লাল কার্ড, বিতর্কিত পেনাল্টিতে ফাইনালের স্বপ্নভঙ বাংলাদেশের

কেউ গড়িয়ে কাঁদছেন, কেউ রেফারিকে ঘিরে ধরেছেন। ফাইনাল লেখার স্বপ্নটি হাতের মুঠো থেকে মুহূর্তেই হারিয়ে গেল। ৮৬ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ দল। ৮৭ মিনিটে উজবেকিস্তানের রেফারির পেনাল্টির এক বাঁশিই বাংলাদেশের স্বপ্ন ভেঙে দিল। বক্সের মধ্যে নেপালের ফরোয়ার্ড পড়ে যান। উজবেকিস্তানের রেফারির পেনাল্টির বাঁশি। পাশাপাশি ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষকে হলুদ কার্ড। পেনাল্টি থেকে নেপালের অঞ্জন বিস্টা গোল করলে স্কোরলাইন ১-১ হয়।

বাংলাদেশের ১৬ বছর পর সাফ ফাইনাল খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়। উজবেকিস্তানের রেফারির শেষ বাঁশির সাথে সাথে মালে স্টেডিয়াম পরিণত হলো বাংলাদেশের ট্র্যাজেডিতে। গ্যালারিতে থাকা বাংলাদেশের সমর্থকরাও নিথর দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রেসবক্সে থাকা বাংলাদেশী সাংবাদিকরাও নিশ্চুপ।

ম্যাচের ৭৮ মিনিট পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। বাংলাদেশ ফাইনালের পথেই হাঁটছিল। সারা ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত খেলা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর এক ভুলে গোটা দল চরম বিপদে পড়ে। বক্সের বাইরের বল ক্লিয়ার করতে এগিয়ে যান গোলরক্ষক জিকো। ক্লিয়ার করতে গিয়ে তার হাতে বল লাগলে রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখান। ম্যাচের বাকি সময় বাংলাদেশ দশজন নিয়ে খেলে।

জিকো লাল কার্ড দেখায় কোচ অস্কার দ্রুত কয়েকটি পরিবর্তন করেন। বিপলুকে বদলে সিনিয়র গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাকে নামান। ফরোয়ার্ড সুমন রেজার পরিবর্তে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদকে নামান। রানা নামার পরপরই একটি ফ্লাইং সেভ করেন। অভিজ্ঞ এই গোলরক্ষক পেনাল্টি শটের সময় সঠিক দিক ঝাপ দিলেও সেভ করতে পারেননি। দশজন নিয়ে আর জেতা হয়নি বাংলাদেশের। ফলে চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে নেপাল সাফের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে আর বাংলাদেশ চার পয়েন্ট নিয়ে আবার গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিল।

২০০৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশ আর কখনো ফাইনাল খেলতে পারেনি। গতবার নিজেদের মাঠে এই নেপালের কাছে হেরেই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল।

এর আগে কোচ অস্কার ব্রুজন বাংলাদেশ ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে। ফলও মিলেছে মিনেট দশেকের মধ্যে। ম্যাচ শুরুর দশ মিনিট পরেই গর্জে উঠল মালে স্টেডিয়াম। বাঁপ্রান্ত থেকে রাকিব বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। নেপালের ডিফেন্ডার তাকে বাঁধা দিলে পড়ে যান। উজবেকিস্তানের রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজান। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিক থেকে বক্সে জটলার মধ্যে হেড করেন সুমন রেজা। সুমনকে দুই ম্যাচ পর আবারন একাদশে সুযোগ দেন কোচ। সেই সুযোগের পূর্ণ ব্যবহার করেন সুমন। উত্তর বারিধারার হয়ে সদ্য সমাপ্ত লিগে সুমন ছিলেন দেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ সুমনের গোলেই ড্রেসিংরুমে ফেরে।

দ্বিতীয়ার্ধে নেপাল ম্যাচে ফেরার সব চেষ্টাই করেছে। প্রথমার্ধে নায়ক সুমন, দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের নায়ক ও খলনায়ক গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। নেপালের ফরোয়ার্ডদের একের পর এক আক্রমণ প্রতিহিত করেছেন। ৫৫ মিনিটে বক্সের মধ্যে নেপালের ফরোয়ার্ড নবযুগ শ্রেষ্ঠার হেড সেভ করেন গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। আরো বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত সেভ করেন। এত সেভ করার পরও ৭৮ মিনিটে তার ভুলে বাংলাদেশ দশজনের দলে পরিণত হয়। এরপর রেফারির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ফাইনালে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *