ভোলায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ
পুলিশের দুই মামলায় আসামি ৬৭৫, ছাত্রদল নেতা লাইফ সাপোর্টে
ভোলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গত রবিবার রাতে ভোলা সদর থানায় পুলিশের করা এই দুই মামলায় ৬৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জেলা ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলমের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
সদর থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি এবং হত্যার ঘটনায় আরেকটি মামলা করা হয়।
নূরে আলম রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। এ ছাড়া গুরুতর আহত আরো ছয় বিএনপি নেতা রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছেন।
সংঘর্ষের ঘটনার পর জেলা বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। বিএনপি কার্যালয়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সারা দেশে গায়েবানা জানাজা পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। আজ মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
রাজধানীতে চিকিৎসাধীন নেতাদের দেখভাল করছেন দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, নূরে আলমের মাথায় একাধিক গুলি লেগেছে। তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখনো তাঁর জ্ঞান ফেরেনি। নূরে আলমের অবস্থা গুরুতর। গতকাল সকালে নূরে আলমকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মনির হোসেনের চোখে গুলি লেগেছে। শ্রমিক দল নেতা আলামীনের বুকে বেশ কয়েকটি গুলির চিহ্ন আছে। তাঁর ফুসফুসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নজরুলের ডান চোখ এবং মনির বাঁ চোখে রাবার বুলেট লেগেছে। দুজনের ক্ষতিগ্রস্ত চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ছাত্রদল নেতা সুমন ও সানাউল্লাহ এবং কৃষক দল নেতা রাশেদও ঢাকার একাধিক হাসপাতালে গোপনে চিকিত্সা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভোলা সদর থানা বিএনপি সভাপতি আসিফ আলতাফ। তিনি বলেন, সুমনের ডান চোখ ও কানে গুলি লেগেছে। লাঠির আঘাতে সানাউল্লাহর মাথার খুলি ফেটে গেছে। রাশেদের পুরো শরীরে অসংখ্য রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়েছে।
এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ১৬ বিএনপির কর্মী গ্রেপ্তারের ভয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে কর্মরত একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, আহত ২১ জন নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে পাঁচজনকে উন্নত চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ১৬ জন কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন।
গত রবিবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ শেষে মিছিল করাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম মাতব্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন অর্ধশতাধিক।
গত রবিবার পুলিশের গুলিতে আবদুর রহিম যখন নিহত হন তখন তাঁর মা ঢাকায় মেয়ের বাসায় ছিলেন। ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে ভোলায় ফিরে যান তিনি। গতকাল সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে তাঁকে আহাজারি করতে দেখা যায়।
কাঁদতে কাঁদতে আবদুর রহিমের মা ফখরুন্নেছা বলেন, তাঁর ছেলেকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা তাঁর অন্য তিন ছেলের ওপরও হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
নিহত আবদুর রহিম ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ১৩ বছর বয়সী ছেলে ইয়াছিন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ১০ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বাকি দুই ছেলে আব্দুল্লাহর বয়স সাত ও ওসমানের বয়স পাঁচ বছর।
আবদুর রহিমের স্ত্রী বিবি খাদিজা বলেন, তাঁর স্বামী নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। গত কয়েক দিন আগে একটি দুর্ঘটনায় পায়ে ব্যথা পান। রবিবার সকাল ৯টার দিকে বাড়ি থেকে একটি পারিবারিক মামলার হাজিরা দেওয়ার কথা বলে ভোলা শহরে যান। এরপর থেকে তাঁর সঙ্গে কথা হয়নি। দুপুর ১২টার দিকে একজন ফোন করে জানান, আবদুর রহিম আহত হয়ে হাসপাতালে। খবর শুনে তিনি হাসপাতালে গিয়ে তাঁর লাশ পান।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবদুর রহিমের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুর ২টায় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ সময় বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ঘটনার পর থেকে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে।