ইভিএমে নৌকার বাইরে ভোট দিলে ধরে ফেলা যায়

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী ওরফে নয়ন বলেছেন, ‘ইভিএম এমন এক সিস্টেম, নৌকার বাহিরে কেউ ভোট দিলে ধরি হালান যায়। চিটাগাং (চট্টগ্রাম) এক কেন্দ্রে ইভিএমে নৌকা পেয়েছে ২ হাজার ৩০০ ভোট। এক ভোট পান ধানের শীষ। পরের দিন এ ভোট কে দিছে, ওই ওয়ার্ডের নেতারা তারে ধরি হালান। কত নম্বর ভোট নৌকার বাহিরে গেছে, তা ধরি হালা যায়।’

নুর উদ্দিন আরও বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত, মেয়র পদে ভোট হবে উন্নয়নের জন্য। আর কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নিরপেক্ষ। তারের মতো সোজা।’

গত বুধবার বিকেলে লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর কর্মিসভায় নুর উদ্দিন এসব কথা বলেন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর সেকান্দর সফি একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত ওই সভায় তিনি ২৩ মিনিট ধরে বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া তিনি বুধবার সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের পথসভায় বক্তব্য দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম মেজবাহ উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি) আসনের সাবেক সাংসদ আবদুল্লাহ আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন প্রমুখ।

এ সময় নুর উদ্দিন চোধুরী আরও বলেন, ‘ইভিএম একটি মেশিন। একুলে কে কোথায় টিপ দেয়, বুঝা যায়। সুতরাং উল্টাপাল্টা টিপ দিয়ে রাজাকার ও খন্দকার মোশতাক হবেন না। যাঁরা এদিন উল্টাপাল্টা টিপ দিবেন, পরের দিন মেশিন চেক করলে সিসি ক্যামেরার মতো বের করা যাবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি রামগতি পৌরসভার নির্বাচন। এখানে মেয়র পদে ৬ জন, কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নির্বাচন ঘিরে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে উত্তেজনা ও শঙ্কা। নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লক্ষ্মীপুর জেলায় এটাই ইভিএমে প্রথম নির্বাচন।

এমন বক্তব্য দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৯টি ওয়ার্ডে সভা করে বক্তব্য দিয়েছি। এমন কথা বলেছি কি না, আমার মনে নেই। রাজনৈতিক মাঠ গরম করার জন্য অনেক সময় মুখে ভুলবশত অনেক কিছুই চলে আসে।’

রামগতি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাহেদ আলী। আর আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন এম মেজবাহ উদ্দিন। তিনি পৌরসভার বর্তমান মেয়র।

বিএনপির প্রার্থী সাহেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ডে সভা করে ভোট কারচুপির কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছেন। ইভিএমে কারচুপি আছে, এটি তাঁর বক্তব্যে প্রমাণিত। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। প্রকাশ্যে তিনি নেতা-কর্মীদের শিখিয়ে দিচ্ছেন আমাদের ওপর হামলা করার জন্য। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাব।’

আওয়ামী লীগ নেতার এ বক্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীন বলেন, ‘ইভিএমে কে কাকে ভোট দিল, তা চিহ্নিত করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি কেন এসব কথা বলেছেন, আমি জানি না। তাঁর বক্তব্য শুনিনি।’

সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা ভোট কারচুপিকে উৎসাহ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, যে এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের ভোট আছে, সেখানে নির্বাচনের আগের দিন গিয়ে শাসিয়ে আসতে হবে, যাতে তারা ঘর থেকে বের না হয়।

এর আগে কুষ্টিয়া ও রাজশাহীতেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অনুরূপ বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *