ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে ৬ বিভাগে বিএনপির সমাবেশের ডাক
ভোট কারচুপির প্রতিবাদে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ছয় বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম-রাজশাহী-খুলনার বিএনপি দলীয় মেয়রপ্রার্থীরা।
আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সারোয়ার এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।কর্মসূচিসমূহ হচ্ছে : চট্টগ্রামে ১৩ ফেব্রুয়ারি, বরিশালে ১৮ ফেব্রুয়ারি, খুলনায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাজশাহীতে ১ মার্চ, ঢাকা উত্তরে ৩ মার্চ এবং ঢাকা দক্ষিণে ৪ মার্চ সমাবেশ।
মজিবুর রহমান সারোয়ার বলেন, ‘৬টি মহানগরে ৬ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। আমরা জনতার সামনে ভোট কারচুপির বিষয়গুলো তুলে ধরতে চাই, আমরা জনতার সামনে ভোটের অধিকারের কথা বলতে চাই, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বলতে চাই।’‘আজকে আমাদের শুধু স্পেস টাস্ক দিয়ে আমাদের সবাইকে ভিন্ন আগ্রাসন চালিয়ে বন্ধ করে যদি শক্তিশালী বিরোধী দলের কথা বলা হয় তাহলে এটা দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে যেন কোনো বাধা না দেয়া হয়। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে আমাদের সমাবেশ করতে চাই।’তিনি বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবার নয়। সেই কথাগুলো আমরা জনগণের কাছে বলবো। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট চাইব, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক- এটি আমাদের আজকে বড় দাবি।’৬ মহানগরীর সমাবেশ সফলে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও চান বরিশালের মেয়র প্রার্থী সারোয়ার।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন হয় গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের আয়োজনে।সংবাদ সম্মেলনে বরিশালের মজিবুর রহমান সারোয়ার, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, চট্টগ্রামের ডা. শাহাদাত হোসেন, ঢাকা উত্তরের তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণের ইশরাক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।সংবাদ সম্মেলনের মূল ডায়াসে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও উপস্থিত ছিলেন তবে তিনি কোনো বক্তব্য রাখেননি।এক প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রামের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে-চট্টগ্রামে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্র, প্রশাসনযন্ত্র, আওয়ামী লীগ ও সরকার মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেছে।’‘এই যে ৬টি মহানগর সমাবেশ হবে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হবে। জনগণ আমাদের প্রধান শক্তি। আমরা তাদের কাছে আপিল করবো,একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য বডির অধীনে নির্বাচন চাই, যে বডিটি কারচুপি করবে না। যেটা অতীতে ছিল, যেটা বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ছিল এবং আমরা সেটা প্রবর্তন করেছিলাম। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- এই মতবাদ নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে জনমত গড়ে তুলতে চাই।
’রাজশাহীর মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘এরকম নির্বাচনে আমাদের কোনো রেজাল্ট নেই, জনগণের কোনো রেজাল্ট নেই, আপনার কোনো রেজাল্ট নেই। আমরা নির্বাচনে আমাদের উপলব্ধিগুলো বলেছি। আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এটাকে প্রেক্ষাপটে রেখে আমরা কিন্তু জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য যে এই মার্কা নির্বাচন করে আজকে বাংলাদেশের মানুষকে মেরে ফেলার জন্য নির্বাচন করবে না শান্তিপূর্ণ ওই ঈদ উৎসব তৈরি করবে, কোনটা? সেটার জন্যই আমরা এই সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছি।’‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করবো। এই সমাবেশ করার পরে পরবর্তীতে আমাদের দলের ফোরাম আছে তাদের সাথে বসে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবো।
ঢাকা উত্তরের সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘ এক বছরপূর্তি হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। একটা তামাশার নির্বাচন হয়েছিল। তারপর ও তার আগে থেকে আমরা দেখছি যে, প্রত্যেকটি নির্বাচনের চিত্র আরেক ধরনের দিকে চলে যাচ্ছে। জনগণকে বাধ্য করা হচ্ছে জোর করে নির্বাচন থেকে বিমুখ করা জন্য।’‘যেখানে জনগণ চাচ্ছে তাদের ভোটের অধিকার নিজেরা রক্ষা করার জন্য, ভোট দেয়ার জন্য। সেখানে গুন্ডা, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে বের করে দেয়া হচ্ছে। এজন্য আমাদেরকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য আমাদের জনমত গড়ে তুলতে হবে।’নগরবাসীরা তাদের নাগরিক সেবা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।ঢাকা দক্ষিণের ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘দেশ চালাচ্ছে মাফিয়া ও গুন্ডারা। আওয়ামী লীগ নেতাদেরও বলব আপনারা প্রতিবাদ করেন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, আমরা যে বিভিন্ন সময় বৈঠক করি নির্বাচন কমিশনের সাথে- এসবই ভোকাস, সবই ভুয়া। এগুলো করে কোনো লাভ হবে না। আমরা কার কাছে বিচার দিবো, কার কাছে বিচার চাইব, কার অধীনে আমরা নির্বাচন করবো- এই জিনিসগুলো আমাদের ভাবতে হবে।’‘বাংলাদেশে যদি ১০০০টা নির্বাচন হয় এই সরকারের অধীনে-একই ফলাফল হবে। আমাদের এখানে আগে যে কেয়ার টেকার ব্যবস্থা ছিল সেই ব্যবস্থায় ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্রে আর কোনোদিনও ফেরত যাবে না।’ছয় মেয়র প্রার্থী তাদের নিজ নিজ মহানগরে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ভোট কারচুপির নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
বরিশালের মজিবুর রহমান সারোয়ার আরও বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে সেটা দেখলাম তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি।’‘কোথাও নির্বাচন হয় না। নৌকা মার্কার সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের আঁতাত হয়েছে। তারা মনেই করে নৌকা মার্কা যখন দিয়েছে তখন প্রশাসন-আওয়ামী লীগ আমরা সবাই ভাই ভাই। পুলিশরা মিছিল করে, প্রশাসন মিটিং করে। এরকম একটা অবস্থা হয়ে গেছে।’চট্টগ্রামের ডা. শাহাদত হোসেন বলেন, ‘যে নির্বাচনটি হয়ে গেলো এটাতে আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সেখানে তারা ভোট চুরি ও ভোট ডাকাতি করেছে। ভোট চুরিটা হচ্ছে ইভিএমে ব্যালট পেপারের প্যানেল অরক্ষিত থাকার কারণে। আর ভোট ডাকাতি হয়েছে ইভিএমে প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে যে সংরক্ষিত ২০% এক্সসেসে থাকে। সেখানে একটা আঙুলে বাটন টিপ মারলে এক সেকেন্ডে হাজার হাজার ভোট ডাকাতি হয়েছে। এভাবে তারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’‘এই নির্বাচন ইনফেক্ট আমার যে এনালাইসিস, তারা কমপ্লিটলি একদলীয় একটা ব্যবস্থার দিকে চলে গেছে। নৌকার প্রতীক মানেই বিজয়। এটা এখন অ্যাবস্যুলেট হয়ে গেছে। প্রশাসন বলে, নৌকা মানে বিজয়, আমরা অন্য কোনো প্রতীকের ধার ধারি না, নৌকাকে বিজয় করাতে হবে।’রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে এটা চলতে থাকলে জনগণের ভোট বলে আর কিছু থাকবে না।’