আল জাজিরার তথ্যচিত্র, কারাগারে মুশতাকের মৃত্যু ও প্রবাসীদের ভাবনা
এই তথ্যচিত্রটির সত্যতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও তাদের অনুগত কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছে এবং তারা বলতে চাইছে এই তথ্যচিত্রের প্রতিটি কথাই বা ব্যবহৃত এভিডেন্স মিথ্যা। অন্যদিকে বাংলাদেশের একটি বড় অংশের মানুষ এই তথ্যচিত্র বিশ্বাস করেছে এবং তাদের ভেতর এক ধরনের ভয়ের সঞ্চার হয়েছে। আল জাজিরা এই তথ্য চিত্রের নাম দিয়েছে ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারররস মেন’, [প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত লোকেরা]।
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক টিভি আল-জাজিরা গত ১লা ফেব্রুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্যচিত্র প্রকাশ করে। এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয় কি করে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান নিজের পদ ব্যবহার করে খোদ তার পলাতক দুই ভাইকে ব্যবহার করে এবং তাদেরকে নানাবিধ অর্থ কড়ির সংস্থান করে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় দেখানো হয় যে তিনি তার সেনাপ্রদানপদ ব্যবহার করে তার ক্ষমতার বাইরে সেটির প্রয়োগ করেছেন এবং এই পুরো চক্রটি আবার কিভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ আহসিনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।
বলা বাহুল্য আল-জাজিরায় প্রকাশিত ডকুচিত্র বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এব্যাপারে দেশে বিদেশে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক-প্রতিক্রিয়া চলমান। লক্ষ্যজনক এই – বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, ব্যক্তিপর্যায়ে বা রাষ্ট্রীয়, আলোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সুর নেতিবাচক যা বাংলাদেশ সরকারের জন্যে উদ্বেগ তৈরি করার কথা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য – কিছু মিডিয়া তৎপরতা, যার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে আসা, ব্যতিরেকে বাংলাদেশ সরকার বা আওয়ামী লীগ এর উল্লেখযোগ্য কোনো জবাব, সমুচিত বা দূর্বল, আল-জাজিরার প্রেক্ষিতে দেখা যায়নি আজতক। তার মানে কী এই – এধরণের প্রচন্ড অপমানজনক প্রতিবেদন উপেক্ষা করে এমন আক্রমন/সমালোচনা গা-সওয়া হয়ে গেছে এই সরকারের? এর মানে কী এই – মাফিয়া বলে প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, সে-ব্যাপারে সরকারের ক্ষীণস্বরের জবাব প্রকারান্তরে এই অপবাদকে সত্যের জায়গা দেয়? অনেক প্রশ্ন, অথচ উত্তর নেই।
প্রসঙ্গতঃ, আল জাজিরা এই বছরের শুরুতে একটি ডকুচিত্র রিলিজ করে যেখানে বর্তমান সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আজিজের চমকপ্রদ উত্থান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আজিজ সাহেবের পরিবারের সন্ত্রাসী অতীত ও বর্তমান তুলে ধরা হয়েছে। বেশ কিছু ক্যাবিনেট মন্ত্রী এই ডকুমেন্টারির ঘটনাগুলোকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন বিএনপি-জামায়াত মদদপুষ্ট গোষ্ঠীর প্রোপাগান্ডা ও অপপ্রচার হিশেবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করবার অশুভ প্রচেষ্টা হিশেবে। কিন্তু, তাদের এই সমস্ত ‘আউট অফ সাইট, আউট অফ মাইন্ড’ এপ্রোচে কাজ হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্বৃত্তায়ন এবং মূল্যবোধের যে অবক্ষয় ঘটে গেছে আওয়ামী লীগ এর অধীনে, তার হাল-হকিকত বুঝবার আমরা চেষ্টা করেছি আল জাজিরা ও মুশতাক আহমেদ এর মৃত্যু ইস্যুত।
একারণে আমরা আমাদের পাঠকদের কাছ থেকে মন্তব্য আহবান করি।অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি এই আহবানে কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই – বেশিরভাগ মন্তব্যকারীই তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বেনামে প্রকাশিত মন্তব্যের যেহেতু বিশ্বাসযোগ্যতা কম, আমরা সেই মন্তব্যগুলো প্রকাশ করছিনা কিন্তু একথা আমরা আমাদের সুপ্রিয় পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে পারি – এই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্তব্যকারীরা বেশিরভাগই বাংলাদেশে এবং তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছা অযৌক্তিক বলা যায় না।
এই জনমত পর্যালোচনায় কিছু চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। আমাদের এই তথ্যসমূহের ব্যাপারে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে যা নিম্নে আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করেছি। আমরা কৌতূহলের সাথে লক্ষ্য করেছি যে – আল জাজিরা ও মুশতাক মৃত্যু প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকে তাদের অন্যান্য পূঞ্জীভূত অসন্তোষ তুলে ধরেছেন আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ সরকার এর ব্যাপারে।
যেমন, শিপলু কুমার বর্মন (৪২, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ) তার মন্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের তীব্র সমালোচনা করবার পাশাপাশি আল জাজিরাকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে ডকুমেন্টারি করবার অনুরোধ জানিয়েছেন।ওনার মন্তব্য ভিডিও-আকারে প্রকাশিত হলো এখানে। উনি আরো সুনির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে তার সুতীব্র হতাশা ও ক্রোধ তুলে ধরেন –‘মুশতাক আহমদ এর ব্যাপারে তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করা ছাড়া কিইবা বলার আছে। এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন একটি অশুভ আইন এবং এই আইন বাতিল করতে হবে। এই আইন, এই সাইবার ট্রাইবুন্যাল এবং যে বিচারকরা মুশতাককে জামিন দেয়নি, তারাই তার হত্যাকারী। কিন্তু, তার মূল হত্যাকারী হচ্ছে শেখ হাসিনা। তাকে শূলে চড়ানো উচিত। উনি ধর্মীয় মৌলবাদ যেভাবে উসকে দিয়েছেন, একটা জামায়াত সরকার–ও কি এই কাজ করতো কিনা সন্দেহ। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখালঘুদের আজককের এই অবস্থার জন্যে এই শেখ হাসিনা দায়ী এবং তার বিনাশ না হওয়া পর্যন্ত এই দেশ অরাজকতার মধ্যে দিয়ে যেতে থাকবে।’
একইভাবে মুকিত চৌধুরী (৩৪, হবিগঞ্জ, সিলেট)- সাবেক বৃন্দাবন কলেজের ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে লন্ডন মহানগরীর যুবদল এর যুগ্ম সম্পাদক, তার ভিডিও মন্তব্যে আওয়ামী সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবী করেন এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে বলেন – ‘মুশতাক আহমদ–এর মৃত্যু আমাকে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে। আমি মনে করি যে আইনের করালগ্রাসে তার মৃত্যু, সে–আইন বাতিল করতে হবে এবং যে বিচারকরা তাকে জামিন দেয়নি, তাদের বিচারকপদ থেকে বাতিল করে বিচারের মুখোমুখি করা লাগবে। তবে এইসব কিছুই ঠিক হবে না যতদিন এই জালেম সরকার ও অসভ্য ইতর হাসিনা ক্ষমতায় থাকবে অন্যায়ভাবে।’
মোঃ জাকির হোসাইন (২৯, শরীয়তপুর, বাংলাদেশ) বলেন – আমি মনে করি শেখ হাসিনার মৃত্যুর সময় হয়ে এসেছে। এটা যদি না হতো তাহলে এধরণের লাগামছাড়া অন্যায় করতে পারতো না। তার বাপটাও এইসব বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে মরলো। দেশটারে নিজের সম্পত্তি ভাবলে যা হয় আর কি। আমি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। প্রতিহিংসা কখনো ভাল কিছু আনে না। কিন্তু হাসিনা মোটেও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ না। হওয়ার কথাও না। কারণ তার পরিবারের এতগুলো সদস্যকে মেরে ফেলল একসাথে, এইভাবে সবাই একত্রে নিকেষ হয়ে গেল, এইটার পরে কোনো মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পারে না। সে কিভাবে মানসিক হাসপাতালে না থেকে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়, বুঝলাম না। আওয়ামী লীগ একটা মনোবিকারগ্রস্ত দল। নাহলে এমন উন্মাদিনীকে কেউ নেত্রী করে? আল জাজিরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি সত্যভাবে তুলে ধরেছে। মুশতাক মরে প্রমাণ করে দিলো কী প্রচন্ড বীভৎস বাংলার বিচারকরা এবং আওয়ামী শয়তানরা। প্রতিহিংসা নয়, দেশ রক্ষার স্বার্থেই এদের চিরতরে সরিয়ে দিতে হবে। আমি সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে বলি এবং আন্তর্জাতিক মহলকেও একই অনুরোধ করি।
লক্ষ্য করলেই দেখা যাচ্ছে, সাধারণ জনগন কতটা বিরুপভাবে এই সরকার সম্পর্কে ভাবে এবং তাদের ব্যাপারে অকপটে বলছে এসব। মানে দাঁড়াচ্ছে, সরকারের নানাবিধ নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ জনতার কি স্পস্ট অবস্থান! সরকারি এইসব নীতির বিরুদ্ধে বলতে গিয়েই এম ডি ওবায়দুর রহমান খান বলেন, ‘ লজ্জা শরম থেকে থাকলে সরকার এই আল জাজিরার তথ্য চিত্র দেখেই পালিয়ে যেতো। এদের লজ্জা শরম বলেই কিছু নাই আসলে। আসলে হাসিনার ছেলেই দেখেন না, একটা আস্তো চোর। আর মা হচ্ছে আরো বড় ভোট ডাকাত। চোর আর ডাকাত মিলে কি নোংরা জুটি’
এই ব্যাপারে আমরা পোর্টাল বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক, এম ডি সাব্বির হোসাইন (৩১, রাজবাড়ি)-এর কাছে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ এই আওয়ামীলীগ সরকার আসলে এই দেশটিকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে এসে হাজির করেছে। সামান্য লজ্জা থাকলে আল জাজিরার এই তথ্য চিত্রের পর পরই এই অবৈধ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনতার হাতে উঠিয়ে দিতো। কিন্তু সেটি তারা দেবে না এবং সেই পরিকল্পনাও তাদের নেই। এই সরকারকে প্রকাশ্যে জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে টেনে হিঁচড়ে সরাতে হবে। এই ছাড়া আমি অন্তত পক্ষে আর কোনো উপায়-ই দেখিনা।’
এই ব্যাপারে যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী দলের নেতা আহসানুল কবির ( ৩৫,দাসাট্রা, পালং, শরিয়তপুর) আমাদের জানান যে, ‘আওয়ামীলীগ সরকার একটি খুনী সরকার। এই খুনী সরকারকে যে কোনো পদ্ধতিতেই নামাতে হবে। দুইটা খুনীর ভাইকে এই সরকারই সেনাপ্রধান বানিয়েছে আর দেশে আর বিদেশে এখন আমাদের মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। আমরা খুনী হাসিনা ও খুনী আজিজের পতন চাই’
যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী মোহাম্মদ আরাথ হোসেন রনি (২৯, যুক্তরাজ্য) তাঁর বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন যে, ‘আমি আল জাজিরার তথ্য চিত্র দেখে বিষ্মিত হয়ে গেছি। আসলে আমার বলার ভাষা নেই। একটা অযোগ্য লোক সেনাবাহিনীর প্রধান যার দুই ভাই হচ্ছে পলাতক খুনী। এবং এইসব ব্যাক্তিদের প্রোমোট করছে আরেক খুনী শেখ হাসিনা। যার হাতে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। আমরা অতি শিঘ্রই আল জাজিরার এই তথ্য চিত্র সম্পর্কে যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে তার পূর্ণ তদন্ত চাই। তা না হলে এই সরকারকে গদি থেকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হবে।’
এই তথ্য চিত্র সম্পর্কে নুরুল হুদা (২৯, সুনামগঞ্জ) বলেন, ‘খুনী হাসিনা ও খুনী আজিজের সমন্বয়ে বাংলাদেশ এখন হাসির খরাকে পরিণত হয়েছে। হাসিনাকে নির্মূল করা ছাড়া আমি কোনো উপায় দেখিনা। ভোট চোর হাসিনা ও তার সঙ্গী আজিজ এই দুই মিলে পুরো দেশকে কলংকিত করে দিয়েছে’
মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন, (২৯,গফরগাঁও) যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী দলের নেতা, আল জাজিরার ব্যাপারে বলতে গিয়ে জানান, ‘আওয়ামিলীগ বলে আওয়ামিলীগের আমল স্বর্গীয়আর বিএনপির আমল নরকীয়তারপরও বিএনপি যখন বলে বাংলাদেশের সকল গণমাধ্যমে ১২ ঘন্টা আওয়ামিলীগের ভালো দিকগুলো প্রচার করা হোকএবং বাকী ১২ যন্টা বিএনপির আমলের খারাপ দিকগুলো প্রচার করা হোকতারপরও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।আওয়ামিলীগ তখন কেন ভয় পায়?যেখানে পাগলেও ভালো বুঝে।পাগলেও স্বর্গীয় আমল রেখে নরকীয় আমলে যেতে চাইবে না।তাহলে মানুষের হৃদয়ে কে কী হিসাবে রয়েছে এবার বলুন।জনগণ জানে কাদের আমলে কোন জিনিসের দাম এক টাকাও বাড়ে না।আর কাদের আমলে গ্যাসের দাম বছরে তিন বার বাড়ার পরও জনগণ গ্যাস সংযোগ পায় না কিন্তু ভারত ঠিকই পায়।প্রতিবাদ করলে অরাজনৈতিক আবরার ফাহাদের মতো মেধাবী বুয়েট ছাত্র কেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।বিএনপি যতটুকু করছে পৃথিবীর সকল দেশেই ততটুকু হয়।বাইডেনের জায়গায় হাসিনা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে ট্রাম্পের বিভিন্ন কাজকে ইস্যু বানিয়ে আমেরিকাতেও ভোটচুরীর রাজনীতি কায়েম করতো।আওয়ামী পাপিয়ার সন্তানদের লজ্জা দেওয়ার ক্ষমতা এই দেশের কারো নেই কারণ ওরা বড় হয়েছে মায়ের লজ্জা বেচা টাকা খেয়ে শুধুমাত্র বিবেকহীন ভাবে ভোটচোরদের পা চাটা কুকুর হিসেবে জীবন পার করার জন্য‘
রোমানা আক্তার রুমকি (৩০,দোগাছি, পাবনা সদর) – ‘আল জাজিরার ভিডিও ও মুশতাক আহমদ এর মৃত্যুর পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। যে দেশে একজন সমকামী একটি পশুর চেয়েও অধম, যেখানে সমকামীতা দন্ডনীয় অপরাধ, যেখানে হিজড়ারা মানুষের পর্যায়ে পড়েননা, যেদেশে সরকারের সমালোচনা করলে সাইবার ট্রাইবুন্যালের সন্ত্রাসী বিচারকরা, যারা টাকা খেয়ে বিচারক হয়েছেন এবং টাকা খেয়ে বিচার করেন, ঝাপিয়ে পড়েন যেকোনো নিরস্ত্র অসহায় মানুষের ওপর, সেদেশে আল জাজিরার ভিডিওতে যা উঠে এসেছে তা সহ্য করবার মতো নয়। আমি এখনো এই সরকারের উৎখাত-এর দাবি জানাই। আমি ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটিকে এগিয়ে আসতে বলি বা সমস্ত ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক বাতিল করতে বলি এবং এই সরকার অপসারণে অভূথ্যান ঘটাতে সবাইকে অনুরোধ করি।’
মিজানুর রহমান (৩৩, গোলাপগঞ্জ) বলেন, ‘আল জাজিরা স্পস্টত প্রমাণ করে এই দেশের অবস্থাটা কতটা শোচনীয়। এই তথ্য চিত্রের মাধ্যমে হাসিনা ও তার ভোট চোর সভাসদদের ব্যাপারে আমাদের সব জানা হয়ে গেছে। এখন ভালোয় ভালোয় জনতার কাছে ক্ষমতা দিয়ে এদের পালিয়ে যেতে হবে তা না হলে এমন ভাবে গদি থেকে নামানো হবে যে তার পরিণতি হবে হাসিনার বাপের মত। গুষ্টিসহ শেষ। জনতা রেগে গেলে তারা ছেড়ে দেবে না’
উম্মা কুলসুম নারগিস বানু (৩৯, বনানী, ঢাকা), একজন ব্লগার ও মানবাধিকার অধিকার কর্মী। তিনি বলেন যে, ‘এই খুনী হাসিনাকে গদি থেকে না নামালে আসলে কোনো আলোচনা অথবা সমালোচনা, সব কিছুই সময় নষ্ট। আগে এই সরকারকে গদি থেকে নামান তারপর অন্য কথা। আল জাজিরা বাংলাদেশের শুধু হাজার ভাগের একটা ভাগ মাত্র দেখিয়েছে। অনেক কিছু আছে যা দেখলে বিশ্ববাসীর মাথা ঘুরে যাবে। আল জাজিরার উচিৎ বাংলাদেশের ঘুষ ও দূর্নীতি নিয়ে কিছু করা। বিশেষ করে হাসিনা কিভাবে টাকা লুটে পুটে খায় সেই ব্যাপারটা’
মোঃ রাজিম হোসাইন (৩০, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর) তার মন্তব্যে বলেন – ‘আল জাজিরার ভিডিও দেখে আমি নির্বাক হয়ে গেছি। আমার মনে হয় দেশের মানুষের কিছু একটা করা উচিত। আর কতো এগুলো সহ্য করা যাবে? মুশতাক লোকটাকে মেরেই ফেলল! আমার দল বিএনপি আর রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে পদে পদে দমন নিপীড়ণ করলো এবং হত্যা করলো। এখন দেশে আর বিএনপি জামায়াত নেই। এখন আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু। এই জালেম সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ভাওতা ধরে, এই সাইবার ট্রাইবুন্যালের পিশাচ, ইতর, ঘুষখোর বিচারকদের ব্যবহার করে জুলুম নির্যাতন করছে অকথ্য। সময় এসেছে আবারো এই শেখ পরিবারকে চিরতরে বিনাশ করার। এক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জেলখানায় বসে বসে বাতাস মারা ছাড়া এরা কী করেছে দেশের জন্যে। ধিক এদের! হত্যার রাজনীতি চাই না, কিন্তু শেখ পরিবারকে ফাঁসিতে তোলা হোক!’
মোঃ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার (৩৬, মোল্লার গাঁও, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট)বলেন – ‘আল জাজিরা প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছে। কিন্তু পুরোপুরি পারেনি। আসল বাস্তবতা আরো অনেক খারাপ। এই আজিজ শয়তান আর হাসিনা ইবলিশ আমার মতো জামায়াত সমর্থক মানুষদের জীবন দফা রফা করে দিয়েছে। আমার ভাইকে গত দুবছরে পাঁচবার জেলে পুরেছে শিবির করে বলে। আমার পরিবার পদে পদে লাঞ্ছিত। আমাদের রাজনীতি করবার অধিকার পর্যন্ত কেঁড়ে নিয়েছে এই বদজাতের দল। আজ পরিতাপ নিয়ে ভাবি – এই জালের সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ গড়ে তুলতে হবে। ঈমানী জিহাদ। হাসিনারা মুর্তাদ, কাফির বংশ। এরা হুজুর ধরে, মোল্লা মারে। এদের হাতে দেশ থাকলে আল জাজিরার মতো আর বাকিরাও একের পর এক এইসব প্রতারণার তথ্য বের করতে থাকবে। এমনকি তথাকথিত সেকুল্যাররাও যে এই আওয়মী দোজখ থেকে মুক্ত নয়, তার প্রমাণ মুশতাক আহমদ। একেও মেরে ফেলল এরা শুধু এদের বিরুদ্ধে কয়েকটা লাইন লিখলো বলে। আমি মুসলিম উম্মাহর কাছে উদাত্ত আহবান জানাই এই আওয়ামী সরকার, ভারতের দালাল্, এই মুসলিম-হত্যাকারী সরকারকে আর বাড়তে দেবেন না। এখনই অভিযান চালান। ধ্বংস করে দিন এই হাসিনা পরিবার। আল্লাহ আমাদের পুরষ্কৃত করবেন।’
মোঃ আল-আমিন কায়সার (৩১, ধানমন্ডি, ঢাকা) – ‘ঢাকা, ধানমন্ডি তে ছাত্রদল (বিএনপি স্টুডেন্ট উইং) করতাম কিশোর বয়স থেকে এবং এখনো সমর্থন করি এবং করি যাবো। এই সূত্রে এইদেশে দেখেও বাংলাদেশে একাধিক মামলা আমার বিরুদ্ধে হয়েছে, সে নিয়ে হেনস্থা, হয়রানি, নাজেহাল-ও কম হয়নি, হচ্ছিনা। তবে সেটি ভিন্ন ব্যাপার। সম্প্রতি আল জাজিরা রিপোর্ট দেখে কিছু কথা না বলে থাকতে পারছিনা, তাই আজ বলছি। সেই প্রতিবেদনটি দেখার পরে সব সময়ে বাংলাদেশ কে নিয়ে যে আগে থেকেই দুঃশ্চিন্তা তা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। আজ যদি আমরা চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং ইস্ট আফ্রিকার স্বৈরশাসন অনুকরণ করি বিরোধীদল গুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে, মানুষের ভোটাধিকারকে একটা মশকরাতে পরিণত করে, এবং সরকার-দলের সমালোচকদের কারাগারে হত্যার মাধ্যমে, তাহলে ঐ স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে আমাদের পার্থক্য কি। আমি মনে করি এই সরকার, এই আওয়ামী লীগ যতদিন না ক্ষমতা থেকে উৎখাত হচ্ছে, ততদিন দেশে আমরাও ফিরতে পারবো না, যারা আছেন তারাও শান্তিতে থাকতে পারবেননা। দুঃখ থেকেই মনে হয় বলি বঙ্গবন্ধুকে ব্যঙ্গ করার মতো বন্ধু ভাবার অবকাশ নেই। বঙ্গবন্ধু এক ঈশ্বরের নাম। কোনো মানুষকে এমন ঐশ্বরিক রূপ দেয়াটা ঘোরতর বাজে কাজ। যা আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছে। মুশতাক আহমেদ-এর মৃত্যুর জন্যে শেখ পরিবার দায়ী। অনেকেই শেখ পরিবারের সদস্যদের হত্যায় যারা মর্মাহত। আমি তাদের বলি – আপনার এই শেখ পরিবারের কারণে যারা মারা গেছেন, তাদের দিকে তাকান। তাহলে আপনাদের অশ্রু কুম্ভীরাশ্রুতে পরিণত হবে। আল জাজিরাকে ধন্যবাদ।’
মোঃ মাসুম সাজ্জাদ (৩২, চিলাহাটি, নীলফামারি)- ‘আমার ভিডিও মন্তব্যে আমি আমার মতামত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে আরো একটা বিষয়ে আমি অল্প কিছু বলতে চাই। মুশতাক আহমেদের মৃত্যু আমাকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে এবং উদ্বিগ্ন করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্যে চরম লজ্জাজনক একটি ব্যাপার এবং আমাদের কোর্টগুলোর মারাত্মক পক্ষপাতমূলক এবং অন্যায় বিচার এর একটা জ্বলন্ত সাক্ষ্যনামা হয়ে থাকলো। আমি সুস্পষ্ট করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং সাইবার ট্রাইবুন্যাল এর বিলুপ্তি চাই এবং মনে করি আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্ব মহল এর বিচার হওয়া উচিত। শেখ হাসিনার যদি এক ফোঁটাও আত্মসম্মানবোধ থাকে, তাহলে উনার পদত্যাগ করা উচিত। আফসোস, তা উনার নেই।’
মোঃ মতিউর রহমান রকি, (২৯, পশ্চিম কাজল শাহ, সিলেট পোস্ট অফিস, সিলেট সদর, সিলেট) বলেন – ‘সালাম জানবেন। ধন্যবাদ আপনাদের পত্রিকার সাহসী পদক্ষেপের জন্যে। বহুদিন ধরেই কিছু লিখতে চাই, বলতে চাই, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারিনা ভয়ে। কিন্তু ভাবলাম, নিজের দেশে যেহেতু যেতেই হবে একদিন, সেই দেশটাকে নিরাপদ ও সুন্দর করবার জন্যে দুটো কথা না বললে নিজের কাছে একদম-ই ছোট হয়ে থাকবো। আল জাজিরা ডকুমেন্টারি দেখে আমার মনে ঘৃণা চলে এসেছে। বাংলাদেশ একটি দুর্নীতিপরায়ণ দেশ। এটি সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু আমাদের দূর্নীতির যে কালচার এটা এত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়বে, এভাবে নগ্নভাবে শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে ডুবিয়ে দেবে, এইটা ভাবতে পারিনি। কিভাবে একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কনভিক্টেড আসামীদের পৃষ্ঠপোষকতা করে? জেনারেল আজিজ তো একজন পোষা গার্ড ছাড়া কিছুই নয়। এই লোক ২০১৪ আর ২০১৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সুরক্ষা দিয়েছে – এই সুরক্ষা মানে কী আমরা জানি না? পুরাই ভোটচুরি। জোরপূর্বক বিরোধী দলগুলোকে দমন করা থেকে শুরু করে, নাম-কা-ওয়াস্তে নির্বাচন দিয়ে ঐ নির্বাচন চুরি করা, সরকার, হাসিনা ও শেখ মুজিব এর সমালোচনা করলে মানুষের টুঁটি চেপে ধরা, জেলে পুরে দেওয়া – এই সব কিছুই ফ্যাসিবাদের উদাহরণ। সামরিক বাহিনী হয়ে গেছে ম্যান্দা মারা পাপেট। আওয়ামী সরকারকে দরকার হলে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে উতখাত করতে হবে। আমি যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারীর সরাসরি হস্তঃক্ষেপ কামনা করছি। জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে বাতিল করুক। এভাবে চলতে দেয়া যায়না। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করতে হবে এখনই এবং এর সাথে এই দুর্নীতিবাজ সাইবার ট্রাইবুনালকেও বাতিল করে দিতে হবে এবং এর বিচারকদেরকে একটা নিরপেক্ষ আদালতে বিচার করতে হবে। এরা সংবিধান ও আইনের রক্ষক না, এরা সরকারী দালাম, ও সুশাসনের ভক্ষক। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে রক্ষা করবার জন্যে আমি এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলকে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানাই যেন মুশতাক সাহেবের মতো মানুষের বেঘোরে মরতে না হয়।’
সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ, তাদের এইসব কুকীর্তি নিয়ে মন্তব্য করেছেন নুরুল ফারুক শাকের, (৩৫, সিলেট,বড়লেখা) ‘আমার কথা হচ্ছে, হাসিনাকে যদি ঝাড়ে আর বংশে শেষ করা না যায় তাহলে আর আমাদের মুক্তি নেই। হাসিনার বাবার মত হাসিনাকে শেষ করতে হবে’
মোঃ বিন রাজিম (৩৩, সিরাজদীখান, মুন্সীগঞ্জ ও উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা) – ‘ধন্যবাদ আপনাদের পত্রিকায় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্তব্য আহবান করবার জন্যে। আমার নাম মোঃ বিন রাজিম, আমার জন্ম সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জে। বিলেতে পড়তে এসেছিলাম কিন্তু বাংলাদেশে চরম দুঃশাসন চলছে বিধায় দেশে ফিরে যাওয়া নিরাপদ বোধ করিনি। এখন ধারণা হচ্ছে – এই জালিম সরকারকে না সরালে নিজের মাতৃভূমি হয়তো আর কখনো দেখতেও পারবো না। আমি গভীর আতঙ্ক নিয়ে আল জাজিরার ফিল্মটি দেখলাম এবং আওয়ামী সরকারের দুর্নীতির গভীরতা দেখে তাজ্জব বনে গেলাম। এদের কোর্ট-মার্শাল হওয়া দরকার। আমি এখন বুঝতে পারি কেন শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর মানুষ আন্দোলন করেনি। শেখ মুজিব-এর বাকশাল এবং হাসিনার সরকারের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? জাতির যে মূল্যবোধের অবক্ষয়, সেটি তো খুবই মারাত্মক। রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই ব্যপারটা ঢুকে গেছে যে – আওয়মী লীগ না করলে দেশে থাকা যাবে না। বিএনপি আর জামায়াতকে যেভাবে ট্রিট করা হলো এবং হচ্ছে এটি তো স্বৈরাচারের চেয়েও খারাপ। নির্বাচনচুরি থেকে শুরু করে জনগণের টাকা লুটপাট, কিইনা হচ্ছে? হুজুরদের যেভাবে টার্গেট করা হলো, তাতে এইটা মুসলিম ম্যাজরিটি দেশ তো আর নাই। এইটা ভারতের দালাল রাষ্ট্র। হাসিনা নিজে কী পরিমাণ লাভবান হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মুশতাক লোকটাকে যে মরতে হলো, কেন? বাংলাদেশের বিচার বিভার যদি এমন অসত না হতো, তাহলে তো এইটা হয় না। এদের অসৎ না হয়েও তো উপায় নাই। নাহলে তো সরকারী বাহিনীর রোষানলে পড়তে হবে। আমার মনে হয় আরেকটা ৭৫ আসন্ন। শেখ পরিবারকে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি বিনাশ না করলে হবে না।’
নূর মিয়া (৩৫, ওসমানী নগর, সিলেট) ‘আমার প্রথম দাবী হচ্ছে – এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করা লাগবে। এই আইন-এর সুযোগ নিয়ে এই আওয়ামী জুলুম আর কতদিন সহ্য করবে মানুষ? এরা নাকি সেকুল্যার! মুশতাক লোকটাকে তো মেরেই ফেললো এরা! মুশতাক এর হত্যাকারী হলো এই আইন আর এই আইন এর কারিগর হাসিনা সরকার! আল-জাজিরার ডকুমেন্টারি তো কোনো কিছু মিথ্যা দেখাইনি! এটাই সত্য! সবকয়টা মাফিয়া! হাসিনা হলো গ্যাঙ্গস্টার আর বাকিগুলো মাফিয়া! এদের কোর্ট-মার্শাল হওয়া দরকার! ফাঁসি দেয়া দরকার! বিশ্বের দরবারে আর কতো আমাদের মাথা নিচু হবে! হাসিনার বাপ দেশটারে একনায়কতন্ত্র করবার ফর্মূলা দিয়ে গেছে, আর তার কন্যা এইটারে বানাইলো একটা একদল ভিত্তিক রাজনীতি। এদের যদি এতো সাহস থাকতো, তাহলে এরা সমকামী, উভকামী, ট্রান্সজেন্ডার এদের সম-অধিকার দিতে পারে না কেন? এদেরকে অমানুষের মতো কেন ট্রিট করা হয়? কেউ কি ইচ্ছা করে সমকামী হয়? এই বেসিক ব্যাপারটা এই বঙ্গবন্ধু সরকার বুঝে না। অথচ সবজায়গায় শুধু ডিজিটাল কিন্তু চিন্তা ভাবনা সব স্বৈরতান্ত্রিক! ধিক এদের! ধিক এই সাইবার ট্রাইবুনালের পাপেটদের!! মুক্তিযুদ্ধের মাসে এইভাবে দেশের সরকারের সমালোচনা করতে কারই বা ভাল লাগে? কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাস বলেই আমাদের সকলের সোচ্চার হওয়া উচিত। এই অশ্লীলতা, এই ছাত্রলীগের ধর্ষণ করা যেকোনো নারী বা মেয়েকে, বাংলার মানুষের টুঁটি চেপে ধরা অসভ্য আইন দিয়ে – এগুলো বন্ধ করতে হবে। এই সরকারকে বলপ্রয়োগ করে উতখাত করা লাগবে দরকার হলে। বাংলাদেশের সমস্ত সমকামী, উভকামী, এবং ট্রান্সসেক্সুয়ালদের সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জেনারেল আজিজ এর জেল হতে হবে এবং হাসিনাকে রাষ্ট্রবিরোধী মামলায় আসামী করতে হবে। তাহলেই কিছু হবে। ’
ব্লগার বিপ্লব পাল বলেন (৪২,হবিগঞ্জ), ‘এই সরকারের আমলেই আমার ভাইটা খুন হয়েছে। আমরা জানি এই খুন করেছে মৌলবাদীরা। কিন্তু আওয়ামী পুলিশ এই খুনের তদন্ত তো করেই নি, বরং আমাদের বার বার ঘুরিয়েছে। এই সরকার আসলে মানুষের অধিকার, মানুষের স্বাধীনতা কিছুতেই বিশ্বাস করে না। মানুষের স্বাধীনতাতে বিশ্বাস করলে কি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে হয়? এই বাংলাদেশকে তারা খুনের এক স্বর্গরাজ্য করে ফেলেছে যেখানে খুনীরা সদর্পে ঘুরে বেড়ায় আর খুনীর শিকার ব্যক্তির পরিবার হয় হয়রানির শিকার। আর সেটার প্রকৃষ্ঠ প্রমাণ আমরা দেখতে পাই আল জাজিরার তথ্য চিত্রে। আমরা দেখতে পেলাম সেনা প্রধানের দুই খুনী ভাই কিভাবে সরকারী আশ্রয় আর প্রশ্রয়ে নির্বিকার ঘুরে বেড়ায়, ব্যবসা করে এবং দেশে এসে ক্যান্টনমেন্টে পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ায়। এই বাংলাদেশ দেখার জন্যই কি ৩০ লক্ষ মানুষ রক্ত দিয়েছে দেশের স্বাধীনতার জন্য? এই কি আমাদের প্রাপ্য ছিলো? খুনী হাসিনার অধীনে বেঁচে থাকাটাই কি আমাদের নিয়তি?”
জনতার এইসব আহাজারি, এইসব ভয়ানক আর্তি কি আদৌ পৌঁছায় এই সরকারের কাছে? সেদিকে ইঙ্গিত করে মোঃ আশিফ হোসাইন (৩৩, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা) বলেন, ‘আপনাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমার এই ব্যাপারগুলোতে বক্তব্য খুব স্পষ্ট। হাসিনাকে গদি ছাড়তে হবে। এর বাড় বেশি বেড়েছে। দরকার হলে জোর করে গদি-ছাড়া করতে হবে। তার জন্যে যা করা লাগে তা-ই করতে হবে। আমি আল-জাজিরাকে সাধুবাদ জানাই এবং আল-জাজিরা ও তৎসম প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে বলি এই সরকারের অধীনে কিভাবে সংখ্যালঘুরা তীব্রভাবে নির্যাতিত হচ্ছে – বিশেষ করে এলজিবিটি কমিউনিটির লোকেরা যাদের মানুষ বলে গণ্য করা হয় না এবং নিজেদের পরিচয়ে সাধারণ জীবন যাপন করতে গেলে যারা অপরাধী বলে আখ্যায়িত হবেন। আমার মতো সাধারণ মানুষেরা আর ভীত নই, সন্ত্রস্ত নই। ‘যা হবার হবে’ ধরণের মানসিকতা হয়ে গেছে অনেকেরই’
মোঃ রুকন মিয়া (৩২,মৌলভীবাজার, সিলেট)- ‘সাম্প্রতিক কিছু বিষয়ে এই পত্রিকার যে মন্তব্য আহবান, সেটিতে সাড়া দিয়ে আমি কিছু বলতে চাই। কিছু ভিন্ন ভিন্ন প্রসঙ্গে আমি বলবো, কিন্তু এইসব কিছুরই কেন্দ্রে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী অসভ্যতা। যেমন বর্তমান সেনা প্রধান আজিজের যে অলৌকিক উত্থান এ-কে দলীয় মদদে সন্ত্রাসীর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আর কি-ইবা বলা যায়? আল জাজিরা দাবি করেছে আজিজের সন্ত্রাসী সহদোর হাসান এবং হারিস দুজন বাংলাদেশ এ এসেছিল দণ্ডপ্রাপ্ত অবস্থায়। শুধু ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি যে তথ্য আর ছবি পেলাম টা কি আমাদের পুলিশ, সাংবাদিক , গোয়েন্দা আর্মি কেউ দেখতে পায়নি নাকি তারা দেখেও দেখেনি ? অবশ্যই তারা দেখেও দেখেনি। এটা এখন একদম স্পষ্ট যে দেশে আইন সবার জন্য সমান নয়। এই দেশে বসে যখন দেশের অবস্থা দেখি আর তুলনা করি তখন লজ্জায় মাথা কাটা যায়। আমাদের প্রধান মন্ত্রী তার সাবেক বডি গার্ড কে ফাঁসি থেকে রেহাই দিয়ে পুরষ্কার দেন, এর বড় স্বজন প্রীতি আর কি হতে পারে ? এই দেশ থেকে আমরা আর কোনও সুবিচার আশা করতে পারিনা। এগুলো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-টাইপের গণতন্ত্র। সাধে কী বাংলার মানুষ চুপচাপ শেখ মুজিব হত্যা মেনে নিয়েছিলো? না। তারা অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। একই জিনিস এই হাসিনার ক্ষেত্রেও ঘটবে। মুশতাক সাহেব কে যে জঘন্য ব্যবহার পেতে হলো, তার নিজের জীবন দিয়ে, এটা একমাত্র এই ইতর অসভ্য হাসিনা সরকারের আমলেই সম্ভব। এরা জনতার মুখে কুলুপ দেয়ার জন্যে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বানাইলো এবং যে-ই তাদের দুর্নীতির বিরূদ্ধে কথা বলে, তাকেই তারা ধরে, বা পাকরাও করে, বা মেরে ফ্যালে, তাদের পোষা পুলিশ-র্যাব দিয়া। মুশতাকরে সিমপ্লি মেরেই ফেলল, এর জন্যে শেখ হাসিনা দায়ী, এর জন্যে রাষ্ট্র দায়ী। আমি ফরেন কমিউনিটিকে বলবো এই দেশে আর রেমিটেন্স না পাঠানোর জন্যে। আমি আন্তর্জাতিক মহলকে বলবো বাংলাদেশে আর কোনো সাহায্য না পাঠানোর জন্যে এবং সরকারের ওপর সবরকমের চাপ সৃষ্টি করবার জন্যে যেন এই অরাজকতা বন্ধ হয়।’
আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী (৪৩, মৌলভীবাজার- ‘বলা বাহুল্য, এই দুটো বিষয় আমাদের জন্যে জাতি হিসেবে বেশ লজ্জার। আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে মাথা হেঁট হয়ে যায়। চিন্তা করা যায় যে একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী পরিবার আওয়ামী বর্ম? চিন্তা করা যায় যে সে-ই সন্ত্রাসী পরিবারের অন্যতম সদস্যকে বাংলাদেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং নির্বাচনে বিজয় সুনিশ্চিত করবার অভিসন্ধিতে? বিজিবির প্রধান হয়ে এই সন্ত্রাসী পরিবারের সামরিক সদস্য নির্বাচন উপহার দিয়েছে শেখ হাসিনাকে, এবং তার পুরষ্কার হিসেবে সে নিজে হয়েছে সেনাপ্রধান, তার সন্ত্রাস্রী ভাইদের অপরাধের ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছে, তৈরি করেছে অর্থের সাম্রাজ্য বিদেশে। এই হলো বাংলাদেশ! মুশতাক সাহেবের মৃত্যূতে তারাই অবাক হয়েছে, ক্ষুদ্ধ হয়েছে, যারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেনা বা জেনেও না জানার ভান করেন। আমি শোকতপ্ত হয়েছি তাঁর মৃত্যুতে, কষ্ট পেয়েছি বাকস্বাধীনতার ভুলন্ঠনে, কিন্তু অবাক হইনি। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার সময়ের দল, তারা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে বলে দাবী। সেই ঋণের বোঝা আর কতকাল বইবে এই দেশ কে জানে?’
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সাধারোন জনতা ঠিক যেভাবে আল জাজিরার তথ্যচিত্রটিকে দেখছে, ঠিক একইভাবে সরকার অথবা রাষ্ট্র ব্যাপারটিকে দেখছে না। এই যে রাষ্ট্রের সাথে জনতার এই মানসিক ও চিন্তাগত দূরত্ব সেটার কারন কি? এই কারন কি আসলে সরকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলে মনে করে? তারা কি মনে করে যে তাদেরও একটি জবাব্দিহিতার দায় রয়েছে জনতার কাছে। যদিও আপাতঃ দৃষ্টিতে সরকার এই জবাব্দিহিতাকে থোরাই কেয়ার করে বলেই এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মনে হয়েছে। তা না হলে আল জাজিরার এই ভয়াবহ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানকে কি তদন্তের আওতায় আনা যেতো না? এমন একটি তদন্ত হলে সাধারোন জনতা হয়ত এটাকে স্বাগতও জানাতো। কিন্তু তা না করে সরকার ন্যাক্কারজনকভাবে এই বিষয়টিকে এড়িয়ে গিয়ে যত ধরনের মিথ্যাচার রয়েছে, সেটিই করে গিয়েছেন একের পর এক।
একটি ব্যাপার এই মন্তব্যগুলো থেকে লক্ষ্যনীয় যে, শুধুমাত্র রাষ্ট্র প্রধান বা সেনাবাহিনী-ই নয়, বাংলাদেশের সাধারণ জনতা আদতে কিন্তু বিচার বিভাগের উপরেও প্রবল্ভাবে আস্থাহীনতার সংকটে ভুগছে। বিশেষ করে লেখক, প্রকাশক সর্বপোরি মত প্রকাশের ব্যাপারে সরকারি যে হস্তক্ষেপ সেটিকে কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বলয়ে সরকার এক ধরনের সীমানা তৈরী করে দিয়েছে যেটিকে ক্রমাগতভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে ঢাকায় স্থাপিত সাইবার ট্রাইব্যুনাল। বিশেষ করে এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক আশ সামসছ জগলুল হোসেনের ব্যাপারেও আওয়ামী দালালির অভিযোগ উঠেছে একের পর এক। পুরো বিচারবিভাগ-ই এই আওয়ামী নিয়ন্ত্রিত বিচারের আওতায় চলে এসেছে। বাক-স্বাধীনতা থেকে শুরু করে জনতার ভোট স্বাধীনতা, সব কিছুই হরন করেছে এই সরকার। মানুষের যেন নাভিশ্বাস উঠে গেছে এই নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রের অধীনে থাকতে থাকতে।
আমরা সরকার-পক্ষীয় অনেক মন্তব্যও পেয়েছি যেগুলো স্পষ্টতঃই সরকার-সমর্থিত রাজনৈতিক দলের অনুসারীদের বলে বোঝা যায়। এগুলোতে আমাদের সম্পাদকীয় বিভাগ ও এই উদ্যোগকেও ছোট করে দেখানোর চেষ্টা আমরা খেয়াল করেছি। উদ্বেগের বিষয় এই যে – আমাদের এই মতামত জরিপের কোনোকিছুই প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে ভাল কোনো ইঙ্গিত বহন করে না। এটি খুবই স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রীকে মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিপদ আসন্ন বলে মনে হয়েছে এই জরিপে।
আজকে এখানে প্রকাশিত জনতার বক্তব্য যেন বক্তব্য নয়, এক একটি আগুনের হলকা। প্রত্যেকের ক্রোধ আর ক্ষোভ লক্ষ্যনীয় ব্যাপার যদিও তাদের অনেকের মতের সাথে আমাদের মতের মিল নেই। কিন্তু আমরা এসব প্রত্যেকটি মতকেই তুলে ধরতে চেয়েছি সাধারোন জনতার কাছে যে, আসলে সত্যকার অর্থে মানুষের ভাবনা কি এই সরকার সম্পর্কে।
আমাদের এই লেখা, জনতার এই মতামত, জনতার এই ক্ষোভ, আশা করি সরকার আমলে নিয়ে নিজেদের শোধরাতে চেষ্টা করবেন এবং অবিলম্বে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জনতার চাওয়ার প্রতি সম্মান জানাবেন। তা না হলে হয়ত একদিন এই জনতাই আইন নিজের হাতে তুলে নেবে, যেই আইন তারা শেখ হাসিনার পিতার ক্ষেত্রে তুলে নিতেও কুন্ঠাবোধ করেনি।
সংশোধনী (০৬/০৩/২০২২) – উপরোক্ত লেখা প্রকাশিত হয়েছিল ২২শে মার্চ ২০২১-এ। উপরোক্ত লেখায় আল-জাজিরার অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টার্স মেন শীর্ষক ডকুমেন্টারির প্রকাশ/সম্প্রচার তারিখ দেয়া হয়েছিল ২রা ফেব্রুয়ারী ২০২১, যা সঠিক ছিল না। এটি প্রকাশিত হয় ১লা ফেব্রুয়ারী। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্যে আমরা দুঃখিত।
লেখাটি যারা যারা লিখেছেনঃ এম ডি ওবায়দুর রহমান খান, জনি জোসেফ কস্তা এবং ইশরাত রশিদ