খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার জন্য দাবি বিএনপির

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি নতুন করে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হালকা জ্বর নিয়ে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিএনপি বলছে, নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া, যার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। তবে সরকার বলছে, যে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়া সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন, তাতে তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই।

খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৬ বছর। কয়েক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তাকে ৫৪ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল।

মঙ্গলবার প্রথমে তাকে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

স্বাস্থ্য পরিস্থিতি
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের সদস্য অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, কয়েকদিন ধরে হালকা জ্বর ছিল খালেদা জিয়ার। এ কারণে টেস্ট করার জন্য তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরে উনার একটু লো-গ্রেড ফিভার ছিল। এর মধ্যে দুই-তিন দফা করোনাভাইরাস টেস্ট করা হয়েছে। নেগেটিভ এসেছে উনার রিপোর্ট। এখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে উনার নানারকম শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। রাতে কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে। আজও (বুধবার) বেশ কয়েকটি টেস্ট করা হয়েছে।

ডা: জাহিদ হোসেন বলেছেন, খালেদা জিয়ার পুরনো শারীরিক সমস্যাগুলো আগের চাইতে প্রকট হয়েছে। তিনি বলেন, সবগুলো টেস্টের ফল হাতে আসতে দুয়েকদিন সময় লাগবে। এরপর চিকিৎসা বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

এ দিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর খালেদা জিয়ার যেসব টেস্ট করানো হয়েছে, তার কয়েকটির ফল নিয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা এভারকেয়ার হাসপাতালের গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সাথে বৈঠক করেছেন। সব রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নিয়ে ব্রিফিং করা হবে বলে জানিয়েছেন ডা: জাহিদ হোসেন।

পরিবার কী বলছে?
খালেদা জিয়ার পরিবার বলছে, তার (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যেতে চান তারা। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো আবেদন সরকারের কাছে পাঠানো হয়নি।

খালেদা জিয়া এপ্রিলের শেষ দিকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর মে মাসে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করেছিল তার পরিবার। কিন্তু সরকার ওই সময় অনুমতি দেয়নি।

সরকারের পক্ষে যুক্তি দেয়া হয়েছিল, খালেদা জিয়াকে যে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে, তার প্রধান শর্তই হচ্ছে তিনি নিজের বাসাতে থাকবেন ও তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

বিএনপি কী বলছে?
বিএনপি শুরু থেকেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়ার অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। বুধবার দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) যখন জেলে ছিলেন তিন বছর উনার কোনো ট্রিটমেন্ট হয়নি। এরপর মাঝখানে উনি আবার করোনা আক্রান্ত হলেন। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। তখন তার নানা রকম সমস্যা তৈরি হয়। পোস্ট কোভিড কিছু সমস্যাও ছিল।

তিনি আরো বলেন, আমরা আগেও বলেছি যে তার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি ট্রিটমেন্টের দরকার, দেশে এক জায়গায় তেমন কোনো সেন্টার নেই। তাই দেশের বাইরে অ্যাডভানস সেন্টারে তাকে নেয়া দরকার। এজন্য আমরা দাবি জানিয়েছি যে, তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে দেয়া হোক।

এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মূল শারীরিক সমস্যার মধ্যে রিউম্যাটয়েড আর্থরাইটিস, লিভার ও ডায়াবেটিস অন্যতম বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকেরা।

সরকার কী বলছে?
খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রশ্নে সরকার আগের অবস্থানেই রয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিবিসিকে বলেছেন, বিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে অনুমতি দেয়ার ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেছেন, যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া সাময়িকভাবে মুক্ত রয়েছেন, আগে সেটি বাতিলের আবেদন জানিয়ে তাকে পুনরায় কারাগারে যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।

আইনমন্ত্রী বলেছেন, আবেদন পাবার পর সেটি বিবেচনা করা না করার প্রশ্ন আসবে।

দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড হলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপরে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে তাকে কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরে আরো তিনবার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *