ইভ্যালির লকার ভেঙে কি পাওয়া গেল?

রাজধানীর ধানমন্ডিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির কার্যালয়ে আজ সোমবার বিকেলে দুটি লকার ভাঙা হয়েছে। সেখানে পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই, ফাইলপত্র ও আড়াই হাজার টাকা।

প্রতারণাসহ নানা অভিযোগে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেল ও তাঁর স্ত্রী কোম্পানির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তাঁরা দুজন এখন কারাগারে।

হাইকোর্টের নির্দেশে গত ১৮ অক্টোবর ইভ্যালির পরিচালনার দায়িত্ব নেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ। ওই পর্ষদ গত তিন মাসে নয়টি বোর্ড সভার পাশাপাশি ইভ্যালির অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারে নানামুখী কার্যক্রম নিয়েছে। পর্ষদ এ পর্যন্ত সিটি ও সাউথইস্ট ব্যাংকে থাকা ইভ্যালির দুটি অ্যাকাউন্ট এবং ২৪টি গাড়ি ও ৯টি গুদামের সন্ধান পেয়েছে।

নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, পর্ষদের পাঁচ সদস্য বেশ কয়েকবার কারাগারে গিয়ে ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা রাসেলের কাছে লকারগুলোর কম্বিনেশন জানতে চান। তবে তাঁরা সে কম্বিনেশন জানতে ব্যর্থ হন। এরপর পর্ষদ লকার ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। আজ লকার ভাঙার সময় ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফসিয়া সিরাত উপস্থিত ছিলেন।

বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ১৪ নম্বর সড়কের বাড়ির তিনতলায় ইভ্যালির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। প্রথম লকারটি ভাঙা শুরু হয় সোয়া তিনটার দিকে। লকারটি কাটতে গিয়ে একে একে নষ্ট হয় পাঁচটি ব্লেড। ছয় নম্বর ব্লেডে কাজ হয়। লকার থেকে বের করা হয় মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৯৭টি ও সিটি ব্যাংকের ১০টি চেকবই। এ ছাড়া ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ কিছু পারিবারিক কাগজ পাওয়া যায়।

এ সময় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘দামি কিছু নেই, সব ফালতু।’
ভবনটির নিচতলায় ইভ্যালির আরেকটি কক্ষ আছে। সেখানে এরপর যায় দলটি। ঘরটির ভেতরে অসংখ্য কাগজ, খাম, ভিজিটিং কার্ড, ম্যাগাজিন পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে থাকা আরেকটি লকার খোলা শুরু হয় বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে। সাড়ে চারটার দিকে লকারটি খোলা হয়। দ্বিতীয় লকারটি খুলে ২ হাজার ৫৩০ টাকা, ইস্যু করা কিছু চেক, ফাইলপত্র, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকসহ অসংখ্য ব্যাংকের চেক।

লকার খোলার সময় প্রতিষ্ঠানটির চার থেকে পাঁচজন কর্মকর্তা ছিলেন। তবে তাঁরা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

দুই ব্যাংকে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা

দুটি লকার খোলা শেষে ইভ্যালির নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে জানানো হয়, সাউথইস্ট ও সিটি ব্যাংকে ইভ্যালির ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এ টাকা উত্তোলনের অনুমতি মিলেছে। ইভ্যালি কার্যালয় ও গোডাউনে ১৫ নিরাপত্তাকর্মীসহ ৩০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাভারের তিন গোডাউনে নিরাপত্তার জন্য ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইভ্যালির সার্ভারটি বন্ধ হয়ে আছে। সার্ভারটি চালায় আমাজন ডটকম। তারা ৬ কোটি টাকা পাবে। এ টাকা পরিশোধ না করা হলে সার্ভার খুলবে না। সার্ভার ছাড়া কোনো গ্রাহক ইভ্যালির কাছে কত টাকা পায়, কার মালামাল কোনটা, কে মাল দিয়েছে, তা জানা সম্ভব না। তিনি বলেন, এই সার্ভার উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব ব্যাপার। এ বিষয়ে আমাজনের সঙ্গে দর–কষাকষি চলছে।

ইভ্যালির সম্পদের সঙ্গে দেনার হিসাব মেলাতে হবে উল্লেখ করে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, গেটওয়েতে কত টাকা আছে, তা জানা নেই। তবে নগদ, বিকাশসহ ৫টি গেটওয়েতে ২৬ কোটি টাকা আছে। সেখান থেকে ক্রেতাদের কিছু পাওনা দেওয়া যেতে পারে, তবে হাইকোর্টের আদেশক্রমে। এটা হাতে আসার কিছু প্রক্রিয়া আছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দেওয়া যাবে। তিনি বলেন, সাভারের গোডাউনগুলোতে ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মুঠোফোনসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্র আছে। আদালতের নির্দেশক্রমে এগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

ইভ্যালির নতুন পর্ষদ আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটির ২৪টি গাড়ির মালিকানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৬টি ভ্যান। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি বিলাসবহুল। যেগুলোর অবস্থা ভালো, সেগুলো প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি করা হবে। পুরোনো গাড়িগুলো নিলামে দেওয়া হবে বা ভাড়া দেওয়া হবে।

ইভ্যালির ২ ধরনের পাওনাদার

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ইভ্যালির পাওনাদার দুই ধরনের। একদল যাঁরা ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্য কিনেছেন, আরেক দল সাপ্লাইয়ার বা মার্চেন্ডাইজার।

ইভ্যালির বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন জানান, যাঁরা ক্রেতা, তাঁদের টাকা আগে দেওয়া হবে। মার্চেন্ডাইজারদের টাকা পরে দেওয়া হবে। এর জন্য কোম্পানি আইনের বিধান মানতে হবে। এটা সাত দিনের ব্যাপার নয়।

টাকা পাচারের আন্দাজ পর্ষদের

ইভ্যালি ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শামসুদ্দিন বলেন, ‘এর জবাব দেওয়া কঠিন। ব্যাংকে যত টাকা পেয়েছি, তাতে টাকা পাচারের বিষয়টি আন্দাজ পেয়েছি। ধারণা করছি, টাকা পাচার হয়ে থাকতে পারে। অডিট হলে তখন বিষয়টি জানা যাবে।’

গ্রাহকেরা কত দিনের মধ্যে টাকা পাবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নিরীক্ষা করতেই ছয় মাস সময় লাগবে। এরপর পাওনা পরিশোধের বিষয়টি আসবে।
শামসুদ্দিন জানান, রাসেল দম্পতি প্রতি মাসেই দুবাই যেত। লকারের খামে টাকা ছিল বোঝা গেছে, যা এখন নেই। এই ভবনমালিক ইভ্যালির মালামাল, আসবাব নিয়ে গেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।