ফেদেরার কাঁদলেন কাঁদল টেনিস
মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। সব কিছুই ছিল পূর্বনির্ধারিত। তারপরও বিদায়ের সুরে ছুঁয়ে গেল আবেগ। সাফল্যরাঙা ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নে শেষবারের মতো কোর্টে নামলেন রজার ফেদেরার।
জুটি বাঁধলেন এতদিনের প্রবল প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদালের সঙ্গে। শেষটা যদিও বিজয়ীর বেশে হলো না। তাতে কী। ফেদেরার যে চ্যাম্পিয়নই।
তার দুই যুগের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারের পুরোটাই মহাকাব্য। নিয়মিত না হলেও দীর্ঘদিন চোটের সঙ্গে লড়াই করে খেলে যাচ্ছিলেন ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সুইস কিংবদন্তি। কিন্তু একটা সময় তো থামতেই হতো, বলতেই হতো আর নয়। ৪১ বছর বয়সে এই উপলব্ধি হওয়ার পর আর দেরি করেননি তিনি। ১৫ সেপ্টেম্বর জানিয়ে দেন, পেশাদার টেনিসকে বিদায় বলার সময় হয়েছে। শুক্রবার রাতে লন্ডনের ওটু অ্যারেনায় সেটাই আনুষ্ঠানিক রূপ পেল লেভার কাপের দ্বৈতে টিম ইউরোপের হয়ে বন্ধু-প্রতিদ্বন্দ্বী নাদালের সঙ্গে কোর্টে নামলেন শেষবার। টিম ওয়ার্ল্ডের জুটি ফ্রান্সিস টিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে ৪-৬, ৭-৬ (৭/২), ১১-৯ গেমে হেরে শেষটা রাঙাতে পারেননি ফেদেরার।
তাতে টেনিসপ্রেমীদের অতৃপ্তি থাকার কথা নয়। ম্যাচ শেষ হতেই ফলাফলের গুরুত্ব মুহূর্তেই যেন ফিকে হয়ে যায়। শুরু হয় ফেদেরারের বিদায় নেওয়ার পালা।
দুই প্রতিপক্ষকে হাসিমুখে অভিনন্দন জানানোর পর নাদালকেও প্রথমে হাসিমুখে আলিঙ্গন করলেন। এরপরই মুখে বিষণ্নতা ভর করল ফেদেরারের। ভিজে উঠল চোখ। টিম ইউরোপের সতীর্থদের কাছে যেতেই বাঁধ ভেঙে গেল। নাদালকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কেঁদে ফেললেন। প্রিয় বন্ধুর বিদায়ে নাদালও পারলেন না নিজেকে ধরে রাখতে। টেনিসের বিখ্যাত বিগ ফোরের অন্য দুই কিংবদন্তি নোভাক জোকোভিচ ও অ্যান্ডি মারের পর কান্না সংক্রমিত হয় গ্যালারিতেও।
কোর্ট ও ফেদেরারের মধ্যে বিচ্ছেদের ব্যথায় কাতর ছিলেন সবাই। নিজেকে সামলে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দুকথা বলার পর আবার কেঁদে ফেললেন ফেদেরার। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘যে কোনোভাবে সময়টা আমরা পার করে দেব। দিনটা দারুণ। সবাইকে বলেছি আমি সুখী। খারাপ লাগছে না। শেষবারের মতো জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করেছি। সব কিছুই ছিল শেষবারের মতো। রাফার সঙ্গে খেলা এবং সব কিংবদন্তিকে এখানে পাওয়াটা দুর্দান্ত। সবাইকে ধন্যবাদ। অবিশ্বাস্য একটা যাত্রা ছিল।’
পেশাদার টেনিস ছাড়লেও ভক্তদের একটি সুখবর দিয়েছেন ফেদেরার, ‘এখানেই সব কিছুর শেষ নয়। জীবন জীবনের মতোই এগিয়ে যাবে। আমি সুস্থ আছি, ভালো আছি। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারও দেখা হবে। বিশ্বের অন্য কোথাও অন্য কোনো টেনিস কোর্টে।’