ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাকের মৃত্যু কারাগারে, গতকালও জামিন পাননি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) রাতে মারা গেছেন। তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে ছিলেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ শরীফ জানান, কাশিমপুর কারাগার থেকে ওই বন্দীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে।
খবর পেয়ে রাতেই মুশতাকের মা–বাবা হাসপাতালে যান। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে মুশতাক আহমেদের মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মুশতাকের স্ত্রী লিপা আক্তার সম্প্রতি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে পরিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন।মুশতাক আহমেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার ছোট বালাপুর এলাকায়। লালমাটিয়ায় স্ত্রী ও বৃদ্ধ মা–বাবার সঙ্গে থাকতেন। তিনি মা–বাবার একমাত্র পুত্রসন্তান। তিনি দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষের উদ্যোক্তা।
মুশতাকের বাবা আবদুর রাজ্জাক রাতে আমাদের সংবাদ দাতাকে বলেন, রাত ৯টার দিকে টেলিফোনে মুশতাকের মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘মুশতাককে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির করা হয়েছিল। সেদিন আমার ভাতিজা তার (মুশতাক) সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সে সুস্থ ছিল।’
গত বছরের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এঁরাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়।কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, ২০২০ সালের আগস্ট মাস থেকে মুশতাক ওই কারাগারে বন্দী ছিলেন।
রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় কাশিমপুর কারাগারে মুশতাক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে যায়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’কারাগারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেপুটি জেলারের বরাত দিয়ে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় মুশতাক অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে থাকা মুশতাকের পরিবারের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেনি। তারপর তারা আমার নম্বর যোগার করে ফোন করে। ফোনে ডেপুটি জেলার আমাকে মুশতাকের মারা যাওয়ার সংবাদ দেন।’
আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘গতকালও হাজিরা দিতে মুশতাক আদালতে এসেছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল তার শরীর খারাপ। কিন্তু জামিন পাননি।’তিনি বলেন, ‘মুশতাক যদি গতকালও জামিন পেতেন তাহলে আমাদের হয়তো এই পরিণতি দেখতে হতো না। একজন আইনজীবী হিসেবে যতটুকু বুঝি যে এ মামলায় মুশতাকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে অভিযোগে জামিন না পাওয়ার কোনো কারণই ছিল না। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি জামিন পেলেন না। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।’
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা এখন উদ্বিগ্ন কার্টুনিস্ট কিশোরকে নিয়ে। কারাগারে থেকে কিশোরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কিশোরের শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আমরা এখন সত্যি তাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন।’