পেপারবুক তৈরির জন্য যাচাই-বাছাই চলছে
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) আবেদন ও আপিল এখন হাইকোর্টে বিচারের অপেক্ষায়। ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরি করতে চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।
এই হত্যাকাণ্ডের দেড় বছরের মাথায় বিচারিক আদালত মামলার রায় দেন। পুলিশের গুলিতে নিহত সাবেক এ সেনা কর্মকর্তার স্বজনদের চাওয়া, বিচারিক আদালতের মতোই হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে দ্রুত মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।
বিচারিক আদালত কোনো আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। সে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন রায়সহ মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর তা শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
পেপারবুকই হয়নি
বিচারিক আদালতের রায়ের সাত দিনের মাথায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার যাবতীয় নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। আর বিচারিক আদালতের রায়ের দুই সপ্তাহের মাথায় খালাসের পাশাপাশি রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলী। পরে যাবজ্জীবন পাওয়া দণ্ডিত আসামিরাও আপিল করেন।
হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স ও পেপারবুক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেপারবুক তৈরির জন্য রায়সহ মামলার নথি যাচাই-বাছাই চলছে। অর্থাৎ এখনো এ মামলার পেপারবুকই তৈরি হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০১৭ সালের ডেথ রেফারেন্স মামলার পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে। আর এটি তো চলতি বছরের মামলা। ধারাবাহিকভাবেই তা আসবে। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যা মামলার পেপারবুক নিয়ে কাজ চলছে। আইন ও নিয়ম অনুযায়ীই মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হবে। ’
দ্রুত নিষ্পত্তির আরজি বাদীর
মেজর সিনহার বড় বোন ও হত্যা মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে ছিল বলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির রায় হয়েছে এবং আমরা বিচার পেয়েছি। আমরা চাইব চূড়ান্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই ধারাবাহিকতাটা বজায় থাকবে। বিচারিক আদালতে যাদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, আশা করি চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে এ রায় বহাল থাকবে। ’
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি বা নিষ্পত্তির এখতিয়ার মাননীয় প্রধান বিচারপতির। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মামলা হলে তার শুনানি বা নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। ’
এ মামলার ক্ষেত্রে তা করা হবে কি না, জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের যতটুকু উদ্যোগ নেওয়ার আমরা নেব। আইন অনুযায়ী আমরা সব কিছু করব। ’
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ২০২০ সালের ৫ আগস্ট বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় ২ নম্বর আসামি।
এ ঘটনায় পুলিশ পৃথক তিনটি মামলা করেছিল। আদালত সব মামলার তদন্তভার দেন র্যাবকে। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মামলায় অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আরো সাত আসামিকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে র্যাব।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতকে। আর ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে অন্যদের খালাস দেওয়া হয়।
যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিরা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। আসামিরা সবাই কারাগারে আছেন।