প্রধানমন্ত্রী গ্লাসগো পৌঁছেছেন, কপ২৬ সম্মেলনে ভাষণ দেবেন সোমবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ২৬ বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন এবং অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে দুই সপ্তাহের সফরে রোববার বিকেলে স্কটল্যান্ডের বন্দর নগরী গ্লাসগো পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী সোমবার ১ নভেম্বর উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি কপ২৬-এর মূল অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট রোববার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) গ্লাসগোর প্রেস্টউইক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।

এরআগে রোববার সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারি বিমানের ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর আগামী ১৪ নভেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, তিনি ১-২ নভেম্বর গ্লাসগোতে, ৩-৮ নভেম্বর লন্ডনে এবং ৯-১৩ নভেম্বর প্যারিসে থাকবেন।

বাংলাদেশে আরও সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে তিনি বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যে একটি রোড শো উদ্বোধন করবেন এবং ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২১: টেকসই প্রবৃদ্ধি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা’-এ যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দফতরে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’-র পুরস্কার হস্তান্তর করবেন।

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে অবস্থানকালে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডসহ অন্যান্য রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

যুক্তরাজ্যের প্রিন্স চার্লস এবং বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

গ্লাসগোতে অবস্থানকালে, ১ নভেম্বর (সোমবার) সকালে, প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ ইভেন্ট ক্যাম্পাসের কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে ‘সিএফভি-কমনওয়েলথ হাই লেভেল প্যানেল ডিসকাশন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক একটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন।

শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি’র সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী কপ২৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন এবং ভাষণ দেবেন। শেখ হাসিনা শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি গোটাবায় রাজাপাকসে’র সঙ্গে বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্যাভিলিয়নে ‘একশন এন্ড সলিডারিটি-দ্য ক্রিটিক্যাল ডিকেড’ শীর্ষক বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। একই দিন বিকেলে বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘কপ-২৬’ এর ভিভিআইপি সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় স্কটল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি কর্তৃক আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করবেন।

২ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ প্যাভিলিয়নে ‘ওমেন এন্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। শেখ হাসিনা দুপুরে স্কটল্যান্ডের ফাস্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জনে’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

বিকেলে প্রিন্স চার্লস প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপরেই ইউকে সভাকক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি অষ্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

তিনি সভাকক্ষ-৪ এ ‘ফোর্জিং এ সিভিএফ কপ ২৬ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সী প্যাক্ট’ শীর্ষক সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। এরপরই প্রধানমন্ত্রী ‘ওয়াল্ড লিডার্স সামিট’র সমাপনী পর্বে অংশগ্রহণ করবেন।

সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা স্কটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার অ্যালিসন জনস্টোন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী স্কটিশ পার্লামেন্টে ‘এ বাংলাদেশ ভিশন ফর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রসপারিটি’ শীর্ষক ভাষণ দেবেন।
৩ নভেম্বর (বুধবার) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীগণ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট যোগে গ্লাসগো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
ঐ দিন লন্ডনে পৌঁছার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হোইলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী সেখানে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’, লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের নাগরিক সংবর্ধনাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
৯ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্যারিসের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করবেন।

শেখ হাসিনা ওই দিন এলিসি প্যালেসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে তিনি ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্সের সঙ্গে ফ্রান্সের সরকারি বাসভবন ম্যাটিগননে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ইউনেস্কো সদর দফতরে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর দ্য ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’-র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং একই স্থানে ইউনেস্কোর ৭৫তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন।

শেখ হাসিনা আগামী ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকদের দেয়া সংবর্ধনায় ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রী ১৩ নভেম্বর ঢাকার উদ্দেশে প্যারিস ত্যাগ করবেন এবং ১৪ নভেম্বর সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *