শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নির্মুল ছাড়া গণতন্ত্র ফিরবে না
অনুপমা হাসান
শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্নভাবে নির্মূল না করলে বাংলাদেশে গনতন্ত্র ফিরবে এমনটা আশা করাও এক ধরনের বোকামি বই আর কিছু নয়। এই দেশের পুলিশ-সেনাবাহিনী-র্যাব সবকিছুকে একটা পরিপূর্ণ চোরের আখড়াতে পরিণত করেছে হাসিনা। হাসিনার বাবাকে যেভাবে ৭৫ এ নির্মূল করা হয়েছে ঠিক েকইভাবে হাসিনাকে ও তার অবশিষ্ট পরিবারকে নির্মূল করা না গেলে আমরা যেই গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখছি সেটা দিবা স্বপ্নই হয়ে থাকবে বাংলাদেশীদের জন্য। আমাদের দূর্ভাগ্য যে আপোষহীন নেত্রি বেগম খালেদা জিয়া জেলে আজ ধুকে ধুকে মরছে কিন্তু বি এন পি’র নেতা কর্মীরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ-ই নিতে পারছে না। কেন পারছে না এই প্রশ্ন আমার সব সময়ই থেকে যাবে কিন্তু আক্ষেপ ফুরোবে না।
আওয়ামী দূর্নীতির হিসাব নিকাশ কষতে গেলে আসলে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়েই থাকতে হয়। এই ব্যাপারে ব্লগার ও লেখক মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসানের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ দল হিসেবে নিজে একা দূর্নীতি করেনি। তারা পুরো ব্যুরোক্রেসিকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে। পুলিশকে বানিয়েছে মহাচোর আর সেনাবাহিনীকে বানিয়েছে ডাকাতের সর্দার। বাংলাদেশ এই দূর্নীতির এমন মহাউৎসবে এমনভাবে নিপতিত যে, আগামী ৫০ বছরের জন্য দেশের বারোটা এই আওয়ামী সরকার বাজিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনতা যদি শহর বা গ্রামে বিপ্লবের জন্য না এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের মুক্তি সম্ভব। এখন দরকার বিপ্লব। এখন দরকার একশন’
দেশের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আরেকজন ব্লগার এবং বি এন পি কর্মী আলী আমিন বলেন-‘হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্বে প্রদত্ত মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্ভট মামলা দিয়ে হয়রানী করছে হাসিনা সরকার। শেখ হাসিনাসহ অবৈধ সরকারের নেতারা চিকিৎসার বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন তা অসভ্যতার চরমে পৌছেছে।বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেজা জিয়ার এই বিষেদাগার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য নতুন কিছু নয়। দেশে অথবা বাইরে যেখানেই তিনি থাকুন না কেন তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও মিথ্যা অপপ্রচার থাকবেই। কারন তারা জানে সাধারন মানুষের কাছে বেগম খালেদা জিয়া কতোটা জনপ্রিয়। সাধারন মানুষ সুযোগ পেলে ভোট দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কিভাবে ক্ষমতায় আনবে। আর তখন তাদের পালানোরও সুযোগ থাকবে না’
এই আওয়ামীলীগ দেশ ত্যাগ এবং ষড়যন্ত্র করার উদাহরণ কেবল গণতন্ত্র হত্যাকারী ও দেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে চলেছে। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময় সেটি প্রমাণিতও হয়েছে। সেই সময় সেনা সমর্থিত সরকারের পক্ষ থেকে প্রচন্ড চাপ সত্ত্বেও দেশ ত্যাগ করেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এজন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ জিয়ার দুই সন্তান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান ও বিশিষ্ট ক্রীড়ানুরাগী মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর উপরঅমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। দেশের কথা, জনগণের কথা চিন্তা না করে শেখ হাসিনাই তখন বিদেশে চলে দিয়েছিলেন। পরে মঈন-ফখরুদ্দিনদের সাথে আঁতাত করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ ।
বেগম খালেদা জিয়া কখনোই হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। দেশে সংঘটিত বোমা হামলা, খুন, গুম, চাঁদাবাজিসহ সব অনৈতিক কাজের সাথে ভোটারবিহীন সরকারের দলের লোকজনই জড়িত। অবৈধ সরকার তাদের ব্যর্ততা ঢাকতেই তারা বিএনপির মতো দলকে কোনঠাসা করে রেখেছে ।
এই বিষয়ে লেখক ও ব্লগার এম ডি তোফায়েল হোসেন বলেন- ‘২০০৪ সালের ৪জুন হরতালের আগের দিন শাহবাগে বাসে আগুন দিয়ে ১১ যাত্রীকে শেখ হাসিনার নির্দেশে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম। ২০১৫ সালে একইভাবে শেখ হাসিনা ও জয়ের নির্দেশে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডার যারা এখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখায় কর্মরত তাদের যোগ সাজসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেককে তখন হাতেনাতে ধরাও হয়েছে। তাই নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই পাগলের প্রলাপ বকছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ’
শেখ হাসিনার পুত্র ‘থ্রি হান্ড্রেড মিলিয়ন ডলার ম্যান’ খ্যাত সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাংক ডাকাতি ও দুর্নীতি নিয়ে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকার এফবিআই জয়ের দুর্নীতির তদন্ত করছে। ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে টাকা পাচার বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। খোদ শেখ হাসিনা, জয় এবং শেখ রেহানা এইসব লুটেরা এবং টাকা পাচারকারীদের প্রধান রক্ষক। কারণ প্রতিটি ব্যাংক ডাকাতি, লুটপার আর টাকা পাচারের সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামীলীগের দুর্বৃত্তরা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। দেশের সরকারি-বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানিয়ে শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লুটেরাদের শত শত কোটি টাকা এখন সুইস ব্যাংকে। সুইস ব্যাংক ছাড়াও শেখ হাসিনার ব্যাংক ডাকাত সরকারের আমলে বিদেশে পাচার হয়েছে ৬ লাখ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকের টাকা নিয়ে রাজনৈতিকভাবে হৈ চৈ হলেও পাচার হওয়া ৬ লাখ কোটি টাকা নিয়ে কোন আলোচনা নেই।
শুধু ২০১৪ সালেই বাংলাদেশ থেকে আরো প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এভাবে গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। আর এইসব অর্থ কোন না কোন ভাবে হাসিনা পরিবার থেকে পাচার হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ডের ৮১০ কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায় ২০১৬ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারী। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই টাকা লোপাটের ঘটনা সাইবার হ্যাকিং ছিলোনা। এটি ছিল সুইপ্ট কোড ব্যবহার করে ঠান্ডা মাথায় ডিজিটাল উপায়ে ব্যাংক ডাকাতি। শেখ হাসিনার তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে এই কোড নাম্বার জানতেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ফলে ডক্টর আতিয়াররিজার্ভ লুটের ঘটনা অর্থমন্ত্রী আবুল মালকে না জানিয়ে প্রথমেই জানান শেখ হাসিনাকে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের উপস্থিতিতেযুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসে রিজার্ভ লুটের পরিকল্পনা করা হয়। সে বৈঠকে জয়ের সঙ্গে রাকেশ আস্তানাসহ আরও কমপক্ষেতিনজন ছিলেন বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
হাসিনা ও ব্যাংক ডাকাত জয় দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিই শুধু ধ্বংস করছে না। বিরোধী মতের নেতা কর্মীরদের গুম খুন করার মাধ্যমে রক্তের হুলি খেলায় মেতে উঠেছে, দেশকে এক জ্বলন্ত কারাগারে পরিণত করেছে। গুম খুনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি কায়েম করে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গিলে খাচ্ছে।