বা কমেন্ট না করাই উচিত।

নড়াইলের ঘটনায় পুলিশ দায় এড়াতে পারে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি কেউ কোনো দায়িত্বে অবহেলা করলে সেটা পুলিশ করুক বা জেলা প্রশাসক করুক অথবা জনপ্রতিনিধি করুক, সেখানে সবাই ছিল আমি শুনেছি। তাই কার কতটা গাফিলতি রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মহানবি (সা.)-কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয় কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। এই পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলেন ওই কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। একই ধর্মের হওয়ায় তাকে সমর্থন দিচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময় তাদের পাশে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।

সাভারে একজন শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের শিক্ষাগুরু তাদের যদি নিজ স্কুলের ছাত্রই হত্যা করে, এটা কতখানি নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে সেটা আপনারা নিজেরাই অনুমান করুন। তার বাবাকে ধরেছি। শিগগিরই তাকেও ধরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঈদে নাশকতার আশঙ্কার খবর আসেনি। না এলেও গোয়েন্দারা সজাগ থাকবে। তিনি বলেন, এ বছর ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে বাইনোকুলার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, পকেটমারসহ অন্য দুষ্কৃতকারীদের যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বছর বাস, লঞ্চ, ট্রেন ও ফেরিঘাট ছাড়াও পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত করতে সারা দেশে হাইওয়ে পুলিশের ১০৯টি টহল দল, ৮৪টি কুইক রেসপন্স দলসহ ওয়াচ টাওয়ার, রেকার ও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকবে। ঈদের ছুটিতে মহানগর, জেলা, উপজেলায় হাটবাজারে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হবে। কোনো পশুবাহী নৌযান বা ট্রাককে জোরপূর্বক কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বা হাটে যেতে বাধ্য করা যাবে না। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১২টিসহ সারা দেশে ৪ হাজার ৪০৭টি পশুর হাট বসবে। সংখ্যা হয়তো দু-একটা বেশিকম হতে পারে। হাটগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে। পশুরহাটের টাকা পুলিশের সহযোগিতায় বহন করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।

মহাসড়ক ও সড়কে পশুরহাট বসবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পশুরহাটে মাস্ক পরে ঢুকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সারা দেশে ৪৫ হাজার মাঠে বা ময়দানে এবং ৫০ হাজারের মতো মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং সরকার কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্য নির্দেশিকা পালন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ঈদের আগেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছে সরকারকে। পোশাক শ্রমিকদের ছুটি পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে। তবে কোন তারিখ থেকে ছুটি দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। মন্ত্রী বলেন, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যাতে গুজব বা উসকানি দিয়ে শিল্প এলাকায় নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। কাঁচা চামড়া বিদেশে যাতে পাচার না হতে পারে, সেদিকেও নজরদারি থাকবে।