২৮ দিন পর শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের আশ্বাসে আস্থা রেখে তাঁরা আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আজ রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ, ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর আহবানও জানান তাঁরা।

উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনার ২৮ দিন পর গতকাল শনিবার দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। শিক্ষামন্ত্রী গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে যাওয়ার পর তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন।

গতকাল রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘দাবি পূরণে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। আমরা চাই, কাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হোক। বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিকভাবে চলুক, যাতে শিক্ষার্থীদের সেশন জটে পড়তে না হয়। ’গতকাল উপাচার্যের দপ্তরসহ বেশ কয়েকটি ভবনের দেয়ালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আঁকা উপাচার্যকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক স্লোগান, দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়।

শিক্ষামন্ত্রীর সফরের পর গতকাল সারা দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকে ফলপ্রসূ দাবি করে বলা হয়, ‘শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ছয়টি দাবি ও দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ভিসির পদত্যাগ। মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যকে জানানো হবে। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ’

শিক্ষামন্ত্রী কয়েকটি দাবি দ্রুত পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা দুটি মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের বন্ধ করে দেওয়া মোবাইল সিম ও মোবাইল ব্যাংকিং তিন-চার দিনের মধ্যে সচল করে দেওয়া হবে। ’

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘পুলিশের স্প্লিন্টারে আহত সজল কুণ্ডুসহ অনশনকারী সব শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা চলবে। মন্ত্রী সজল কুণ্ডুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাঁর চাকরির ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন। ’

২৮ দিন পর উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ : ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনার ২৮ দিন পর এ ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ’

বিবৃতিতে উপাচার্য আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। ’

মুছে ফেলা হচ্ছে দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি : শিক্ষামন্ত্রীর সফরের পরদিন গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা ব্যঙ্গচিত্র, দেয়াল লিখন, গ্রাফিতি মুছে ফেলা শুরু হয়েছে। গতকাল ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, প্রশাসনিক ভবন-২-এর (উপাচার্যের দপ্তর) দেয়ালের সব অঙ্কন মুছে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া লাইব্রেরি ভবন, আইসিটি ভবনসহ বেশ কয়েকটি ভবনের দেয়ালের অঙ্কন আংশিক মুছে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শিক্ষামন্ত্রী দেয়ালের লেখা মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোর লেখা মুছে ফেলতে বলেছেন। ’