গভমেন্ট ওফ দ্যা মাফিয়া ,ফর দ্যা মাফিয়া,বাই দ্যা মাফিয়া-তারেক রহমান
৭ই নভেম্বর-জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ২০২১’ উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান।
বিপ্লব ও সংহতি দিবস ৭ ই নভেম্বর উদযাপিত হয়ে থাকলেও যুক্তরাজ্য বিএনপি এবার এই দিবসটি ৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দি রয়েল রিজেন্সি অডিটোরিয়ামে আয়োজন করে।এতে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক এবং বিশেষ উপস্থিতি হিসেবে ছিলেন,বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান।সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদের পরিচালনায় আয়োজিত এই সভায় আরো অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও যুক্তরাজ্য শাখার নেতৃবৃন্দ।
সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, এই তিনটি দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের ততকালীন নেতারা ব্যর্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে,ঠিক সেই ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।তিনি বলেন,মাফিয়া সরকার ইতিহাস নিয়ে নানা ভাবে মিথ্যাচার করছে,শহীদ জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়ে আত্নগোপনে চলে যাননি,মাঠে থেকে তিনি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলেন।এটিই সেই ০৭ ই নভেম্বর যে দিনে সিপাহি জনতা মিলে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হতো। কিন্তু মহাজোটের নামে একজোট হওয়া ৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি এখন আর দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করছেনা।বরং দিনটির ইতিহাস বিকৃত করছে।
তারেক রহমান বলেন,জাতীয় জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনটি কেন রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছেনা? বাস্তবতা হলো,যেই বিশেষ দিনগুলোর সঙ্গে দেশের গৌরব ও মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত,৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি সেসব দিনগুলোকে উপেক্ষা কিংবা অবহেলায় পার করে দেয়। দিবসগুলোর তাৎপর্য মানুষকে ভুলিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়।
তিনি বলেন,১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তি পরাজিত হয়েছিলো। এই পরাজিত সেদিন অপশক্তি দেশের গৌরব এবং মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের এই ৭ নভেম্বের সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্য-মানবাধিকার-সামাজিক সুবিচার মুক্তিযুদ্ধের এইসব মূলমন্ত্র বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল শপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি। বাংলাদেশ ফিরে পেয়েছিলো তার আপন ঠিকানা।
সুতরাং,৭ নভেম্বর ‘বাংলাদেশের’ শত্রু মিত্র চেনার দিন।
তিনি আরো বলেন, ইতিহাস বিকৃতির কারণে নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই হয়তো ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলী এবং ইতিহাস কিছুটা অস্পষ্ট। কিন্তু ,২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিডিআর পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা হত্যাযজ্ঞের দিনটির কথা অনেকেরই মনে আছে। ৭ নভেম্বরের মতো এই দিনটিকেও মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দেয়া অপচেষ্টা চলছে। এর কারণ, এইসব দিনগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করলে দেশের জনগণের সামনে মহাজোটের নামে একজোট হওয়া অপশক্তির মুখোশ উম্মোচিত হয়ে পড়বে। দেশের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারীদের চরিত্র জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ভোট ও ভাতের অধিকার বঞ্চিত বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন,এই মূহুর্তে বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।৭৫ এর ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সুতরাং,আর বসে থাকার সময় নেই।এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। অপশক্তি এবং তাদের দোসরদের কবল থেকে বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করতে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি, গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা জাতীয়তাবাদী ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, দেশি-বিদেশী মাফিয়া চক্রের কবল থেকে দেশ পুনরুদ্ধার করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, ক্ষমতাসীন অপশক্তির সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্রে,অসহায় দেশ ও জনগণ। শুধুমাত্র মাতৃভূমির মর্যাদার পক্ষে কথা বলায় ‘আবরার’দের মতো দেশপ্রেমিকদেরকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। যারা বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে সোচ্চার তাদেরকে ‘গুম’ ‘খুন’ ‘অপহরণ’ করা হচ্ছে। কাউকে কাউকে ফেলে রেখে আসা হচ্ছে সীমান্তের ওপারে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও একই ব্যবহার করা হয়েছে। একজন মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতার লোভের কারণে লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশটি যেন সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ায় ফেলানীর মতো ঝুলে থাকা বাংলাদেশ। এখন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন। বেহাত বাংলাদেশ। নির্বাসিত গণতন্ত্র ভুলুন্ঠিত মানবাধিকার,মানুষের স্বাধীনতা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন,দেশে নিত্য প্রয়াজনীয় সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সবকিছু এখন জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। না খেয়ে মরছে মানুষ। টাঙ্গাইলের গোপালপুরে গত জুলাই মাসে একজন মা, শুধুমাত্র টাকার অভাবে নিজের তিন মাস বয়সী শিশু সন্তানকে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসে, কুড়িগ্রামের উলিপুরের এক দম্পতি অর্থের অভাবে তাদের দুইটি শিশু সন্তানকে মাত্র ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। গত অক্টোবর মাসে লালমনিরহাটের আদিতমারীতে একজন মা তার নবজাতক সন্তানকে মাত্র ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এই হলো দেশের বাস্তব চিত্র।
তিনি আরো বলেন, অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রির ঘটনা যুদ্ধবিধস্ত আফগানিস্তান, সিরিয়া কিংবা ইয়েমেনে অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বিচার পরে এসে দেশের অবস্থা এমনটি হওয়ার কথা ছিলোনা।
তারেক রহমান বলেন, নিশিরাতের সরকার গুম খুন-অপহরণ-লুটপাট আর টাকা পাচারে ব্যাস্ত।মাফিয়া সরকারের আমলে গত ১২ বছরে দেশ থেকে ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়ে গেছে । প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রতি বছর দেশে শত কোটি টাকা রেমিটেন্স পাঠায়,আর মাফিয়া সরকারের দুর্নীতিবাজরা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়।
তারেক রহমান বলেন,দেশে গণতন্ত্র নেই মানবাধিকার নেই। মানুষের স্বাধীনতা নেই। মানুষের ভোটাধিকার নেই। অথচ এই সরকার মানুষকে ধোকা দিতে উন্নয়নের ধুয়া তুলছে। উন্নয়ন কাকে বলে? দু’একটা রাস্তা ঘাট কালভার্ট নির্মাণ মানেই কি উন্নয়ন,প্রশ্ন তারেক রহমানের।তিনি বলেন,গত আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান,ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রকাশিত একটি রিপোর্টে দেখা যায়,নিরাপত্তার দিক থেকে বিশ্বের ৬০টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ৫৪। অপরদিকে বিশ্বের কোন শহরগুলো বসবাসের জন্য বেশি উপযোগী,এমন ১৪০ টি শহরের মধ্যে বসবাসযোগ্য বিবেচনায় অযোগ্য শহর হিসেবে ১৪০ নম্বরে রয়েছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। আর রাজধানী ঢাকার অবস্থান ১৪০টি দেশের মধ্যে ১৩৭তম।
তারেক রহমান আরো বলেন, গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে এমন একজন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন যিনি নিজেই সুন্দরবন ধ্বংস করে পরিবেশ বিনষ্টের দায়ে অভিযুক্ত।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন,স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগ পর্যন্ত সারাদেশে যে ধরণের অরাজক পরিস্থিতি ছিল এখন তার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান।গুম-খুন-
অপহরণ আর ব্যাভিচার-অবিচারের মাধ্যমে যারা এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রয়েছে, সারা বিশ্বে এই সরকারটির পরিচয়, গভর্মেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া, বাই দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া। এই মাফিয়া গোষ্ঠী দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের আইন বিভাগ শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ, এই প্রতিটি বিভাগকেই অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি নভেম্বর মাসেই একটি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির হাইকোর্টে আপিল নিস্পত্তির চার বছর আগেই যশোর কারাগারে ওই দুই ব্যক্তির ফাঁসি কার্যকর করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ ফাঁসি আগে, বিচার পরে, এই হলো দেশের বিচার বিভাগের অবস্থা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিডিআর পিলখানায় সেনা হত্যাযজ্ঞের দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করবে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমানে দেশ এক গভীর চক্রান্তের কবলে। দেশে এখন শুধু গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার কিংবা মানুষের স্বাধীনতাই ভুলুন্ঠিত নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাই এখন হুমকির সম্মুখীন। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর যারা দেশকে উল্টো পথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল, ২০০৭ সালের কথিত ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে তারা সাময়িকভাবে সফল হলেও পিছিয়ে পড়েছে দেশ ও জনগণ।
তিনি বলেন, তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেন ছিল দেশে বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ইমেজ ক্ষুন্ন করতে একটি ধারাবাহিক চক্রান্তের কুফল। একটি ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট তৈরী করতেই দেশে জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়া হয়। ২০০৪ সালে ঘটানো হয় ২১ আগস্ট। ২১ আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘একুশে আগস্ট’ এবং ‘ওয়ান ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা। সেই ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এরপরই ঘষেটি বেগম, রায়দূর্লভ, আর জগৎশেঠদের মতো মীরজাফর চক্রটি প্রথম আঘাতটি হেনেছিল দেশের সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর উপর। এই মীরজাফর চক্রের ষড়যন্ত্রেই বিচারবিভাগকে ব্যবহার করে জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে চক্রান্তের বেড়াজালে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
তাদের এমপি মন্ত্রীরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে,যুক্তরাষ্ট্র কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে নগদ টাকায় বাড়ী কিনছে,
ইনশা’আল্লাহ একদিন এই লুটতরাজদের জনগণের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে,জাতীয় এই বিপ্লব ও সংহতি দিবসের স্লোগান হোক ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’।