সাহাপাড়ায় ১৪ দলের নেতারা যা বললেন

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকান ও মন্দির পরিদর্শন করলেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

শুক্রবার (২২ জুলাই) দুপুরে সাহাপাড়ার রাধা গোবিন্দ মন্দিরে উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়সহ এলাকাবাসীর সঙ্গে  মতবিনিময় করেন ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। 

সভায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আমি দিঘলিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। দিঘলিয়ার এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে যোগসূত্র আছে। এসব ঘটনা পরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। তাই রাষ্ট্রকেই এর মোকাবেলা করতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সুরক্ষা আইন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাই।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। বারবার হামলা হওয়ার কারণ হচ্ছে সঠিক বিচার না হওয়া। 

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে আরেকবার লড়াই করতে হবে; যারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর পাঁয়তারা করছে; কিন্তু তাদের এ দুঃস্বপ্ন কোনো দিন পূরণ হবে না।

মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, শেখ হাসিনা চুপ করে বসে নেই। ঘটনা শোনার পরই তিনি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশমতো এখানে এসেছি। যারা এ ঘটনার  সঙ্গে জড়িত তারা যে দলেরই হোক তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। 

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, অপরাধীদের এমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার সাহস না পায়।  

প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চুন্নু ,আবদুল্লাহ হিল কাইয়ূম, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতা বাসদের রেজাউর রশিদ খান, কমিউনিস্ট পার্টির অসিত বরণ রায়, গণতান্ত্রিক পার্টির এসকে সিকদার ও তপন ঘোষ, তরিকত ফেডারেশনের মহম্মদ আলী ফারুকী, জাতীয় পার্টির নেতা মোক্তার হোসেন, আওয়ামী লীগের দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এ সময় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে দিঘলিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৪টি মন্দির সংস্কার বাবদ প্রতিটিকে ২৫ হাজার টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবারের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে মোট দুই লাখ টাকা প্রদান করা হয়। 

এ সময় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান, জেলা জাসদ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস ছালাম খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তুহিন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম, সম্পাদক অধ্যাপক খান আমিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শিকদার আজাদ রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৫ জুলাই) লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার আকাশ সাহা নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন সাহাপাড়ার ৪টি বাড়ি, ৬টি দোকান ও চারটি পূজামণ্ডপ ভাংচুর করে এবং একটি বাড়ি ও একটি মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ৯ জনকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লোহাগড়া থানার এসআই মিজানুর রহমান।

সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর