কাঁদলেন মেসি
বার্সেলোনায় বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে কাঁদলেন লিওনেল মেসি। আর কাঁদালেন ন্যু-ক্যাম্পের বাইরে ভিড় জমানো সমর্থকদের। ২১ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বার্সেলোনা ত্যাগ করছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কথা শুরু করার আগেই কেঁদে ফেলেন মেসি। এরপর বলেন, ‘এভাবে বিদায় নিতে হবে কখনো ভাবিনি। মনে হয় না কেউই ভেবেছে। চেয়েছিলাম মাঠভর্তি দর্শকের অভ্যর্থনার মধ্যে বিদায় নিতে। দেড় বছর ধরে মাঠে দর্শকদের দেখতে পাইনি।তাদের না দেখে বিদায় নিতে হচ্ছে। এটাই বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তবে আমি এখানে ফিরবো, এটা আমার ঘর। আমার সন্তানদেরও আমি কথা দিয়েছি, আমি এখানে আবার ফিরে আসবো। ১৩ বছর বয়সে এখানে এসেছিলাম আমি। আজ ২১ বছর পর ক্লাবটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমি, আমার স্ত্রী, আমার তিন কাতালান-আর্জেন্টাইন সন্তান…। ক্লাবটাতে যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত।’
গতকাল বার্সেলোনায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেরার্ড পিকে, সার্জিও বুসকেটস, জর্ডি আলবাসহ মেসির দীর্ঘদিনের সতীর্থরা। মেসি বলেন, ‘গত বছর ব্যুরোফ্যাক্স নিয়ে নাটকের সময় (ক্লাব ছাড়তে হলে) আমি কী বলবো সেটা ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু এ বছর সবকিছু অনেক ভিন্ন। এটা আমার ঘর, আমাদের ঘর। আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটাই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আজ সবকিছু ছেড়ে দিতে হচ্ছে।’ গত বছর ব্যুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছা জানিয়ে বার্সেলোনাকে চিঠি দিয়েছিলেন মেসি। তবে চুক্তির বেড়াজালে আটকে যান তিনি।
কি হয়েছে আসলে? গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের উত্তরে মেসি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে, সব বিষয়ে সম্মতি হয়ে গেছে। এরপর একেবারে শেষ মুহূর্তে জানা গেল লা লিগার নিয়মের কারণে চুক্তি নবায়নকে আনুষ্ঠানিক করা সম্ভব হচ্ছে না। এটাই হয়েছে।’
ক্লাবের পক্ষ থেকে কি চেষ্টা হয়নি? মেসি বলেন, ‘ক্লাবের ভেতরে কী হয়েছে আমি বলতে পারছি না। লাপোর্তা (বার্সা সভাপতি) বলেছেন, চুক্তি নবায়ন হয়নি লা লিগার নিয়মের কারণে। আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি, আমি এখানে থাকার জন্য যা কিছু করা সম্ভব সব করেছি। থাকতে চেয়েছি আমি। গত বছর চাইনি, সেটা বলেছিও। এ বছর আমি থাকতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি।’ মেসির সামনে এখন নতুন অধ্যায়, নতুন চ্যালেঞ্জ। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার বলেন, ‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি এই ক্লাবটা, এই জায়গাটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমার জীবন পুরো বদলে যাচ্ছে। এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। বড় বদল এটা, আমার পরিবারের জন্যও এই শহর ছেড়ে যাওয়া কঠিন হবে। তবে আমরা ঠিকঠাকই থাকবো। কঠিন চ্যালেঞ্জ এটা, তবে এটা মেনে নিতেই হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে।’
পিএসজিতেই যাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে মেসি বলেন, ‘পিএসজি একটা সম্ভাবনা। তবে সত্যি বলতে আজ পর্যন্ত কারও সঙ্গেই কিছু চূড়ান্ত হয়নি। (বার্সার পক্ষ থেকে মেসির চুক্তি নবায়ন না হওয়ার) বিবৃতি যখন এসেছে, এরপর থেকে অনেক ফোন এসেছে, অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আমরা এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মেসি বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত এটা, কোনো সন্দেহ নেই। ক্যারিয়ারে অনেক কঠিন মুহূর্ত এসেছে, অনেক হার সয়েছি, কিন্তু ওসবের পর অনুশীলনে ফেরার, জবাব দেয়ার সুযোগ থাকে। এখানে (এই কঠিন মুহূর্তের) তো জবাব দেয়ার কিছু নেই। এই ক্লাবে আমার সময় শেষ। অবশ্যই এটা আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। ক্লাবটা ছাড়তে হচ্ছে, এটাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ক্লাবটাকে আমি ভালোবাসি। এমন একটা মুহূর্ত আসবে, এটা আমি কখনো ভাবিনি। মিথ্যা বলছি না, সব সময়ই মনে যা আছে সেটা বলার চেষ্টা করেছি, সত্যিটা বলার চেষ্টা করেছি। গত বছর আমি ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলাম, এই বছর তা নয়। এ কারণেই কষ্টটা বেশি হচ্ছে।
মেসির আমলে পৃথক ৩৫টি শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। তার অভাব কীভাবে পূরণ করবে ক্লাবটি? মেসি বলেন, ‘বার্সা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাব, দারুণ একটা ক্লাব। খেলোয়াড় আসবে-যাবে। লাপোর্তা যা বলেছেন, যে কারও চেয়েই ক্লাব বড়- এটা সত্যি। সমর্থকেরা এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, সব সময়ই এমনটা হয়েছে। ক্লাবে অনেক দারুণ খেলোয়াড় আছে, সবকিছু শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবেই চলবে।’
লা লিগার সভাপতি হাভিয়ের তেবাসকে নিয়ে মেসি বলেন, ‘আমি শুধু জানি লা লিগার কারণে এটা (বার্সায় থাকা) সম্ভব হয়নি, ক্লাবের দেনার কারণে সম্ভব হয়নি। ক্লাবের পক্ষে দেনা আর বাড়ানো সম্ভব নয়। তেবাসের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই, তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছেই মাত্র কয়েকবার। প্রতিবারই আলোচনাগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। তেবাসের সঙ্গে আমার কোনো বিবাদ নেই।’
মেসি বলেন, সবকিছু চূড়ান্ত্ত হওয়ার পর গত কয়েকদিন খুব বেদনার ছিল। এখন যখন আমি বাড়ি ফিরবো, সবকিছু আরও খারাপ লাগবে। তবে এই মুহূর্তটাতে আমার পরিবারের আরও কাছে থাকা দরকার, যাদের ভালোবাসি তাদের সঙ্গ দরকার। ফুটবল খেলে যাওয়া দরকার, যে কাজটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। একবার ফুটবল খেলতে শুরু করলে সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ২০০০ সালে ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনার ফুটবল একাডেমি ‘লা মাসিয়া’য় যোগ দেন লিওনেল মেসি। ২০০৪ সালে তার অভিষেক হয় বার্সেলোনা সিনিয়র দলে। বার্সেলোনায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল করেছেন মেসি।