বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেব না, সংসদে ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর রাস্তায় বের হবেন। ১০ ডিসেম্বর নাকি বিজয় মিছিল করবেন খালেদা জিয়াকে নিয়ে। তার মানে লাঠিসোটা নিয়ে নামবেন। এর বিরুদ্ধে খেলা হবে। বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেব না। ছাড় দেওয়া হবে না। 

রোববার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বেগম জিয়া কিভাবে মুক্ত হয়ে বাসায়- এটা ভেবে দেখতে হবে। বেগম জিয়াকে শেখ হাসিনা উদারতা দেখিয়ে নির্বাহী আদেশে বাসায় থাকতে দিয়েছেন। বয়স ও স্বাস্থ্য বিবেচনা করে মানবিক কারণে মুক্ত করে বাসায় পাঠিয়েছেন। আপনারা (বিএনপি) তো তার জন্য কিছুই করতে পারেননি। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৩ বছরে ১৩ মিনিটও রাস্তায় দেখিনি। বিক্ষোভের ডাক দিয়ে তিনি ঘরে বসে হিন্দি সিনেমা দেখেছেন। আর পুলিশের গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন। নিজের দলের নেতার জন্য চোখে পড়ার মতো মিছিল বাংলাদেশের কোথাও দেখিনি। 

মন্ত্রী বলেন, লাফালাফি বাড়াবাড়ির কথা প্রধানমন্ত্রী যা বলার বলেছেন। আপনারা বক্তব্য দেন- শেখ হাসিনার নামটা পর্যন্ত শালীনতার সাথে উচ্চারণ করেন না। করেন হাসিনা হাসিনা। বিএনপির আরেক নেতা রাজনীতি করব না বলে দেশ ছাড়ে ২০০৮ সালে। মুচলেকা দিয়ে লন্ডন গেছেন। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে এমনি বলিনি।

‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য অ্যাডভোকেট ফিরোজ রশীদের সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতে পশ্চিমবঙ্গে যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে মমতা ব্যানার্জি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জিতেছেন। সেখানে মূল স্লোগান ছিল ‘খেলা হবে’। নরেন্দ্র মোদিও দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খেলা হবে এগুলো বলে বক্তব্য দিয়েছেন। এটা কোনো হালকা বিষয় নয়। রাজনীতিতে এই পলিটিক্যাল হিউমার আছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি কালকে বাড্ডায় বক্তব্য দিয়েছি। দেড়-দুই লাখ মানুষ সারা মাঠ খেলা হবে বলেছেন। জনগণ তো এটা অপছন্দ করছেন না। আপনি কেন না করছেন? আপনার ভালো লাগে না আপনি বলবেন না। আমি বলবো- এটা একটা পরিটিক্যাল স্লোগান। পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতে এই স্লোগান বেশি হয়েছে। তাতে কি গণতন্ত্র হালকা হয়ে গেছে? জনগণ কি সেটা মনে করে? জনগণ তো সমস্বরে স্লোগান দিচ্ছে। উচ্চারণ করছেন। যেহেতু জনগণ বলছে আমি তো সেজন্য বলছি। 

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, আমরা তো মারামারি করতে বলিনি। বলছি- এই যে দুর্নীতিটা করেছেন, ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন- এর বিরুদ্ধে খেলা হবে। এটা পলিটিক্যাল টার্ম। 

বৈশ্বিক মহামারিকে পুঁজি করে বিএনপি অপরাজনীতি করতে চায়- এমন দাবি করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, সারা দুনিয়ায় দুর্ভোগ। এদেশের প্রধানমন্ত্রী রাতে ঘুমান না। সারারাত জেগে থাকেন। কাজ করেন। তারও কষ্ট হয় এসব দেখে। সাধারণ মানুষ কষ্ট করছেন, দুর্ভোগে আছেন দেখে প্রধানমন্ত্রীরও মন খারাপ। সারা দুনিয়ায় মানুষ দুর্ভোগে আছে। এরজন্য কি আমরা দায়ী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর নিষেধাজ্ঞা। আর আমাদের অবস্থা আজকে বেহাল। আমরা গরিব দেশগুলোই সাফার করছি। পৃথিবীর অন্য দেশে এজন্য কেউ সরকারকে দায়ী করছে না। সরকারের পতন দাবি করছে না। আপনারা বৈশ্বিক সংকটের জন্য সরকারের পদত্যাগ দাবি করছেন। 

বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উচ্চ আদালত জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। সেই তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে লাফালাফি। বাড়াবাড়ি। রাস্তায় হুমকি। জাতীয় পতাকা লাঠির সঙ্গে বেঁধে রাস্তায় নামেন। এটা হচ্ছে বাড়াবাড়ি। এই বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে খেলা হবে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটা বাড়াবাড়ির জন্য বলেছেন। আমরা ছাড় দিচ্ছি। কিন্তু মনে রাখবেন, বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেব না। পরিষ্কার কথা। আমরা আওয়ামী লীগ কোথাও কী আপনাদের সাথে মারামারি করতে গেছি? আমরা তো বিএনপির সমাবেশে মারামারি করতে যাইনি।

বিএনপির শাসনামলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা একটা লোকও কী ওই সময় ঘরে থাকতে পেরেছি? ৫ বছরে আমি ৫ দিনও ঘরে থাকতে পারিনি। আমাদের নেতাদের প্রত্যেকের গায়ে দাগ আছে। বেধড়ক পিটুনির দাগ আছে।