খোলাবাজারে আরো বাড়ল ডলারের দাম
আন্তর্জাতিক প্রভাবের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারসংকটে টাকার মান পড়েই চলেছে। গতকাল রবিবার ঢাকার মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলার ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০৪ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে ও পরে ১০০ থেকে ১০২ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা হলেও রবিবার তা ১০৩ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এর পাশাপাশি আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে।
কারণ রপ্তানি বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছে। আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত বৃহস্পতিবার থেকে অবশ্য প্রতি ডলারের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা।
গত এক মাসের ব্যবধানে আন্ত ব্যাংকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০.৮০ শতাংশ।
এদিকে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে আরো চড়া দামে। দুই সপ্তাহ আগে খোলাবাজারে ডলারের দাম ছিল ৯৮ টাকা। গত সপ্তাহের শুরুতে তা ১০০ টাকার ওপরে ওঠে। ২০ জুলাই তা ১০২ টাকা ৬০ পয়সা পর্যন্ত হয়। গতকাল তা ১০৪ টাকায় এলো। খোলাবাজার ও মানি চেঞ্জারগুলো সাধারণত বিদেশফেরত ও সংগ্রহে থাকা ডলার ক্রয় করে। ব্যাংকের রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের সঙ্গে এই বাজারের সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল; কিন্তু এর পর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারসংকট শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্ত ব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। তবে গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথম ডলার ৮৫ টাকা ছাড়ায়।
মনিটরিং চায় চট্টগ্রাম চেম্বার : টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এডি (অথরাইজড ডিলার) ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় মনিটর করার আহ্বান জানিয়েছেন দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফকে দেওয়া এক চিঠিতে তিনি এ আহ্বান জানান। চিঠিতে চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়ছে। এরই মধ্যে এ মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক নির্দেশনা জারি করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের মূল্য অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম ৯৪ টাকার মধ্যে থাকলেও অনেক ব্যাংক এখন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্পের কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক বাড়বে, যার দায়ভার শেষ পর্যন্ত ভোক্তা সাধারণকেই বহন করতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এডি ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের বিনিময় একই হার নির্ধারণ করে দিলেও অনেক ব্যাংক ওই নির্দেশনা প্রতিপালন করছে না এবং তাদের ইচ্ছামতো দর আদায় করছে। এই অবস্থা উত্তরণে ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন।