সরকারের নির্দেশেই পুলিশ সাধারন মানুষকে হত্যা করে
এম ডি আসাদ উজ্জামান খান, যুক্তরাজ্য থেকে
সম্প্রতি রায়হান নামে এক যুবককে সিলেট বন্দর থানার পুলিশ তুলে নিয়ে সারারাত পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। রায়হানের তিনমাসের এক সন্তান আছে এবং সে একজন খুব সাধারণ যুবক। সে রাজনীতি করেনা, দলবাজি করেনা। খুব সাধারণ একজন গৃহী মানুষ যে তার সন্তানের পিতা হওয়ার পরে তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে সময় পার করছিলো।
হাসিনার বর্বর পুলিশ সেই স্বপ্নকে চুরমার করে দিলো। রায়হান একটা ফোন কল করার সুযোগ পেয়েছিলো থানায় আটক থাকা অবস্থায়। সে তাকে বাঁচানোর জন্য মাত্র দশ হাজার টাকা বা একশো ইউরোর সমপরিমাণ টাকা নিয়ে আসার জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছে আকুল আর্তি জানিয়েছিলো। বাংলাদেশের একটা সাধারণ পরিবারের জন্য একশো ইউরোর সমপরিমাণ টাকা একটা বড় অংকই বটে। তার পরিবার যেভাবেই হোক টাকাটা জোগাড় করেছিলো কিন্তু রায়হান সারা রাতের অব্যাহত পিটুনি সহ্য করতে পারেনি। অত্যাচারের সময় পুলিশ তার হাত-পা ভেঙে দেয়। নখ উপড়ে দেয়। সে মারা যায়।
হাসিনার পুলিশ নৈশ ভোটে হাসিনাকে নির্বাচিত করার মূল কারিগর হিসেবে কাজ করার পরে এমনই বর্বর পুলিশি শাসন জারি করেছে। যাকে ইচ্ছা তুলে নিয়ে যাচ্ছে, ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছে জমিজমা লিখে নিচ্ছে, যাকে ইচ্ছা মেরে ফেলছে, গুম করছে। কাউকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। শুধু সরকারি দলের লোকেদের অবাধে অপরাধ করতে দিয়ে যেকোন ভিন্নমতের উপরে জিঘাংসা নিয়ে চড়াও হলেই হাসিনা খুশী।
পুলিশ রায়হানের হত্যাকান্ডকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রচার করেছে যে রায়হান ছিলো একজন ছিনতাইকারী এবং ছিনতাই করে ধরা পড়ার পরে তাকে গণপিটুনি দেয়ায় সে নিহত হয়। কিন্তু যেই এলাকায় রায়হান গণপিটুনি খেয়েছে বলে পুলিশ দাবী করেছে সেই এলাকার সব সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোন ছিনতাই বা গণপিটুনির ঘটনা দেখা যায় নাই।
বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে পুলিশ পেশা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পেশা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার চ্যাম্পিয়ন বাহিনী হিসেবেও এই বাহিনী তার দুর্নাম কুড়িয়েছে।
চরম দুর্নীতিগ্রস্থ মানবাধিকার লংঘনকারী এই বর্বর পুলিশবাহিনী বাংলাদেশের প্রগতিশীল রুপান্তরের শত্রু। এই পুলিশবাহিনীর সংস্কারও সম্ভব নয়। ফ্যাসিস্ট জামানার অবসানের পরে বাংলাদেশে এই উপনিবেশিক শাসনের উত্তরাধিকার পুলিশবাহিনীকে ডিসব্যান্ড করে স্বাধীন জনগণের পুলিশবাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের জনগনের নাগরিক ও মানবিক অধিকারই শুধু হরণ করা নয়। শেখ হাসিনা রিপাবলিকের সকল ইন্সটিটিউশন ধ্বংস করার সাথে সাথে পুলিশ নামের ইন্সটিটিউশনকেও ধ্বংস করেছে। এই ক্ষতির তুলনা নেই।
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৫৩ জন। আর এ পর্যন্ত নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের অধীনে মামলা হয়েছে ১৭টি।
পুলিশের এমন অত্যাচার দেখলে মনেই হতে পারে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এমন সাহস কই পায়। খুব সাধারন উত্তর। যে দেশের সরকার হত্যার লাইসেন্স দেয় সেখানে আলাদা করে সাহস জোগাড় করতে হয় না। সরকার ক্ষমতায় থাকতে সবাইকে পুষছে। কারও অন্যায় ধরলে অন্যদিক থেকে আর একজন অন্যায় খুজে বের করবে। আর সেই ভয়ে সরকার পুলিশের এই হত্যা কান্ড দেখে চুপ থাকে। কারন তাদের তো বলার কিছু নেই।