আরবের প্রথম নারী হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিতে জাবেউর
গত উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন ওন্স জাবেউর। আরবের প্রথম নারী হিসেবে ওই কীর্তি গড়ে নাম লিখিয়েছিলেন ইতিহাসের পাতায়। এবার নিজেকেও ছাড়িয়ে গেলেন এই তিউনিসিয়ান টেনিস তারকা। আরবের প্রথম নারী হিসেবে উইম্বলডন তো বটেই, যেকোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে উঠার অনন্য নজির গড়লেন তিনি।
কোয়ার্টার ফাইনালে মারি বুজকোভাকে ৩-৬, ৬-১ ও ৬-১ গেমে হারিয়েছেন জাবেউর। ইতিহাস গড়া এই জয়ের পর উচ্ছ্বসিত আরব টেনিস তারকা। কারণ তার আগে আরবের টেনিস খেলোয়াড়দের দৌড় ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে পর্যন্ত।
জাবেউরের টেনিসে পথচলা অনেকদিনের। ধীরে ধীরে নিজেকে শীর্ষ পর্যায়ের উপযোগী করে গড়ে তুলেছেন তিনি। ২০১১ সালে প্রথমবার কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা জেতার স্বাদও পেয়েছিলেন। যদিও সেটা ছিল জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ওই বছরই তিউনিসিয়ায় শুরু হয়েছিল ‘আরব বসন্ত’। একনায়কতন্ত্রকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ফেরানোর সেই আন্দোলন শেষ হলেও, জাবেউরের জীবনে বসন্ত এখনও শেষ হয়নি। সামনে তাকে উইম্বলডনের ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে নামতে হবে।
তিউনিসিয়ার রক্ষণশীল সমাজ থেকে ওঠে আসা জাবেউরের টেনিস খেলোয়াড় হওয়ার জন্য প্রতিকূলতা পাড়ি দিতে হয়েছে। যেখানে নারীদের ছোট পোশাক পরা একপ্রকার নিষিদ্ধ, সেখানে টেনিসের মতো খেলায় নাম লেখানো মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু সমস্ত চোখরাঙানি উপেক্ষা করে ঠিকই নিজের পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে তার মা রিধা জাবেউর তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন শুরু থেকেই। একসময় রিধা নিজেও শখের টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। তার উৎসাহেই মাত্র ৩ বছর বয়সে টেনিসে হাতেখড়ি জাবেউরের।
টেনিস খেলা শুরু পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি জাবেউরকে। ১৩ বছর পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে টেনিস শেখার পর তার মা রিধা তাকে নিয়ে রাজধানী তিউনিসে পাড়ি জমান। সেখানে জাতীয় ক্রীড়া বিদ্যালয়ে চলতে থাকে তার টেনিস শিক্ষা। ধীরে ধীরে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটতে থাকে। এমনকি ইউরোপের বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের মতো দেশ থেকেও খেলার জন্য ডাক পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের দেশ ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে রাজি হননি জাবেউর।
২০০৭ সাল থেকে জুনিয়র সার্কিটে খেলা শুরু করেন জাবেউর। এরপর ধীরে ধীরে বড়দের টেনিসে পা পড়ে তার। ২০১৭ সালে নারীদের টেনিসে প্রথম ১০০-তেও ঢুকে পড়েন তিনি। ২০২০ সালে তিনি প্রথম বড় ধরনের সাফল্য পান। সেবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথম দুই রাউন্ডে জোহানা কন্টা ও ক্যারোলিন গার্সিয়াকে হারানা তিনি। এরপর তৃতীয় রাউন্ডে হারিয়ে দেন সাবেক শীর্ষ বাছাই ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে। ওই ম্যাচটিই আবার ওজনিয়াকিকের পেশাদার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ ছিল। এরপর ওয়াং কিয়াংকে হারিয়ে আরবের প্রথম নারী হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার ইতিহাস গড়েন তিনি।