NewsOpinionPolitics

ইউনুসের ক্ষমতা দখল ও কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার

আফরোজা আলীম আশা, যুক্তরাজ্য

ক্ষমতা দখল করার আগেই ভারতের সেভেন সিস্টার নিয়ে সকল কূটনৈতিক শিষ্টাচার অমান্য করে বিদেশি মিডিয়াতে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছে ইউনূস। এমন বক্তব্য কেউ আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম অথবা দেশের অন্য কোন অঞ্চল নিয়ে দিলে কেমন লাগতো?

চীনে গিয়ে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিকভাবে বক্তব্য দিয়ে বলেছে, ভারতের সাত রাজ্যে স্থল বেষ্টিত অঞ্চল। এবং সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক বাংলাদেশ। ভুটানের সাথে বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের চুক্তি নিজের নামে চালিয়ে বাহবা নিতে গিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা না করেই মালামাল পাঠিয়ে দিয়েছিল। ভারত নিজেদের ভূমি ব্যবহার করতে না দেয়াতে সেসব মালামাল সীমান্তেই আটকে এখন নষ্ট হচ্ছে।

বিগত সময়ে যত রকম “গোলামীর চুক্তি”-র কথা শুনেছি এমন একটি চুক্তিও বাতিল তো দূরে থাকুক, জনগণের সামনে প্রকাশও করেনি মহাজনের সরকার। দেখিয়ে বলেনি, এই হলো সেই চুক্তি যা দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে দিয়েছিল ভারতের কাছে। উল্টো মোদীর সাথে দেখা করতে কত রকমের আকুতি। ৫/১০ মিনিটের সাক্ষাতের পরে মিডিয়াতে সে কী প্রচার প্রচারণা!

বিডিআর বিদ্রোহের কথিত “স্বাধীন তদন্ত কমিশন” এর রিপোর্টে ভারতের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়ার অভিযোগ করলেও ভারতকে অফিশিয়ালি বলা হয়নি কিছুই। কোন রকম জবাব চাওয়া তো দূরের কথা, এতো গুরুতর অভিযোগ ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রমাণসহ জানানোর পদক্ষেপও নেয়নি “চোখে চোখ রেখে কথা বলা সরকার”।

শীর্ষ রাজাকার গোলাম আজমের ছেলে ঘোষণা দিয়েছে ভারতকে টুকরো টুকরো করার। আব্দুল হক নামের আরও একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সরাসরি মিডিয়ার সামনেই বলছে, প্রতিবেশী বদলানো যায় না, নতুন প্রতিবেশী সৃষ্টি করা যায়। ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি চার ঘন্টায় কোলকাতা দখল নেয়ার হুমকি। ইউনূসের শ্বশুর বাড়ি কিন্তু ভারতে।

এদের আসল উদ্দেশ্য মোটেই বাংলাদেশের পক্ষে নয়। এরা তিনদিকে ভারতের সীমান্ত ঘেরা দেশটিকে আরেকটি পাকিস্তান বানাতে চায়। পুরো বিশ্বে পাকিস্তানের ইমেজ কতটা খারাপ এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ মাত্রই তা জানে। কিন্তু, বাংলাদেশটাকে কেন টেনে সে পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে ইউনুস ও তার দোসররা! কীসের এতো ক্ষোভ এই দেশের প্রতি? গোলাম আজমের ছেলের ক্ষোভটা না হয় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত, কিন্তু ইউনুস?

গত ১৬ মাস যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে সামরিক অস্ত্র কেনার পক্ষে। দেশের জিডিপি ৩ এ নেমে যাওয়া দেশে তোরজোড় চালানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধ জাহাজ কেনার জন্য। সাধারণ মানুষকে বুঝানো হচ্ছে, সামরিকভাবে শক্তিশালী হলেই নাকি দেশ শক্তিশালী হয়। ওদিকে কৃষক যে সার না পেয়ে কৃষিকাজ করতে পারছে না, দেশের অভ্যন্তরে আইন শৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি, লাখ লাখ লোক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে সেসবের দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। বলা হচ্ছে, ভারত চায় না বাংলাদেশ সামরিকভাবে শক্তিশালী হোক। বলে না, দেশের মানুষের সবার আগে পেটে ভাত দরকার। বলে না, কেন দেশের রপ্তানি কমছে ক্রমশ!

দেশটাকে যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেলে কার লাভ? বাংলাদেশ কার সাথে যুদ্ধ করতে এতো সামরিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে? সেনাবাহিনী পরিচালিত দেশ পাকিস্তান এখন নিজেদের রাষ্ট্রীয় বিমান পিআইএ কে বিক্রি করে দিতে চাইছে। বিশ্বের কোন দেশ যুদ্ধ করে শক্তিশালী হয়েছে? সামরিক শক্তি আগে না দেশের মানুষের শান্তি আগে?

একটা পুরো জাতিকে বলদ বানিয়ে ইউনুস যে মূলত নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে সেটা এখনো যারা বুঝেনি তারা জীবনেও বুঝবে না। ইউনুস ক্ষমতা নেয়ার পরে ২২টির বেশী নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। এই যে আজকে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট হলো, ওদিকে এনসিপি বলা শুরু করেছে দেশের পরিস্থিতি বুঝে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে – এসব যে ইউনূসেরই চাল তা কি বিএনপি বুঝতে পারছে? যতই দিন যাবে, নতুন নিবন্ধিত কুমিরের বাচ্চাগুলোকে দিয়ে নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ করাবে ইউনূস। নতুবা, খালেদা জিয়ার ব্যাপারে যখন দেশে একটি নাটক চলছে, তখনই কেন ইউনূসের ব্যাপক জনপ্রিয়তার জরিপের খবর ঢালাও প্রচারণা পায়? অপরদিকে যে পুরো দুনিয়াতে ধীরে ধীরে জঙ্গি দেশ হিসেবে তকমা পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সবশেষ, দেশে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু করার পরিকল্পনা যতদিন না সফল হবে ততদিন ইউনূস এসব চালিয়ে যাবে। যেই জাতি নিজেরা এভাবে নিজেদের কবর খুঁড়ে, তাদের পরিণতি ভালো কিছু কখনোই হয় না। ততদিন এইসব নাটক চলুক, কথিত শিক্ষিত এলিট শ্রেণী বসে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বট বাহিনীর মতো কপি পেস্ট করুক, “প্রফেসর ইউনূসের প্রতি আর কোন অভিযোগ নেই, তিনি হ্যান করেছে, ত্যান করেছে …।”

পুরো ১৬ মাসে আদতে একটি বিরাট অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, যার সুফল একমাত্র সে নিজে, তার দলবল ব্যতীত দেশ ও সাধারণ মানুষ কিছুই পাবে না।