ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য প্রতারণা: ফখরুল
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ একটি সহযোগিতামূলক কার্যক্ষম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু বিএনপির তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যকে ‘বাজে কথা’ বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, তাদের সহযোগিতার নমুনা হচ্ছে ৩৫ লাখের ওপরে নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, পাঁচ শতাধিক মানুষকে গুম, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আজকের একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য পড়ে শোনান।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আমাদের কোনো প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। বরং উল্টো কাজটি করেছে। যেমন এই করোনা নিয়েই বলি, আমরা বারবার অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা দয়া করে একটা জাতীয় সম্মেলন ডাকেন। সেই সম্মেলনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা এক সঙ্গে কাজ করি। তারও পূর্বে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আমরা বলেছিলাম, আসুন আমরা একসঙ্গে কথা বলি, আলোচনা করে সমস্যাগুলোর সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু তারা কোনো প্রস্তাবই রাখেনি।’
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাতে গিয়েছি। সেখানে গিয়ে যতগুলো বিষয়ে আলোচনা–সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তার একটাও তারা রক্ষা করেনি। তারা গায়েবি মামলা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের সহযোগিতার নমুনা হচ্ছে আমাদের ৩৫ লাখের ওপরে নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সারা দেশে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। পাঁচ শতাধিক মানুষকে গুম, সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছেন। এটা হচ্ছে তাদের সহযোগিতার নমুনা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থার কারণে তাঁর পরিবার থেকে আবেদন করা হয়েছিল সরাসরি সরকারের কাছে, তাঁকে বাইরের দেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার। সেখানেও তারা সহযোগিতা করেনি। সুতরাং ওবায়দুল কাদের সাহেব যখন এ কথা বলেছেন, তখন তাঁর ভাবা উচিত ছিল, তাঁরা কী করেছেন। অপজিশন যাতে না থাকেন, সে কাজটা করেছেন। সুতরাং ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য আমার কাছে প্রতারণা, মানুষকে ভুল বোঝানো এবং মানুষের মধ্যে ভ্রান্তি সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই না।’
‘এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়া দুরভিসন্ধিমূলক’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়েও তারা ( সরকার) একটা চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র করতে যাচ্ছে—যাতে তারা জনগণের পরিচয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমরা এহেন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে তার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আঙ্কটার্ডের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এখানে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ১১% কমে গেছে। এটার কারণটা হচ্ছে, এখানে বিদেশিদের বিনিয়োগ করার কোনো পরিবেশ নেই।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সরকার কেবল বলেই যাচ্ছে এখানে উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়নটা কোথায়? কয়েকটা ব্রিজ তৈরি করা, কয়েকটা উড়ালসড়ক তৈরি করা, এগুলোকে উন্নয়ন বলব নাকি? উন্নয়নটা সেটা, যেটাতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়, অভাব কমে। যেখানে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই কোটি, সেখানে কোন যুক্তিতে উন্নয়ন বলতে পারি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, অনেক সেক্টর আছে, যেখানে বাংলাদেশের প্রচণ্ড রকমের সম্ভাবনা আছে। এখানে ফার্মাসিউটিক্যালসের, বিশেষ করে এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ পটেনশিয়াল একটা জায়গা। তারপরও সরকার সে বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। অবিলম্বে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং এখানে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।
কোথায় লকডাউন
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির অবনতির জন্য সরকারকে দায়ী করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কোথায় লকডাউন। যার যেখানে খুশি যাচ্ছে, যার যেখানে যা খুশি করছে, এমনকি বিয়েও হচ্ছে। অথচ দেয়ার ইজ ব্যান্ড। এটা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা যে আমরা লকডাউন দিচ্ছি, চেষ্টা করছি। আপনি খেয়াল করে দেখবেন “ল অ্যান্ড ফোর্সেস এজেন্সিজ”, যাদের এই লকডাউন ইমপ্লিমেন্ট করার কথা, তাদেরও দেখা যায় না আজকাল।’
এ সময় বিরক্তি প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বলে বলে এখন আর বলতে ইচ্ছা করে না। কী বলবেন, এদের তো চামড়া মোটা। এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কবেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। সে করে নাই। দুর্ভাগ্যজনক উল্টো তারা ডিফেন্ড করছে সবাই সবাইকে। খুব ভালো কাজ করছে। এত ভালো স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাকি আর হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি এবং ভোজ্যতেলসহ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব।