সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে ট্রাম্প–সমর্থকেরা

কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই স্থানীয় সময় গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্য থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত সমাবেশ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি নগরীতে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কার্যত নীরব। টুইটার, ফেসবুকসহ প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিষিদ্ধ করার পর ট্রাম্পের কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছে না কেউ। গতকাল ট্রাকে করে তাঁর মালপত্র হোয়াইট হাউস থেকে আরেক দফা সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটন ডিসিতে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে ট্রাম্পের কোনো সমর্থক দেখা যায়নি। হোয়াইট হাউসসংলগ্ন এলাকায় মেশিনগান হাতে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। নগরীতে কড়া তল্লাশি ছাড়া প্রবেশের কোনো সুযোগই নেই। ট্রাম্প–সমর্থকদের সশস্ত্র সমাবেশের হুমকির মুখে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভার্জিনিয়া সিটিজেন ডিফেন্স লিগ নামের রক্ষণশীল একটি গ্রুপ বলেছে, তারা ওয়াশিংটন ডিসির পাশের রাজ্য ভার্জিনিয়ায় জড়ো হচ্ছে। অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়া তাদের অধিকার। স্থানীয় সময় আজ সোমবার তারা সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির অদূরে রিচমন্ডহিল এলাকায় সশস্ত্র সমাবেশ করার হুমকি দেওয়ায় সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে, যথাযথ অনুমতি ছাড়া অস্ত্র নিয়ে এমন মহড়া রুখে দেওয়া হবে।

ওহাইও অঙ্গরাজ্যের কলম্বাস নগরীতে স্টেট হাউসের সামনে ২৫ জন বন্দুকধারী গতকাল দুপুরে সমাবেশ করে। পুলিশের কড়া পাহারার কারণে সমাবেশে কোনো উত্তেজনা বা সহিংসতা দেখা যায়নি। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা বলছে, আমেরিকার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য তাদের এই সমাবেশ। এই সমাবেশের সঙ্গে ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই।

হেন্সি লোক নামের এক বিক্ষোভকারী নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ওহাইওতে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী লোকজনকে তাঁরা একত্র করার চেষ্টা করছেন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং সবার জন্য সাম্য তাঁদের লক্ষ্য।

টেক্সাস, অরাগন ও মিশিগানের রাজধানীতে ট্রাম্প–সমর্থকদের সমাবেশ ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ট্রাম্প–সমর্থকদের সশস্ত্র সমাবেশের হুমকির মুখে সর্বত্র সতর্কতা রয়েছে। পুলিশ ও ন্যাশনাল গার্ডের উপস্থিতিতে নগরীগুলো শান্তই ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প সমর্থকেরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প সমর্থকেরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ১৯টি অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত ন্যাশনাল গার্ড ও পুলিশের জোর নজরদারি চলবে।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার শেষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প। যাওয়ার আগে ট্রাম্প কোনো বক্তব্য দেবেন কি না, তা নিশ্চিত না।

ক্রমাগত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করার অভিযোগে টুইটার ট্রাম্প–সমর্থক আইনপ্রণেতা মারজুরি টেইলার গ্রিনের অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এই আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের সমর্থক। তিনি শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থী সংগঠন কিউঅ্যানোনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করেন। চরমপন্থী দলটি মনে করে, ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শয়তানের অনুসারীরা যুক্তরাষ্ট্র ক্রমে দখল করে নিচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঈশ্বর ত্রাণকর্তা হিসেবে পাঠিয়েছেন।

কংগ্রেসওম্যান মারজুরি গ্রিন ট্রাম্পের নির্বাচনে কারচুপির ভুয়া দাবি ও শ্বেতাঙ্গ চরমপন্থীদের বার্তা ক্রমাগত প্রচার করায় টুইটারের পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।বিজ্ঞাপন

মারজুরি গ্রিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, রক্ষণশীল আমেরিকানদের ভয় পেলে চলবে না। নিজেদের মত প্রকাশ করে যেতে তিনি রক্ষণশীলদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানিমূলক বার্তা প্রচারের জের হিসেবে টুইটার গত সপ্তাহেই তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রাম্পের ৭০ হাজারের বেশি সমর্থকের অ্যাকাউন্ট টুইটার বন্ধ করেছে।

ওহাইওতে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী লোকজনকে তাঁরা একত্র করার চেষ্টা করছেন। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং সবার জন্য সাম্য তাঁদের লক্ষ্য।

হেন্সি লোক, বিক্ষোভকারী

৬ জানুয়ারি উত্তরসূরি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণে থাকছেন না ট্রাম্প। তবে বুধবার বেশ সকালে ২১ বার সামরিক তোপধ্বনি আর লাল কার্পেটে হেঁটে ট্রাম্প শেষবারের মতো হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। হোয়াইট হাউসের কর্মচারীরা এমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে যাওয়ার আগে সামরিক স্থাপনা জয়েন্ট অ্যান্ড্রু বেইসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করবেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা অভিশংসন কার্যকর করার জন্য প্রস্তাবটি কখন সিনেটে উপস্থাপন করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তাঁর প্রথম আইনি পদক্ষেপ হবে অভিশংসন নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করা।

সিএনএন বলছে, প্রথম দফা অভিশংসনে ট্রাম্পের পক্ষে যেসব আইনজীবী লড়েছিলেন, তাঁরা এ ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ আইনজীবী, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি জানিয়েছেন, তিনি থাকবেন। রুডি জুলিয়ানিকে গত শনিবার হোয়াইট হাউসে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়। যদিও ফি পাওয়া নিয়ে জুলিয়ানির সঙ্গে ট্রাম্পের মতবিরোধ রয়েছে।

ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের মুখপাত্র হোগান গিডলি এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো তাঁর অভিশংসন মোকাবিলার জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ করেননি।

বাইডেন হ্যারিস প্রশাসনে হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর কেইট বেডিংফিল্ড জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাপিটল ভবনের বাইরের পশ্চিম এলাকায় জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ক্যাপিটল হিলের বাইরের উন্মুক্ত অঙ্গনে বাইবেলে হাত রেখে আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন শপথ নেবেন বুধবার দুপুরে।

কঠিন এই সময়ে উন্মুক্ত এই শপথ অনুষ্ঠান মার্কিন জনগণ এবং বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিবাচক বার্তা দেবে বলে কেইট বেডিংফিল্ড উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *