গ্যাসের দাম দুই চুলায় ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে ২১ শত টাকা করার প্রস্তাব

গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে গণশুনানির তারিখ নির্ধারণ করতে আজ রবিবার বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে গণশুনানির চূড়ান্ত তারিখ ঠিক করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল।

বিইআরসির চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এলেও এখন মূলত গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি হবে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়টি পরে দেখা হবে।

কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, কমিশন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সমাধান করতে চায়। গ্যাসের দাম সমন্বয় হলে তার প্রভাব বিদ্যুতের ওপরও পড়বে। গ্যাসের দরের বিষয়ে একটি ধারণায় পৌঁছা গেলে তখন বিদ্যুতের প্রস্তাবের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়াতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে খরচ বেড়ে গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ২.১৩ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ টাকায়। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, কয়লার মূসক বৃদ্ধির কারণে ২০২২ সালে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৪.২৪ টাকায়।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্যাসের দর গড়ে ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করেছে পেট্রোবাংলা। এতে বলা হয়েছে, বিক্রয়মূল্য না বাড়লে বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা লোকসান হবে।

জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা অতিরিক্ত। বিইআরসিকে তাদের ব্যয়-ভর্তুকির হিসাবে কোনো গরমিল আছে কি না, অতিরঞ্জিত করা হয়েছে কি না—সব কিছু খতিয়ে দেখতে হবে। আরেকটি হচ্ছে সিস্টেম লস দেখিয়ে পুরো গ্যাসের সিস্টেম থেকে গ্যাস চুরি হচ্ছে, সেটি বন্ধ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে দাম বাড়াতে হবে।

ম. তামিম বলেন, ‘গ্যাসের দাম কতটুকু বাড়ালে অর্থনীতিতে কী পরিমাণ প্রভাব পড়তে পারে, এটি বুঝে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ গ্যাসের দাম যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। আশা করছি, সরকার এসব বিষয় চিন্তাভাবনা করেই দাম বাড়াবে। ’

বিইআরসি হচ্ছে দাম চূড়ান্ত করার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। তারা আবেদন পাওয়ার পর প্রথমে যাচাই-বাছাই করে দেখে। আবেদন যথাযথ হলে গণশুনানি করে দর ঘোষণা করা হয়। পাইকারি দাম বাড়ানো হলে বিতরণকারী কম্পানিগুলো সেটাকে ভিত্তি ধরে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়ে থাকে।

গত মাসে পেট্রোবাংলা ও গ্যাস বিতরণকারী কম্পানিগুলো প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গড়ে ১১৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।   আবাসিকের ক্ষেত্রে দুই চুলায় ৯৭৫ থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ১০০ টাকা, মিটার আছে এমন চুলায় প্রতি ঘনমিটার ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা করতে চায় কম্পানিগুলো। শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা এবং ক্যাপটিভে (শিল্প-কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রায় ৬৯ শতাংশ বাড়াতে বিইআরসিতে প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।