অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন স্ত্রী বন্যা
লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা আজ অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের পরে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেন, কেবল গুটিকয়েক চুনোপুঁটির বিচার করে এবং উগ্রবাদের উত্থান ও এর শিকড় উপেক্ষা করার মাধ্যমে অভিজিতের হত্যা এবং এর আগে ও পরে একের পর এক ‘ব্লগার, প্রকাশক এবং সমকামীদের’ হত্যার ন্যায়বিচার হয় না।
বন্যা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতিটি আপলোড করেছেন। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে অভিজিৎ ও বন্যার ওপর হামলায় অভিজিৎ নিহত হন, আহত হন বন্যা।
অভিজিৎকে হত্যার দায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের পাঁচ সদস্যকে ঢাকা ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড ও অপর একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বন্যা বলেন, প্রধান দুই অপরাধী, শীর্ষ কমান্ডার সৈয়দ জিয়াউল হক এবং আমাদের ওপর হামলাকারী জঙ্গি গোষ্ঠীর শীর্ষ কর্মী আকরাম হোসেন এখনও ধরা পড়েনি।
গত সপ্তাহে (অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার রায় অনুযায়ী) আমরা জানতে পেরেছি যে অভিজিৎ ও আমার ওপর হামলার পরে আট মাস ধরে জিয়াউল হক অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ লেখক ও প্রকাশকদের হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। এরপরও, বাংলাদেশ সরকার তাকে কারাগারে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, বলেন তিনি।
বন্যা বলেন, আমি কোনোভাবে বেঁচে যাই। পরে, আরও এক বছর ধরে এরকম হত্যাকাণ্ড চলতে থাকে।
বিবৃতিতে বন্যা বলেছেন, গত ছয় বছরে বাংলাদেশের এই মামলার তদন্তকারীদের একজনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। যদিও আমি এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী এবং হামলার শিকার।
বন্যা বলেন, জানুয়ারিতে মামলা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রকাশ্যে অসত্য বলেন। তিনি বলেন যে আমি মামলায় সাক্ষী হতে রাজি নই। সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের সরকার বা রাষ্ট্রপক্ষের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
তবে, সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান দ্য ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেন যে বন্যাকে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর তলব করে ৩০ ডিসেম্বর সাক্ষী হিসেবে হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছিল।
বন্যা মামলার তদন্তের কিছু বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ এবং আমাকে একদল বিজ্ঞানবিষয়ক লেখকের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। যারা সেটির আয়োজন করেছিলেন,তারা আমাদের কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়েছিলেন। অবশেষে, সন্ধ্যায় আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। এরপর আমাদের ওপর হামলা হয় এবং অভিজিৎ নিহত হন। সেই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিষয়ে কি কখনও তদন্ত করা হয়েছে? হলে তাতে কী জানা গেছে- বলে প্রশ্ন রাখেন বন্যা।
হামলাকারীদের একজনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বন্যা।
বন্যা বলেন, সভ্য দেশগুলোতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলতে পারে না। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ মুকুল রানা ‘শরীফ’ কে বিচারবহির্ভূতভাবে (সাধারণত বাংলাদেশে ‘ক্রসফায়ার’ বলা হয়) হত্যা করে। জানা যায়, তিনি ছিলেন আমাদের ওপর হামলাকারী জঙ্গি গোষ্ঠীর শীর্ষ কর্মী। হত্যার আগে শরীফ কয়েক মাস ধরে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। শরীফকে কেন হত্যা করা হয়- প্রশ্ন রাখেন বন্যা।
তিনি বলেন যে, তাদের ওপর হামলার পর থেকে বাংলাদেশের সরকার আরও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে। বাকস্বাধীনতা আরও সীমিত হয়ে গেছে। মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, অ্যাকটিভিস্টদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ও তার পরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর, লেখার জন্য ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের নিয়মিতভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্রমেই মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ইসলামী দল হেফাজতে ইসলামের বন্ধু হয়ে উঠছেন। তারা ২০১৪ সালে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের ‘হত্যার’ দাবি করেছিল।
গত সপ্তাহে দীপনের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হত্যাকারীদের একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে দেশে ব্লগার,প্রকাশক ও সমকামীদের হত্যার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয় বলে দোষী সাব্যস্ত একজন জবানবন্দি দেন।
‘আমি জানতে চাই, এই অর্থের প্রবাহের বিষয়ে কে তদন্ত করেছে? কেউ কি করেছে? আমরা যদি হত্যার মূল খুঁজে না পাই কিংবা অর্থের উৎস না পাই, তাহলে এই রায় দিয়ে কী হবে?’