নাশকতার অব্যাহতি পেলেন ফখরুলসহ ৩২ নেতাকর্মী

তিন বছর আগে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা নাশকতার মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ৩২ জন নেতা-কর্মীকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ। এই মামলায় হাতিরঝিলের স্থানীয় ছাত্রদল নেতা শামসুল হক খানসহ ২৩ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

গত ১৪ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাতিরঝিল থানা-পুলিশ এই মামলায় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ২৪ আগস্ট নাশকতার অভিযোগে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। এই ধারার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ ৩২ জন নেতা-কর্মী। তবে একই ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দেওয়া পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

মির্জা ফখরুলের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদিন মেজবাহ প্রথম আলোকে বলেন, একই ঘটনায় বিস্ফোরক আইনের বিভিন্ন ধারার অভিযোগ থেকেও মির্জা ফখরুলসহ অন্যদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি এখন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে হাতিরঝিলে বাস ভাঙচুর, হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে বিএনপির নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে হাতিরঝিল থানা-পুলিশ। মামলার এজাহারে নাম থাকা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন।

সাক্ষ্য–প্রমাণ মেলেনি, তাই অব্যাহতির আবেদন
হাতিরঝিল থানা-পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সমাবেশ ছিল। সমাবেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের শীর্ষ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন রাত ৮টা ২৯ মিনিটের দিকে হাতিরঝিলের মগবাজার রেলগেট এলাকায় বিএনপি, জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে গাড়ি চলাচলে বাধা দেন।

খবর পেয়ে পুলিশ রাস্তা অবরোধ না করতে তাঁদের অনুরোধ করে। তবে পুলিশের কথা না শুনে আসামিরা পুলিশের উদ্দেশে ইটপাটকেল ছোড়েন, হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটান। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া নামে বিএনপির এক কর্মীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুর রউফ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, তদন্তকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মওদুদ আহমদ (প্রয়াত), বিএনপির নেতা আমান উল্লাহ, রুহুল কবির রিজভীসহ ৩২ জনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাই তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবদুর রউফ। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আবদুর রউফ ব্যস্ত আছেন জানিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

অব্যাহতিপ্রাপ্ত ৩২ জন
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মওদুদ আহমদ (মৃত), আমান উল্লাহ, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, রুহুল কবির রিজভী, মোশারফ, জামায়াতের সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোস্তফা হ‌ুমায়ূন সরকার, মোতাহার, ছাত্রদল নেতা রুবেল, রাইসুল ইসলাম, মেরাজ, ইমু, সাহান, মাসুদ, রাহিক, পারভেজ, মুন্না, রিপন, রায়হান কবির, আবু সালেহ, শাকিল, আরাফাত, নান্নু মিয়া, কাইয়ুম, রবিউল ইসলাম, এনামুল হক ও সিরাজুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রভুক্ত ২৩ জন
মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া, আওলাদ হোসেন, সালাহউদ্দিন আহম্মেদ, শফিউদ্দিন, সামছুল হক, শেহাব উদ্দিন খন্দকার, রাশেদ বিন সোলাইমান, ইমাম উদ্দিন রিপন, বেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া, মিঠুন পাটোয়ারি, ফারুক, সাব্বির, সজীব, জাফর, শরীফ, ছাত্রশিবিরের কর্মী আতাউর রহমান, যুবদল নেতা মাসুদ পারভেজ, ছাত্রদলের ছানাউল্লাহ, বাপ্পী খান, বিএনপির কর্মী মফিজুর রহমান, শামছুল হক খান, বাপ্পী খান ও অ্যাপোলো।

অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, আসামি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় আরও পাঁচটি নাশকতার মামলা রয়েছে। আওলাদ হোসেন হাতিরঝিল থানার তিনটি মামলার আসামি। শফিউদ্দিন হাতিরঝিল থানার তিনটি মামলার আসামি। রাশেদ বিন সোলাইমান হাতিরঝিল থানার তিনটি মামলার আসামি। এ ছাড়া সালাহউদ্দীন আহম্মেদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে।
যুবদলের সামছুল হকের নামে হাতিরঝিল থানায় আরও তিনটি মামলা রয়েছে।

শিহাবের বিরুদ্ধে আছে ৩টি, মফিজুরের বিরুদ্ধে ৯টি, ইমাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৮টি, ফারুকের বিরুদ্ধে ১৩টি, সাব্বিরের বিরুদ্ধে ১৩টি, সজীবের বিরুদ্ধে ১৩টি, জাফরের বিরুদ্ধে ১৩টি, শরীফের বিরুদ্ধে ১৩টি, ছাত্রশিবিরের আতাউরের বিরুদ্ধে ১০টি, মাসুদ পারভেজের বিরুদ্ধে ১৩টি, ছানাউল্লাহর বিরুদ্ধে ১৩টি এবং যুবদলের বাপ্পীর বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। মামলাগুলোর বেশির ভাগই নাশকতার। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এসব মামলা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *