আ.লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’ সরকারের মেগা প্রকল্প
আরও আট প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন, পর্যায়ক্রমে অগ্রগতি তুলে ধরা হবে * পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, অন্য প্রকল্প নিয়েও তেমনি অনুভূতি, তাই জনগণ উন্নয়নে রায় দেবেন- জাহাঙ্গীর কবির নানক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হবে পদ্মা সেতুসহ সরকারের নয় মেগা প্রকল্প-এমনটি মনে করছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। তাদের মতে, ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সেতুর দুই পারসহ সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যা ছিল সাধারণ ভোটারদের আকৃস্ট করতে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রদর্শনের একটি মহড়া। আরও আটটি মেগা প্রকল্প বাস্তাবায়নাধীন। পর্যায়ক্রমে এগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতিও দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হবে।
যে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পুরোদমে চলছে, সেগুলো হচ্ছে- মেট্রেরেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রামের দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক (রেলপথ) নির্মাণ এবং কর্ণফুলি টানেল। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ করার তোড়জোড় রয়েছে সরকারের।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রায় প্রতিদিন তাদের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বক্তৃতা করছেন। সেখানে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষ বিএনপির শাসনামলের দুর্নীতি এবং ধ্বংসাত্মক রাজনীতি এবং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে কি কি উন্নয়ন করেছে, তারও বিস্তারিত উল্লেখ থাকছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা এবং সরকারের নীতিনির্ধারক ও মন্ত্রীদের বক্তৃতায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের রাজনীতির কারণে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতি এখন পদ্মার গহীন অতলে নিমজ্জিত। শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে পদ্মাসেতু নির্মিত হয়েছে। বিএনপির ষড়যন্ত্র আর পদে পদে বাধা সরকারের উন্নয়নকে একটুও বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। এ থেকেই বিএনপি নেতারা দিন দিন গভীর থেকে গভীরতর হতাশায় আক্রান্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ এগিয়ে যায়। টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেৃতত্বে বাংলাদেশ এগিয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এখন বিশ্বের কাছে বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে উন্নয়নের রোড মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এককভাবে তার কারণেই সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণ। পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের মধ্যে যে উচ্ছাস-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে, অন্য মেগা প্রকল্প নিয়েও তেমনি অনুভূতি রয়েছে দেশের মানুষের। এগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, সাহস এবং পকিল্পনার ফসল। তাই আগামী নির্বাচনে জনগণ উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। জানা গেছে, প্রকল্পটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটির বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।
মেট্রোরেল প্রকল্প ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পে শুরু থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কাজের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৭ শতাংশ।
পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৬৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে। তার সুফল এখন দেশের মানুষ ভোগ করছে। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাদিা পূরণ করতে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এটি ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎখাতে সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। গত এপ্রিল মাস এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারের পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ১৬২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮৫ শতাংশেরও বেশি।
এ সরকার পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
কর্ণফুলী টানেল এ বছর ডিসেম্বরের পর চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এই টানেল (বঙ্গবন্ধু টানেল) কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ী চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমে যাবে।