চোট, করোনা—দুঃখটা ইব্রার একার নয়

চোটের কারণে ইউরো খেলার স্বপ্ন ভেঙেছ ইব্রাহিমোভিচের।

চোটের কারণে ইউরো খেলার স্বপ্ন ভেঙেছ ইব্রাহিমোভিচের। ফাইল ছবি

আর কত, বয়স তো অনেক হলো, এবার নতুনদের সুযোগ দিয়ে দল থেকে সরে দাাঁড়ানোটাই ভালো—২০১৬ ইউরো খেলতে এসে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের এমনটাই মনে হয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই তাই ঘোষণা দিয়েছিলেন, টুর্নামেন্টে সুইডেনের শেষ ম্যাচটি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁরও শেষ ম্যাচ।

আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর বছর দুয়েক পর ইব্রার আবার মনে হলো, এখনো তো ফুরিয়ে যাইনি! আবার ফিরে আসতে চাইলেন সুইডেন জাতীয় দলে। কিন্তু কোচ ইয়ান অ্যান্ডারসন তাঁকে ফেরাননি। ৩৯ বছর বয়সেও ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত খেলছেন ইব্রা। এ কারণেই হয়তো তাঁর মনে হয়েছে জাতীয় দলই বা বাদ যাবে কেন! আবার ফেরার ইচ্ছার কথা বললেন এসি মিলানের স্ট্রাইকার।

সুইডেনের স্ট্রাইকার ইব্রাহিমোভিচ।
সুইডেনের স্ট্রাইকার ইব্রাহিমোভিচ।

এবার কোচ অ্যান্ডারসনও তাঁকে ফেরানোর পক্ষে ছিলেন। সুইডেনের কোচ উড়ে গেলেন মিলানে, ইব্রার সঙ্গে কথা বলতে। ইব্রার সঙ্গে আলোচনা শেষে ২০২০ ইউরোর দল দিয়েছেন অ্যান্ডারসন। সেই দলে ছিলেন ইব্রা। যার মানে অবসর ভেঙে আবার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরেছেন মিলানের স্ট্রাইকার। কিন্তু বিধি বাম, গত মাসে হাঁটুতে পাওয়া চোট কেড়ে নিল তাঁর ফেরার স্বপ্ন।

আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া এবারের ইউরোতে খেলতে না পারার কষ্ট শুধু ইব্রার একার নয়। চোট আর কোভিডের কারণে কারও ইউরো খেলার স্বপ্ন একেবারেই শেষ। কেউ আবার এখনো দুলছেন স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কার দোলাচলে। দেখে আসা যাক চোট ও কোভিডের কারণে কাদের ইউরো খেলার স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেল, আর কারাই বা দুলছেন দোলাচলে।

চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা।
চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন কেভিন ডি ব্রুইনা।

চোটের দুঃখ

কেভিন ডি ব্রুইনা, বেলজিয়াম

চেলসির বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের পর বড় একটা অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটির প্লেমেকারকে। রাশিয়ার বিপক্ষে বেলজিয়ামের প্রথম ম্যাচে তো খেলা হচ্ছেই না কেভিন ডি ব্রুইনার, মাঠে ফিরতে দেরি হতে পারে আরও।

ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আরনল্ড ও জো গোমেজ, ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে ঊরুতে চোট পেয়েছেন ট্রেন্ড আলেকজান্ডার-আরনল্ড। সেই চোটে ইউরো খেলার স্বপ্নটাও শেষ লিভারপুলের রাইট-ব্যাকের। লিভারপুলের আরেক ডিফেন্ডার সেন্টার-ব্যাক জো গোমেজের ইউরোতে খেলার স্বপ্ন ভেঙেছে বাঁ হাঁটুর চোটে। তিনি অবশ্য গত নভেম্বর থেকেই মাঠের বাইরে।

মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন, জার্মানি

গত মাসের মাঝামাঝিতে পাওয়া হাঁটুর চোটের কারণে ইউরোতে খেলা হচ্ছে না বার্সেলোনার গোলকিপারের।

স্তেফানো সেনসি, ইতালি

ইন্টার মিলানের মিডফিল্ডার পেশিতে চোট পেয়েছেন সিরি ‘আ’তে দলের শেষ ম্যাচ খেলতে গিয়ে। ২০২০-২১ মৌসুমে বেশির ভাগ সময়েই চোটে থাকা সেনসির ইউরো খেলার স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সর্বশেষ পাওয়া চোটটি।

চোট কেড়ে নিয়েছে ভার্জিল ফন ডাইকের ইউরো খেলার স্বপ্ন।
চোট কেড়ে নিয়েছে ভার্জিল ফন ডাইকের ইউরো খেলার স্বপ্ন।

ভার্জিল ফন ডাইক ও ডনি ফন ডি বিক, নেদারল্যান্ডস

লিভারপুলের অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক সেই অক্টোবর থেকেই মাঠের বাইরে। লিগামেন্টের চোটের কারণে ইউরোতে খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে গেছে ডাচ ডিফেন্ডারের। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার ফন ডি বিক ছিটকে পড়েছেন এ মাসেরই গোড়ার দিকে কুঁচকির চোট নিয়ে।

দানি কার্ভাহাল, আনসু ফাতি ও সের্হিও রামোস, স্পেন

রিয়াল মাদ্রিদের রাইট ব্যাক দানি কার্ভাহাল পেশির চোট পেয়েছেন এপ্রিলের শেষ দিকে। এই চোট তাঁকে মৌসুমের শেষ অংশে তো খেলতে দেয়ইনি, ছিটকে ফেলেছে ইউরো থেকেও। মেনিসকাসের চোট নিয়ে বার্সেলোনার উইঙ্গার আনসু ফাতি গত নভেম্বর থেকেই মাঠের বাইরে। আর রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক ও ডিফেন্ডার সের্হিও রামোস চোটে পড়েছেন গত মাসে। এই চোটের কারণেই ইউরো খেলার স্বপ্ন শেষ রামোসের।

করোনা আক্রান্ত বুসকেতস  (সবার ডানে) কবে মাঠে ফিরতে পারবেন তা এখনো অজানা।
করোনা আক্রান্ত বুসকেতস (সবার ডানে) কবে মাঠে ফিরতে পারবেন তা এখনো অজানা। 

কোভিডের কষ্ট

ইয়াসপার চিলিসেন, নেদারল্যান্ডস

মে মাসের ২৮ তারিখ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ডাচ গোলরক্ষক। ইউরোর দল থেকে ছিটকে গেছেন তিনি এ কারণেই। কোচ ফ্রাঙ্ক ডি বোয়ের ঝুঁকি নিতে চাননি বলেই ১ নম্বর গোলকিপারকে ছাড়াই দিয়েছেন ইউরোর দল।

সের্হিও বুসকেতস ও দিয়েগো লরেন্তে, স্পেন

অধিনায়ক সের্হিও বুসকেতস করোনা পজিটিভ হয়েছেন সপ্তাহখানেক আগে। সুইডেনের বিপক্ষে স্পেনের প্রথম ম্যাচে তিনি খেলতে পারবেন না নিশ্চিত। পরের ম্যাচগুলোয় খেলার জন্য কবে ফিট হয়ে উঠবেন, সেটা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। লরেন্তে করোনা পজিটিভ হয়েছেন দিন তিনেক আগে। তবে পরের দুটি পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে তাঁর। ধারণা করা হচ্ছে তাঁর ফলস পজিটিভ এসেছিল।

দেয়ান কুলুসেভস্কি ও মাতিয়াস সভানবার্গ, সুইডেন

সুইডেনের মাঝমাঠের এই জুটি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার কারণে স্পেনের বিপক্ষে দলের প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না। আর কবে তাঁরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন, সেটাও অজানা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *