‘আবার লকডাউন দিলে ২ কোটি পরিবারকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হবে’
আবার লকডাউন দিলে ২ কোটি পরিবারকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, করোনাকালে দেশের মানুষ কষ্টে আছে, তাদের বাঁচাতে হবে। তাই অন্তত ২ কোটি পরিবারকে মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। রাজনৈতিক বিবেচনা না করে প্রকৃত দরিদ্র পরিবারের মাঝে জরুরিভিত্তিতে অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
শুক্রবার জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল মিলনায়তনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় যুব সংহতি আয়োজিত স্মরণসভা ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, কারো ঘরে খাবার না থাকলে সে কখনোই লকডাউন মানবে না। যার ঘরে ক্ষুধার জ্বালায় শিশু কাঁদবে সে বাইরে বের হবেই। সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় দেশের বাজেট তৈরি হয়। ওই টাকার মালিক দেশের সাধারণ মানুষ।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনা কোনো ছোট বিষয় নয়, সারা পৃথিবী ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবেলা করছে। বাংলাদেশেও সম্মিলিতভাবে করোনা মোকাবেলা করতে হবে। তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, সব রাজনৈতিক দল, সব এনজিও এবং পেশাজীবিদের নিয়ে করোনা মোকাবেলা করুন।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে সরকারকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা মোকাবেলায় আমরা সরকারের যে কোনো কর্মকাণ্ড সফল করতে আগ্রহী।
জাতীয় যুব সংহতি আহ্বায়ক এইচএম শাহরিয়ার আসিফের সভাপতিত্বে এবং জাতীয় যুব সংহতির সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জি এম কাদের আরও বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্র দেশের মানুষকে টিকা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে। কিন্তু আমাদের দেশের টিকা নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। যেখানে ২৭ থেকে ২৮ কোটি ডোজ টিকা দরকার, সেখানে রেডিও টিভিতে সরকার ঘোষণা করছে ৫ লাখ ডোজ, ১০ লাখ ডোজ টিকা আসছে। বাকি টিকা কখন, কোথা থেকে আসবে তা কেউ জানে না। এটা অত্যান্ত হতাশাজনক।
জিএম কাদের বলেন, ভ্যাকসিন হচ্ছে করোনা মোকাবেলার প্রধান অস্ত্র। সবাইকে যত দিন টিকা দেওয়া না যাবে, ততদিন সরকারিভাবে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। আবার লকডাউন দিলে কর্মহীন মানুষের পরিবারকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা দিতে হবে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিটি উপজেলায় হাসপাতাল তৈরি করেছেন। আমরা এক বছরের বেশি আগেই বলেছি, প্রতিটি হাসপাতালে মঞ্জুরীকৃত ডাক্তার, নার্স এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে, দেওয়া হয়নি। প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে বলেছি, কিন্তু সকল হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন এর ব্যবস্থা করা হয়নি। অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগী মারা যাচ্ছে। যাদের টাকা আছে তারা রাজধানীতে এসে বেসরকারি হাসপাতালে চিৎিসা নিচ্ছে। আর যাদের টাকা নেই, তারা বিনা চিকিৎসায় গ্রামে-গঞ্জে মারা যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষেরা করোনা টেষ্ট করতে পারছে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে- সরাকারি হিসাবে তাদের সংখ্যা আসছে না। আইসিইউ থেকে বের করলেই মারা যাবেন মা, কিন্তু তা জেনেও টাকার অভাবে সন্তানরা করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু মাকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বের করছেন। এমন হৃদয়বিদারক অসংখ্য ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন।
বিরোধী দলীয় এ উপনেতা বলেন, বাজেটে খুবই কম টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বাস্থ্য খাতে। আর বরাদ্দের বিশাল অংশই দুর্নীতিবাজরা লুটপাট করে খায়।
তিনি বলেন, যারা মানুষের জানমালের দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছে, তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে শুধু জনসাধারণ নয়, আল্লাহর দরবারেও জবাব দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিটি দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের পাশে ছুটে যেতেন। তাই জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতা-কর্মী করোনাকালে দুঃস্থ মানুষের পাশে আছে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর নেতৃত্বে আমরা পল্লীবন্ধুর স্বপ্নে নতুন বাংলাদেশ গড়বো।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. জহিরুল আলম রুবেল, হারুন আর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় যুব সংহতির যুগ্ম-আহ্বায়ক তারেক এ আদেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, জিয়াউর রহমান বিপুল, মাঈন উদ্দিন মাইনু।