আগুন লাগার সময় লঞ্চে ছিলেন মালিক শামীম
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অগ্নিকাণ্ডের সময় শামীম আহমেদ নামের এক মালিক এমভি অভিযান-১০ লঞ্চেই ছিলেন। ইঞ্জিনরুমে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখে অন্য কর্মীদের মতো তিনিও লঞ্চ থেকে নেমে যান। লঞ্চের আরেক মালিক তাঁর ভাই রাসেল আহমেদ অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে গেলেও মালিক হিসেবে পরিচয় দেননি। হতাহতদের স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন মালিকপক্ষের ওপর ফুঁসে উঠলে তিনি সেখান থেকে ঢাকায় চলে আসেন।
লঞ্চের চার মালিকের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে। গত বুধবার রাতে সূত্রাপুরের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে শামীম ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এ দুজন গত ২৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হওয়া হামজালালের ভাতিজা। অন্য মালিক তাঁর আরেক ভাতিজা ফেরদৌস হাসান রাব্বি (১৬)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘শামীম স্বীকার করেন, ঘটনার সময় তিনি লঞ্চে ছিলেন। ইঞ্জিনরুমে আগুন লাগার পর তিনি নেমে যান। অন্য লঞ্চগুলোর চেয়ে তিন ঘণ্টা আগে পৌঁছানোর জন্যই তাঁরা অভিযান-১০ বেপরোয়া চালান। অনুমোদন ছাড়াই ৭২০ হর্স পাওয়ারের দুটি ইঞ্জিন লঞ্চে লাগানো হয় বলে তাঁরা স্বীকার করেন।’
সূত্র জানায়, সবার আগে গন্তব্যে পৌঁছতে ঘটনার দিন হামজালাল সদরঘাটে গিয়ে সুপারভাইজার আনোয়ার ও ভাতিজা শামীমকে লঞ্চটি দ্রুত চালানোর নির্দেশ দেন। লঞ্চে আগুন লাগার পর তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হলেও তাঁরা যাত্রীদের রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেননি।জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শামীম ও রাসেলকে নৌ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন মামলার সাত আসামি কারাগারে।
নিহত ও নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, লঞ্চের মালিকপক্ষকে রেহাই দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। অন্যতম মালিক হামজালাল গণমাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি ঘটনার তদন্ত দাবি করে তিনটি চিঠিও দেন। এরপর নৌ আদালতের মামলায় গ্রেপ্তার ও আত্মসমর্পণ শুরু হয়েছে। তাঁরা সব আসামিকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বরগুনা থানায় করা মামলায় তিন মালিককে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। ঝালকাঠি থানার মামলায়ও তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কম্পানির মালিক হামজালাল ও তাঁর তিন ভাই মৃত আব্দুস সাত্তার বেপারী, মৃত সিদ্দিকুর রহমান ও হাজি বাচ্চু বেপারী। ২৫ বছর ধরে তাঁরা লঞ্চ ব্যবসা করেন। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। মৃত দুই ভাইয়ের মালিকানায় এখন সন্তানেরা। সবাই পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের জয়চন্দ্র ঘোষ লেনে থাকেন। মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে শামীম ও বাচ্চু বেপারীর ছেলে রাসেল চাচার সঙ্গে ব্যবসা দেখভাল করেন। মৃত সিদ্দিকুরের ছেলে ১৬ বছর বয়সী ফেরদৌস হাসান রাব্বিও নৌ আদালতের মামলায় আসামি।
এডিসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রাব্বির বয়স ১৬ বছর। সে দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাবার সূত্রে নাম এলেও সে কোনো বিষয়ে সম্পৃক্ত ছিল না। এ কারণে তাকে গ্রেপ্তারে আমরা অভিযান চালাইনি।’
গতকাল রবিবার লঞ্চের ইনচার্জ চালক মাসুম বিল্লাহ ও দ্বিতীয় চালক আবুল কালাম নৌ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর ইনচার্জ মাস্টার রিয়াজ সিকদার ও দ্বিতীয় মাস্টার খলিলুর রহমান আত্মসমর্পণ করেন। এখনো সুপারভাইজার আনোয়ার, সুকানি আহসান ও কেরানি কামরুল পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঝালকাঠি থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার তিনজনকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। লঞ্চটিকে ঘাট থেকে সরিয়ে রেখে আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
লঞ্চযাত্রীদের স্মারকলিপি : আমাদের ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, গতকাল নৌপরিবহনে যাত্রীদের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য লাইফ জ্যাকেট, ফায়ারবল স্থাপনসহ আট দফা দাবিতে নৌমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। লঞ্চযাত্রীদের পক্ষ থেকে একটি দল ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামাল হোসেনের কাছে স্মারকলিপিটি জমা দেয়।